জমকালো আয়োজনে ক্যাম্বেলটাউনে মাল্টি কালচারাল বৈশাখী উৎসব অনুষ্ঠিত
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৬ মে,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০৮:৫৯ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
কোভিড-১৯ প্যানডেমিকের বিধি অনুসরন করে “মাল্টিকালচারাল সোসাইটি অব ক্যাম্বেলটাউন” গত রবিবার ২৩ মে ২০২১ সন্ধ্যায় ক্যাম্বেলটাউনের অজ ফানল্যান্ডে আয়োজন করলো এক বর্নাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
দুপুর থেকেই নববর্ষকে নবরূপে বরণ করার জন্য সিডনির বিভিন্ন স্থান থেকে দলে দলে বাংলাদেশীসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রবাসী ভীড় করে অজ ফানল্যান্ডে। সকল বিভেদ ভুলে, ধর্ম-বর্ণ, জাতি নির্বিশেষে, সব ধর্মাবলম্বীর মানুষেরা মিলিত হন এক আকাশের ছায়াতলে। চারিদিকে বেজে ওঠে বৈশাখের জয়গান।
বাংলাদেশীসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় যখন নতুন বছরকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য চলে নানা আয়োজন, তখন প্রবাসে বসে প্রবাসীরা প্রিয় স্বদেশে ফেলে আসা নববর্ষের উৎসবের স্মৃতিকে হৃদয়ে ধারণ করে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। শিকড় ছেড়ে আসা মানুষগুলোকে বৈশাখ যেন হাতছানি দিয়ে ডাকে।
প্রিয় নববর্ষকে আপন রঙে রাঙাতে অভিবাসীরা তাদের দেশীয় ঐতিহ্যবাহী পোশাকে নিজেদের সাজিয়ে তোলেন। বিশেষ করে নারীরা তাদের সাজসজ্জায় ছিলেন অনন্যা।
মেলায় বাঙালী নারীরা ঐতিহ্যবাহী শাড়ি অঙ্গে জড়িয়ে,খোঁপায় ফুল, দু’হাত ভরা রিনিঝিনি চুড়িতে মেলা প্রাঙ্গণকে যেন বাংলাদেশে পরিণত করে তোলেন। । পাশাপাশি পুরুষেরাও দেশিয় ঐতিহ্যকে বিদেশের মাটিতে উপস্থাপন করেন পাঞ্জাবী পরিধান করে। শিশুরাও বাদ পড়েনি স্বদেশী ঐতিহ্যের ছোঁয়া থেকে।
রবিবার অস্ট্রেলিয়াতে সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় দুপুর থেকেই দলে দলে প্রবাসী বাঙালিরা বর্ণিল সাজে অনুষ্ঠান স্হলে আসতে শুরু করেন।
সবার হাসি-আনন্দে একাকার হয়ে ওঠে উৎসব প্রাঙ্গণ। বাংলাদেশী, ভারতীয়, নেপালী, পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পুরোটা দিন সকল দর্শনাথীদের বেঁধে রাখে মিলনয়াতনে। ছোট ছোট কোমলমতি শিশুদের চমকপ্রদ নাচ,গান, আবৃত্তি এটাই প্রমাণ করে যে যেখানেই যাক না কেন, অভিবাসীরা প্রিয় সংস্কৃতি-ঐতিহ্য কোনকিছুই ভুলে যায় না। বরং সন্তানদের শৈশব থেকেই দেশপ্রেমের শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলেন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি উপস্হিত শিশুরা ভেনুর রাইড গুলো উপভোগ করে।
ভিনদেশের মাটিতে এই প্রাণের মেলায় যে শুধু প্রবাসী বাঙালি, নেপালী, ভারতীয় বা পাকিস্তানী বা দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রবাসীরা উপস্থিত ছিলেন, তা নয়। অস্ট্রেলিয়ানরাও স্বত:স্ফূর্তভাবে অংশ নেন।
পূরবি, কাশফি, আশিক, আনিতা এবং কামালের যৌথ প্রানবন্ত সঞ্চালনায় জাঁকজমকপূর্ণ এই উৎসবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় রাজ্য সংসদ সদস্য আনুলাক চন্টিভং (ম্যাক্যুয়ারিফিল্ডস সংসদীয় এলাকা), কনস্যুলেট জেনারেল অব বাংলাদেশ, সিডনি খন্দকার মাসুদুল আলম, । স্বাগত বক্তব্যে সংগঠনের জেনারেল সেক্রেটারী শফিকুল আলম শফিক বলেন, “সীমিত পরিসরে হলেও এই আয়োজন মাল্টিকালচারাল এবং বৈচিত্রময় এই অস্ট্রেলিয় সমাজে দক্ষিন এশিয় সংস্কৃতি এবং জীবনাচরণ জানতে সহযোগিতা করবে। দক্ষিন এশিয় কৃষ্টি এবং সংস্কৃতি এই সমস্ত দেশ থেকে আগতদের নতুন প্রজন্মকে তাদের ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের সাথে সংযুক্ত রাখতেও সহায়তা করবে বলে জেনারেল সেক্রেটারী তার বক্তব্যে বর্ননা করেন।”
নেপাল, ভারত, বাংলাদেশের বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের শিশু-কিশোরগন স্ব স্ব ভাষায় গান এবং নাচে তাদের স্ব স্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরার এই আয়োজন উপস্থিত সকলকে মোহিত করে। অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ, নেপালসহ কয়েকটি দেশের জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। তারপর কিশোর সংঘের শিশু-কিশোরদের বৈশাখের গান সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। নেপালী শিশুদের র্যাম্প ওয়াক, নাচ এবং গান, কোলকাতার মৌসুমীর নৃত্যকলা, নেপালী সৃজনার একক, দিপানিতা এবং প্রনাতের দ্বৈত নাচ দর্শকদের মুগ্ধ করে। রুহুল আমিন, আয়শা কলি এবং নিলুফার ইয়াসমিনের একক সংগীত, আতিক হেলাল এবং মিতা হেলালের ডুয়েট ছিলো সত্যিই মনোমুগ্ধকর।
সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট এনাম হক তাঁর সমাপনী বক্তব্যে সংগঠনের সকল এক্সিকিউটিভস, সদস্যগন এবং উপস্থিত সকল সামাজিক সংগঠনের নেতৃত্বের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
স্বাগত বক্তব্যে মাল্টিকালচারাল সোসাইটি ক্যাম্বেলটাউনের সভাপতি এনাম হক মাল্টি কালচারাল বৈশাখী মেলা সফল করার জন্য সকলকে ধন্যবাদ জানান।
আগামী বছরের অর্থ্যাৎ ২০২২ সালের ১৯ মার্চ ক্যাম্বেলটাউন অ্যাথলেটিকস্ স্টেডিয়ামে আরো বড় পরিসরে , বর্ণাঢ্য আয়োজনে বহুজাতিক বৈশাখী মেলার ঘোষনা দিয়ে ব্যাতিক্রমধর্মী এই আয়োজনের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষনা করেন।