গৌতম আইচ সরকার
রাশেদুল ইসলাম
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১০ মে,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:০০ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
গৌতম আইচ সরকার আমার বন্ধু । ব্যাচমেট । আমরা বিসিএস অষ্টম ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা । ১৯৮৯ সালের ২০ ডিসেম্বর সহকারি কমিশনার হিসেবে আমরা যোগদান করি । সবাই তৃতীয় শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট । গৌতমের সাথে আমার পরিচয় সাভারের লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষন কেন্দ্রে । সেখানে ১৯৯০ সালে অনুষ্ঠিত দুই মাসের বিশেষ বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সে আমরা অংশগ্রহন করি । গৌতম নামের একজন সুঠামদেহী টগবগে তরুণের সাথে তখন আমার পরিচয় ও ঘনিষ্ঠতা হয় । তারপর শেষ । বহু বছর পর, গৌতম যখন স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে কাজ করে, তখন তার সাথে আমার একবার দেখা হয় । ফলে গৌতমের পরিবার পরিজন, স্ত্রী ছেলেমেয়ে কোন বিষয়ে আমার তেমন কিছু জানা নেই । জানার সুযোগও হয়নি । কিন্তু গত বছর ২০২০ সালের ৯ মে যখন গৌতমের মৃত্যু সংবাদ প্রকাশিত হয়; তার মেয়ের আহাজারি আমার কানে আসে, তখন তা আমার বুকে শেলের মত বেঁধে । সে সময় গৌতমের করোনা হয়নি; কিন্তু করোনার আতংকে তার মেয়ে সুস্মিতা তাকে কোন হাসপাতালে ভর্তি করাতে পারেনি । অনেকটা বিনা চিকিৎসায়, অবহেলায় গৌতমের মৃত্যু হয় ।
এ বছর আমার নিজের করোনা হয় । আমার স্ত্রী ও কন্যাও করোনায় আক্রান্ত হয় । কিন্তু চিত্র বিপরীত । কোন হাসপাতাল আমাদের অবহেলা করেনি । এই করোনা যদি আমাদের গত বছর হত, তাহলে গৌতমের মত আমাদের মৃত্যুও অনিবার্য ছিল । পরম করুণাময়ের কাছে অশেষ কৃতজ্ঞতা যে, এই করোনা আমাদের গত বছর হয়নি । একইসাথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিও আমাদের অশেষ কৃতজ্ঞতা । কারণ করোনা বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে সরাসরি দেকভাল করার কারণে, করোনা রোগী নিয়ে মানুষের অহেতুক যে ভীতি তা এত তাড়াতাড়ি দূর হয়েছে ।
আমি কবি নই । কিন্তু গৌতমের মৃত্যু সংবাদে আমি কবিতার মত একটা কিছু লিখি । এই মে মাসে গৌতমের স্মরণে সেই লেখাটি শেয়ার করা হোল । মহান সৃষ্টিকর্তা গৌতমের আত্মার শান্তি নিশ্চিত করুন ।
সুস্মিতাকে
(বন্ধুবর গৌতম আইচ সরকার স্মরনে)
কবি সুকান্ত বেঁচেছিলেন মাত্র একুশ বছর ।
তারপরও মৃত্যুর আগে তাঁর একটা দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ছিল -
‘চলে যাব- তবু যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ,
প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল,
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি ’ ।
ইংরেজ আমলে আমাদের মনে হয়েছে, এটা শুধু কবি সুকান্তের কথা নয়;
আমাদের সকলের কথা ।
তারপর ইংরেজ গেলো, পাকিরা গেলো,
গঙ্গা- বুড়িগঙ্গার উপর দিয়ে অনেক জল গড়াল;
কিন্তু, যাহা, তাহাই ।
আজ করোনা ভাইরাস জানিয়ে দিল,
সেই জঞ্জাল তো সরেইনি, আরও পচা জঞ্জালে ভরে গেছে সমাজ, দেশ ।
গৌতম আইচের মেয়ে সুস্মিতা নিজে ডাক্তার হয়েও,
বাবার শেষ চিকিৎসা দিতে পারেনি সে ।
এ লজ্জা সুস্মিতার নয়, এ লজ্জা তাঁর বাবার বন্ধু ও ঠাকুরদাদের,
যারা এই পৃথিবীকে তাদের বাসযোগ্য করতে পারেনি মোটেও ।
তাই সকলের পক্ষে ক্ষমা চাই আমি ।
তবে মনে রেখো মা,
সেই পৃথিবী মানুষের পৃথিবী নয়,
যে পৃথিবী মানবতার প্রতি সহানুভূতিশীল নয় ;
সেই পৃথিবী মানুষের পৃথিবী নয়,
যে পৃথিবী একজন মৃত্যুপথযাত্রীর চিকিৎসা দিতে পারে না ।
তাই, করোনার এই ক্রান্তিকালে পথ বেছে নিতে হবে তোমাদের;
এই নতুন প্রজন্মকে ।
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণের সোনার বাংলা,
সাধারণের যথাযোগ্য মর্যাদা পাওয়ার সোনার বাংলা;
তোমাদেরই গড়তে হবে ।
ক্ষমা করো মা,
ক্ষমা করো,
তোমাদের এই অপদার্থ বাবা-মাদের ।
মোহাম্মদপুর, ঢাকা, ১০ মে, ২০২০ ।