অষ্ট্রেলিয়ার পার্থে জমজমাট বৈশাখী মেলা
মোশারফ হোসেন নির্জন
প্রকাশ: ০৮:৩০ পিএম, ১৫ এপ্রিল,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ১১:৩৪ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
বাংলার সাজ, বাংলার রুপ প্রবাসেও সমুন্নত রাখার পয়াসে অস্ট্রেলিয়ার পার্থে হয়ে গেল ‘বাংলার মেলা’। শোভাযাত্রা, শিশো কিশোরের হৈচৈ, হরেক রকম খাবার, নাচ-গানের সৃজনশীল পরিবেশনা, সজ্জিত বটতলা, যেমন খুশি সাজো; কি নেই এখানে? সত্যিই যেন পূর্ণ মেলার এক অপরুপ বহি:প্রকাশ। চিরচেনা বৈশাখের আমেজে প্রবাসে এ যেন এক বাংলাদেশময় দিন।
অস্ট্রেলিয়ার সর্ববৃহৎ রাজ্য ওয়েষ্টার্ন অস্ট্রেলিয়া’র বাংলাদেশীদের মূল সংগঠন বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়া এসোসিয়েশন অব ওয়েষ্টার্ন অস্ট্রেলিয়া (বাওয়া) এ্রর উদ্যোগে শনিবার (১০ই এপ্রিল) আয়োজিত হয় এ বৈশাখী মেলা; যাকে বাংলার মেলা হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন আয়োজকরা। বাংলা নববর্ষে উৎযাপনকে কেন্দ্র করে মূলত এ আয়োজন। অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে এটিই বাংলাদেশীদের সবচেয়ে বড় মিলনমেলা।দিনটির জন্য মুখিয়ে থাকেন দর্শনাথীরা। বছরব্যাপী পরিকল্পনা ও কর্মযজ্ঞের একটি সার্থক পরিবেশনা নিয়ে হাজির হন মেলার আয়োজকরা।
এবছর প্রায় সতেরশো দর্শনার্থী অংশ নিয়েছেন মেলাায়। দিনব্যাপী হওয়ার নিজেদের পছন্দসই সময়ে মেলা দেখতে ভিড় করেন বাংলাদেশীরা। সকাল দশটা থেকে বিকেল পাচটা অবধি চলে মেলাটি।
শুরুতেই মঙ্ল শোভাযাত্রার আযোজন করা হয়। তারপর সাংস্কৃতিক পর্বে কয়েকটি ধাপে দৃষ্টিনন্দন পরিবেশনার ধারাবাহিক সংযোজন করেন আযোজক কমিটি। এ অঞ্চলে জন্মানো দ্বিতীয় প্রজন্মের বাংলাদেশী বাচ্চারা বাংলাকে ভালোবেসে নিজেদের সেরাটা ঢেলে দিতে হাজির হন ভিন্ন ভিন্ন রুপে। অংশ নেন পার্থের বাংলা সংস্কৃতি লালন করা শিল্পীরাও।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থনাীয় সংসদ সদস্য ইয়াজ মোবারাকায়, জগদিশ কৃশনান (এম এলএ), মেয়র প্যাট্রিক হল, কাউন্সিলর মিজ ইয়াসো পন্নুথুরাই, অনারেরি কনসাল জেনারেল গ্রাহাম ডুপার্ট, প্রফেসার অমিত চাকমা ( ভাইস চ্যান্সেলর, ইউডাব্লিওএ) সহ আরো অনেক বাংলাদেশি গন্যমান্য ব্যাক্তি।
মেলাকে সাফল্য মন্ডিত করতে জানুয়ারি থেকে দিন রাত শ্রমদিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। কয়েকটি ভাগে ভাগ হয়ে দলগত ও ব্যক্তিগতভাবে অবদান রেখেছেন অনেকে। বাওয়ার সভাপতি শাহেদীন শহীদ জাানান, আমরা বাওয়া ছাড়া গ্রেটার বাংলাদেশী কমিউনিটির অংশ গ্রহণ পেয়েছি। এমনকি অনেকে স্বেচ্ছায় শ্রম দিতেও এসেছে।মূলত বাংলা সংস্কৃতির সৌন্দর্য অস্ট্রেলিয়া্নদের কাছে তুলে ধরা ও নিজেদের ঐক্য, সংহতি বজায় রাখার প্রয়াসে আমরা দীর্ঘদিন ধরে এ মেলাটি করে আসছি।
দর্শনার্থীদের একজন বলেন আমরা সুখ দু:খ ভাগাভাগি করতে একটি আনন্দঘন পরিবেশ পেয়েছি। অব্যশই বাওয়ার নেতৃবৃন্দদের অভিনন্দন জানাতে চাই।
বিশিষ্ট সমাজসেবী ও ব্যবসায়ী কামরুল ইসলাম চৌধুরী জানান, মেলবোর্ন থেকে আমি আমার মেয়ের কাছে পার্থে বেড়াতে এসে মেলায়ও অংশ নিই। সমাগম দেখে খুব আনন্দিত আমি। নতুন প্রজন্মের কাছে এ চর্চা অব্যাহত থাকুক।
ইউনিভার্সিটি অব ওয়ের্ষ্টান অস্ট্রেলিয়ার ভিসি অধ্যাপক অমিত চাকমা বলেন, আমি কানাডাতে ছিলাম, অস্ট্রেলিয়া মতো এতো আয়োজন সেখানে খুব একটা হয় না। বাচ্চারা দেশীয় কালচার শিখছে এটা খুব ইতিবাচক দিক। আয়োজকদের ধন্যবাদ।
মেলায় দেশীয় ঘরানার খাবার, কাপড়সহ আরো নানাবিধ রকমের ষ্টল বসানো হয়। ঝালমুড়ি, নাড়ু, নারিকেল পিঠা, ফুচকাসহ হরেকরকম ঝাল মিষ্টি খাবারে খেতে দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে যান অনেকে। সরেজমিনে দেখা যায়, প্রিয়জন কিংবা সপরিবারে হাজির হয়েছেন বেশিরভাগ দর্শনার্থী। বাংলাদেশী ছাড়াও অস্ট্রেলিয়ান ও অন্যান্য কমিউনিটিরাও ঢু মেরেছেন মেলাতে।
মেলাকে সাফল্যমন্ডিত করে তুলতে নেতৃত্বে ছিলেন বাওয়া’র নেতা শাহেদীন শহীদ রাজু, তাসনিমুল গালিব অমিত ও তন্ময় দেবনাথ এবং তাদের সাথে স্বতর্স্ফূতভাবে অংশ নেন একদল স্বেচ্ছাসেবী। সবমিলিয়ে এবারের মেলা ছিলো জমজমাট ও উৎসমূখর।