বাংলাদেশের মোয়াজ্জেম হলেন অস্ট্রেলিয়ায় সেরা শিক্ষক
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১০:৪৮ এএম, ১ সেপ্টেম্বর,মঙ্গলবার,২০২০ | আপডেট: ১০:৪৭ এএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
স্বপ্ন মানুষকে অনেক দূর নিয়ে যায়। ইচ্ছা এবং লক্ষ্য একীভূত হলে অনেক কিছুই অর্জন করা সম্ভব। তেমন অসম্ভবকেই সম্ভব করেছেন বাংলাদেশের সন্তান ড. মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি অস্ট্রেলিয়ায় মারডক বিশ্ববিদ্যালয়ের পিভিসি অ্যাওয়ার্ড ফর এক্সেলেন্স ইন টিচিং অ্যান্ড লার্নিং ২০২০ লাভ করেছেন!
মোয়াজ্জেম হোসেনের বাবা মফিজউদ্দিন সরদার ছিলেন প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। মা দেলোয়ার বেগম ছিলেন একজন আদর্শ গৃহিণী! তাদেরই ছেলে আজ অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত মারডক বিশবিদ্যালয়ের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক! বিষয়টি সত্যিই আনন্দের এবং গর্বের, যা অনুপ্রেরণা জোগাবে অসংখ্য মানুষকে। তার এ সাফল্যে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার (পার্থ শহর) বাংলাদেশি কমিউনিটি আনন্দিত।
মোয়াজ্জেম হোসেন অস্ট্রেলিয়ার মারডক বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সাসটেইনেবিলিটি অ্যাকাউন্টিং ও গভর্নন্স’র অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর। তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্কুলের অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন শিক্ষক। এডুকেশনাল টেকনোলজি ও স্টুডেন্ট এনগেজমেন্টে বিষয়ে তার অসামান্য অভিজ্ঞতা ও সফলতা রয়েছে। অ্যাকাউন্টিংয়ের মতো কঠিন বিষয়কে তিনি আন্ডারগ্রাজুয়েট ও পোস্টগ্রাজুয়েট ছাত্রছাত্রীদের মাঝে অত্যন্ত জনপ্রিয় ও আকর্ষণীয় করে তুলেছেন।
মোয়াজ্জেম এর আগেও অসাধারণ টিচিং স্টাইল ও ইন্ডাস্ট্রি অরিয়েন্টেড লার্নিং অ্যাপ্রোচের জন্য ২০১৬, ২০১৮, ২০১৯ সালে মারডক বিজনেস স্কুলের সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক হয়েছিলেন। এ অ্যাওয়ার্ড তাকে পরবর্তীতে ‘অস্ট্রেলিয়ান অ্যাওয়ার্ড ফর ইউনিভার্সিটি টিচিং (এএইউটি)’ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ ও সাফল্য লাভের ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা জোগাবে। এএইউটি পুরস্কারের জন্য অস্ট্রেলিয়ার ৪২টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সেরা শিক্ষকরা মনোনয়ন পান!
মারডক বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের আগে ড. মোয়াজ্জেম হোসেন কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয় ও এডিথ কোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন অধ্যাপনা করছেন। ২০০৬ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার আগে তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) হিউম্যানিটিস ডিপার্টমেন্ট ও ঢাকা সিটি কলেজে অধ্যাপনা করেছেন।
ড. মোয়াজ্জেম ‘কোলাবরেটিভ লার্নিং ইউজিং এডুকেশনাল টেকনোলজিস ইন ব্লেন্ডেড লার্নিং এনভায়রনমেন্ট’র একজন অভিজ্ঞ অ্যাকাডেমিক। ছোটবেলা থেকে তিনি অত্যন্ত মেধাবী। তিনি অস্ট্রেলিয়ার একজন প্রফেশনাল চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, সার্টিফাইড প্রাক্টিসিং অ্যাকাউন্ট্যান্ট, সার্টিফাইড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট, মেম্বার অব ইনস্টিটিউট অব পাবলিক অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব অস্ট্রেলিয়া।
অস্ট্রেলিয়া ছাড়াও তিনি অ্যাসোসিয়েট অব ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট্যান্ট-ইউকে। এমনকি কারিকুলাম ডিজাইন, এডুকেশনাল টেকনোলজিভিত্তিক স্টুডেন্ট এনগেজমেন্টে দক্ষতার জন্য যুক্তরাজ্যের হায়ার এডুকেশন একাডেমি তাকে ফেলোশিপ দিয়েছে।
এ ছাড়া তিনি আমেরিকান অ্যাকাউন্টিং অ্যাসোসিয়েশন, ব্রিটিশ অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স অ্যাসোসিয়েশন, ইউরোপিয়ান অ্যাকাউন্টিং অ্যাসোসিয়েশন, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স অ্যাসোসিয়েশন অব অস্ট্রেলিয়া অ্যান্ড নিউজিল্যান্ড, সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড সোশ্যাল অ্যাকাউন্টিং রিসার্চে সম্মানিত সদস্য। ডক্টর মোয়াজ্জেম পরপর দুবার মারডক বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের নির্বাচিত সদস্য হয়েছেন। তিনিই প্রথম বাংলাদেশি; যিনি পরপর দুবার নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশন কমিটিরও অন্যতম সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন।
অ্যাকাউন্টিং ও বিজনেসের বিখ্যাত আন্তর্জাতিক জার্নালে ও কনফারেন্সে ড. মোয়াজ্জেম হোসেনের ৩০টিরও বেশি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণায় অসামান্য অবদান রাখার জন্য ২০১৮ সালে মারডক বিশ্ববিদ্যালয় বিজনেস স্কুলের রিসার্চ অ্যাওয়ার্ড পান। কর্পোরেট অর্গানাইজেশনের সোশ্যাল ও ইনভায়রনমেন্টাল রেস্পন্সিবিলিটি এবং গভর্নেন্স তার গবেষণার বিষয়। তিনি রিসার্চ স্টুডেন্টদের সুপারভাইজার হিসেবেও জনপ্রিয়। বর্তমানে তার অধীনে দুই ছাত্র পিএইচডি করছে।
তিনি অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এনভায়রনমেন্টাল অ্যাকাউন্টিংয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ইতোপূর্বে তিনি ফেডারেশন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যাকাউন্টিং ও ফাইন্যান্সে মাস্টার্স করেছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যাকাউন্টিং মেজর নিয়ে প্রথম শ্রেণিতে বিবিএ ও এমবিএ সম্পন্ন করেছেন। এইচএসসিতে ঢাকা কলেজ থেকে বোর্ড স্ট্যান্ডধারী মোয়াজ্জেম বাংলাদেশি কমিউনিটি ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার ও মারডক ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ কমিউনিটির একজন জনপ্রিয় মুখ। মারডক ইউনিভার্সিটির বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের যেকোনো প্রয়োজনে তিনি সদা জাগ্রত।
মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার রমজানপুর ইউনিয়নের উত্তর চর আইর কান্দি গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ২০১৭ সালে এবং মা ২০১৩ সালে জান্নাতবাসী হয়েছেন। তারা তিন ভাই। মোয়াজ্জেম সবার বড়। মেজভাই রেডিও ফুর্তির হেড অব সেলস অ্যান্ড অ্যাক্টিভেশনে কর্মরত। ছোটভাই রানার অটোমোবাইলের রিজিওনাল হেড হিসেবে কর্মরত।
ব্যক্তিগত জীবনে মোয়াজ্জেম এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক। তার স্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ডিপার্টমেন্টের প্রাক্তন সহযোগী অধ্যাপক ড. আকলিমা চৌধুরী লিমা। তিনি বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার মারডক বিশ্ববিদ্যালয় ও সেন্ট্রাল কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন অধ্যাপনা করছেন।-সালাহ উদ্দিন মাহমুদ,jagonews24