avertisements 2

নতুন শ্রমবাজার উজবেকিস্তান, সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৯:২৪ পিএম, ৯ নভেম্বর,সোমবার,২০২০ | আপডেট: ১০:৫০ পিএম, ৫ মার্চ,মঙ্গলবার,২০২৪

Text

যে মুহূর্তে একের পর এক শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, ওই মুহূর্তে নতুন করে মধ্য এশিয়ার দেশ উজবেকিস্তানে জনশক্তি প্রেরণের দ্বার উন্মোচন হয়েছে। এতে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরেছে বলে মনে করছেন জনশক্তি প্রেরণের সাথে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ীরা।

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর বহির্গমন ছাড়পত্র নিয়ে গত শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় উজবেকিস্তানের উদ্দেশে প্রথমবারের মতো প্রায় আড়াই শ’ বাংলাদেশী শ্রমিক নিয়ে উজবেকিস্তান এয়ারের একটি বিশেষ ফ্লাইট ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন।

রিক্রুটিং এজেন্সি ‘মুবিন এয়ার ইন্টারন্যাশনাল’ এর মাধ্যমে দক্ষ এসব শ্রমিক ঢাকা ছাড়ার আগে বিমানবন্দর প্রবাসীকল্যাণ ডেস্কের কর্মকর্তাদের কাছে বলে গেছেন, তারা প্রতি মাসে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার মতো উপার্জন করতে পারবেন।

গতকাল রোববার দুপুরে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রবাসীকল্যাণ ডেস্কের সহকারী পরিচালক মো: ফখরুল আলম নয়া দিগন্তকে বলেন, শনিবার সকালে ২৪০ জন শ্রমিক উজবেকিস্তানের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়ে গেছেন। এদের বেশির ভাগই পাইপ ফিটার টেকনিশিয়ান। এ ছাড়াও রয়েছেন ফোরম্যান, ওয়েল্ডার (বিভিন্ন পদ) ফাইটিং সুপারভাইজার পদের দক্ষ শ্রমিক।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যাওয়ার সময় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় বা বিএমইটির কেউ উপস্থিত ছিলেন না। তবে বিমানবন্দর প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের কর্মকর্তা হিসেবে আমি উপস্থিত থেকে তাদের সাথে কথা বলেছিলাম।

তারা আমাকে বলেছেন, মুবিন এয়ার ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো থেকে (বিএমইটি) ছাড়পত্র নিয়েই তারা উজবেকিস্তানের কোম্পানিতে যাচ্ছেন। তাদের প্রত্যেকে দক্ষ শ্রমিক হিসেবে ৫০-৬০ হাজার টাকা করে মাসিক বেতন পাবেন। তবে দেশটিতে যেতে প্রত্যেকের কত টাকা খরচ হয়েছে সেটি জিজ্ঞেস করেননি বলে জানান তিনি।
গতকাল রোববার বিকেলে জনশক্তি প্রেরণকারী ব্যবসায়ী মুবিন এয়ার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাকিবুল ইসলাম সাহিন বলেন, উজবেকিস্তানের গভর্নমেন্ট পাওয়ার প্ল্যান্ট ‘এন্টার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানিতে’ দক্ষ শ্রমিক প্রেরণের জন্য আমাদের প্রতিষ্ঠান ৫১২ জন শ্রমিকের চাহিদাপত্র পেয়েছে। সেখান থেকে ২৪০ জনের প্রথম ফ্লাইট শনিবার উজবেকিস্তানের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়ে গেছে। ছয় মাসের চুক্তিতে এসব শ্রমিককে পাঠানো হয়েছে। তবে ওই দেশের বিমানবন্দরে যাওয়ার সাথে সাথে তাদেরকে এক বছর করে মাল্টিপল ভিসা দেয়া হয়েছে। তার আগেই দেশটিতে থাকা আমাদের বর্তমান রাষ্ট্রদূত জাহাঙ্গীর আলম পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানিটি ভিজিট করে সুযোগ সুবিধার বিষয়গুলো নিশ্চিত হন।

এক প্রশ্নের উত্তরে সাহিন বলেন, পাওয়ার প্ল্যান্টে মূলত অভিজ্ঞ ওয়ার্কার লাগে। শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রথমেই আমাদের এখান থেকে সিভি পাঠাতে হয়। এরপর অনলাইনে তাদের ইন্টারভিউ দিতে হয়েছে।

তিনি বলেন, শ্রমিকরা যাওয়ার আগে আশুলিয়ায় বাংলাদেশের কোরিয়ান সেন্টারে ট্রেনিং করেছেন। এরপর প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে তাদের সবার ইন্টারভিউ নেয়া হয়। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, নতুন শ্রমবাজার খোলার বিষয়ে সিঙ্গাপুর থেকে আমাদের এজেন্ট কন্ট্রাক্ট করেন।

প্রতিনিধি নাজমুল এসব দেখছেন জানিয়ে তিনি বলেন, শ্রমিকদের গন্তব্য পর্যন্ত পৌঁছতে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুস সালেহিন, অতিরিক্ত সচিব বশির আহমেদ এবং উজবেকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম এ মান্নান স্যার অনেক সাহায্য করেছেন। তার পাঠানো একজন শ্রমিক মাসে ৬০০ ডলার করে বেতন পাবেন। প্রত্যেক শ্রমিকের দেশটিতে যেতে ৬০ হাজার টাকা করে খরচ করতে হয়েছে। তবে দক্ষ এসব শ্রমিকের মধ্যে কেউ কেউ এজেন্টদের মাধ্যমে যাওয়ার কারণে ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এর বেশি টাকা নেয়ার সুযোগ নেই। কারণ এরা প্রত্যেকে কাজ জানা লোক। একইভাবে উজবেকিস্তান থেকে এম এস ডালাস ওভারসিস নামের অপর একটি রিক্রুটিং এজেন্সি নামে ৩৩৪ জন শ্রমিক পাঠানোর চাহিদাপত্র এসেছে বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে প্রায় সাত মাস ধরে বিদেশে জনশক্তি প্রেরণ বন্ধ রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, দুবাই, মালদ্বীপসহ ২৯টি দেশ থেকে সোয়া দুই লাখ শ্রমিক অনেকটা নিঃস্ব হয়ে দেশে ফিরেছেন। বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার মালয়েশিয়া, মালদ্বীপসহ কয়েকটি দেশের শ্রমবাজার এখনো বন্ধ হয়ে আছে।

পরিস্থিতি যখন খারাপ হচ্ছে ওই সময়ে নতুন একটি দেশে নতুন করে শ্রমিক প্রেরণ শুরু হওয়ায় হতাশায় থাকা জনশক্তি প্রেরণকারী ব্যবসায়ীদের মধ্যে কিছুটা হলেও প্রাণ ফিরেছে বলে মনে করছেন অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা। কারণ এখনো ১৪ শ’ জনশক্তি প্রেরণকারী ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগই বন্ধ হয়ে আছে। দিতে পারছেন না অফিসের ভাড়া ও স্টাফের বেতন। তবে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সাথে সাথে পরিস্থিতিও বদলে যেতে পারে। খুলে যেতে পারে পুরনো শ্রমবাজারগুলো। এমনটাই আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।

এ দিকে বিদেশফেরত ও আটকে পড়া কর্মীদের সহযোগিতা প্রদান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা গ্রহণের লক্ষ্য প্রবাসী কল্যাণ বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে সব কর্মীর নিবন্ধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে আগেই জানিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2