দুই ম্যাজিস্ট্রেটের পরকীয়া, সংসার ভাঙছে খাদিজার
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৯:৩০ পিএম, ৫ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২০ | আপডেট: ১১:০৮ এএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে একের পর এক নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠলেও খুব কম ক্ষেত্রেই শাস্তি পাচ্ছেন তারা। মাঠ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা ডিসি, ইউএনও ও এসিল্যান্ডের নামে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রায়ই এমন অভিযোগ আসছে। হয়রানির প্রতিকার চেয়ে আদালতে মামলার ঘটনাও ঘটেছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থা বিভাগীয় তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রতিবেদন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠালেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।
প্রায় দেড় বছর আগে স্বামী সারোয়ার সালাম ও তার ব্যাচমেট নাসরীন চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছিলেন স্ত্রী খাদিজা আক্তার। দুইজনই বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ৩৪ ব্যাচের কর্মকর্তা। উভয়েরই সংসার আছে। তারপরও অবৈধ প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছেন। অন্যদিকে অথৈই সাগরে পড়েছেন সারোয়ার সালামের স্ত্রী ও একমাত্র সন্তান। মন্ত্রিপরিষদের তদন্তে এই ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। সারোয়ার সালামের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার তদন্ত চলছে। প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণিত হওয়ার প্রায় ৬ মাস অতিবাহিত হলেও এখনো চাকরিতে বহাল আছেন সারোয়ার সালাম ।
সারোয়ার সালাম বর্তমানে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় এবং নাসরিন চৌধুরী মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে কর্মরত আছেন। উভয়েই ফেনী জেলায় সহকারি কমিশনার থাকার সময় সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘হাতিয়ার সহকারি কমিশনার (ভূমি) সারোয়ার সালামের বিরুদ্ধে তাঁর স্ত্রী কর্তৃক আনীত স্ত্রী-সন্তানের অধিকার বঞ্চিত, স্ত্রীকে মানসিকভাবে নির্যাতন, বিবাহ বর্হিভূত সম্পর্ক ও তালাক প্রদানের হুমকির অভিযোগগুলোর প্রাথমিক সত্যতা রয়েছে।’
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘যৌতুক দাবি করা অভিযোগে ঢাকার মহানাগর হাকিম আদালতে মামলা (৪৬৪/১৯) বিচাররাধীন আছে।’ এই অবস্থায় তাঁর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ থেকে জনপ্রশাসন সচিবকে গত ২৫ মার্চ অনুরোধ জানানো হয়েছে।
গত ৬ মাস অতিবাহিত হলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এরপর বিষয়টি জানতে পেরে সারোয়ার সালামকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয় গত ৫ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেয় ভূমি মন্ত্রণালয়। এরপর ১২ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তাকে প্রত্যাহার করলেও এখনও বহাল তবিয়তে আছেন তিনি।
জানতে চাইলে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক মো: খোরশেদ আলম খান সোনালী নিউজকে বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পেয়েছি। ওখানে নতুন একজন এসিল্যান্ডকে পদায়ন করা হয়েছে। তিনি যোগদান করলে সারোয়ার সালামকে প্রত্যাহার করা হবে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সারোয়ারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করার আগে আইনগত বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে মতামত চেয়েছিল। আইন মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পাঠানো মতামত অনুযায়ী, ‘সরকারি চাকুরী আইন-২০১৮-এর ২৫(১) উপধারা অনুযায়ী, কোনো সরকারি কর্মচারির বিরুদ্ধে কোনো আদালতে একই বিষয়ের উপর ফৌজদারি কার্যধারা বা আইনগত কার্যধারা বিচারধীন থাকিলে, তাহার বিরুদ্ধে বিভাগীয় কার্যধারা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে কোন বাধা থাকিবে না’। তাই ‘সারোয়ার সালামের বিরুদ্ধে তার স্ত্রী কর্তৃক আনীত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ফৌজদারি কার্যধারা অব্যাহত থাকার কারণে পাশাপাশি বিভাগীয় মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে আইনগত বাধা নেই।’
এই বিষয়ে মন্তব্য জানতে সারোয়ার সালামের কাছে ফোন করলে তিনি বলেন, আমি ট্রেনিংয়ে আছি, ব্যক্তিগত বিষয়ে পড়ে কথা বলবো।
খাদিজা আক্তারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিরিত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশে মাঠ প্রশাসন থেকে আসা তদন্ত অনুযায়ী, ‘সারোয়ার আলম ও নাসরিন চৌধুরী পরস্পর সহকর্মী। তারা উভয়েই বিবাহিত হওয়া সত্বেও একে অপরের সঙ্গে পরকীয়া ও অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এ বিষয়ে অভিযোগকারী তার স্বামীকে বুঝানো স্বত্বেও কোন সুফল পানি। তিনি প্রায়ই স্বামীর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।’
খাদিজা আক্তার বলেন, ‘ফেনীতে থাকার সময় তাদেরকে হাতেনাতে ধরি। তখন নাসরিন চৌধুরী আমাকে হুমকি দিয়ে বলে, আমরা ম্যাজিস্ট্রেট, যা ইচ্ছা তাই করবো।’ খাদিজা আরো জানান, ‘নাসরিন চৌধুরীর স্বামী বিদেশে থাকেন। স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় পারিবারিক জীবন-যাপন করেন না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাসরিন চৌধুরীর বলেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। এ বিষয়ে আমি কোন মন্তব্য করতে চাইনা।