মাদক ব্যবসার জন্য ৭ লাখ টাকা ঘুষ দাবির অডিও ফাঁস, ওসি প্রত্যাহার
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৭ সেপ্টেম্বর,রবিবার,২০২৩ | আপডেট: ০৩:২০ এএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
অভিযুক্ত চারঘাট থানার ওসি মাহবুবুল আলম। ছবি: সংগৃহীত
সাত লাখ টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগে রাজশাহীর চারঘাট থানার ওসি মাহবুবুল আলমকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাতে তাকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়।
এর আগে ওসি মাহবুবুল আলমের বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নামে এক গৃহবধূর কাছে ৭ লাখ টাকা ঘুষ দাবির একটি অডিও ফাঁস হয়। অডিওতে ৫ লাখ টাকা দিয়ে ওই গৃহবধূকে ওসি মাদক ব্যবসা করার পরামর্শ দিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ওসিকে বদলি করতে আরও দুই লাখ টাকা দাবি করতে শোনা যায়। এই টাকা না দিলে বড় বিপদে পড়ে যাবেন বলে ওই গৃহবধূকে বলেন ওসি মাহবুবুল।
ভুক্তভোগী গৃহবধূর দাবি, তার স্বামী আব্দুল আলিম কালু গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সদস্য পদে নির্বাচন করেন। এতে প্রতিপক্ষের রোষানলে পড়েন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে তার স্বামীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ফাঁস হওয়া ওই অডিও রেকর্ডে ওসি মাহবুবুল আলমকে বলতে শোনা যায়, ‘নির্বাচন করতে মন্ত্রী আমাকে গাইবান্ধা থেকে এখানে নিয়ে এসেছেন। মন্ত্রীর কথা ছাড়া কারও কথা শুনিনা। দুই লাখ টাকা দেন কালকেই ডিবির ওসিকে বদলি করে দিব। ‘মুক্তা (চারঘাটের মাদক সম্রাট নামে পরিচিত) অ্যাকশন নিতে পারবে না, শুভ (ছাত্রলীগ নেতা ও মাদক কারবারি) অ্যাকশন নিতে পারবে না। তোমরা ৫ লাখ টাকা দিতে পারবা? ধরে ওদের চালান দিয়ে দিব। থাকি না থাকি ওদের সাইজ করবো। তোমরা বাইরে থেকে ব্যবসা (মাদক ব্যবসা) করবে। নির্বাচনের আগে শুভকে ধরতে পারবো না। কথা সব ভেঙে বলবো না। যদি আতিকের (জেলা গোয়েন্দা শাখার ওসি) বদলি চাও ২ লাখ টাকা দাও। কালকেই আতিকের বদলি হয়ে যাবে।’
ওসিকে আরও বলতে শোনা যায়, ‘যে জায়গার ক্ষমতা সেখানেই। ৫ লাখ আর ২ লাখ ৭ লাখ টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করো। আতিক বাদ, ওই দুইজনকে (মুক্তা ও শুভ) ট্যাকেল দেওয়ার দায়িত্ব আমার। নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পরে মন্ত্রীকে বলে ওই দুইজনকে ধরে অ্যারেস্ট করে চালান করে দিব। আমার সব উপরের লাইন। যে টাকা দিবা এই টাকাই উপরে কাজ করবে।’ অডিওতে গৃহবধূ সাহারা বেগমের সুন্দর চেহারা নিয়েও মন্তব্য করতে শোনা যায় ওসিকে।’
জানা যায়, গত ১৩ সেপ্টেম্বর দুপুরে সাহারা বেগম (২৮) নামে ওই গৃহবধূকে ডেকে নিয়ে ৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন চারঘাট থানার ওসি মাহবুবুল আলম। এ ঘটনার পর থেকে ভয়ে বাড়ি ছাড়া ওই গৃহবধূ। এ ঘটনায় শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাজশাহী পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী ওই গৃহবধূ। অভিযোগের অনুলিপির সঙ্গে ৬ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডের ওসির একটি অডিও রেকর্ড পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও ওসি মাহবুবুল আলমের সরকারি ফোনে কল প্রবেশ করেনি। তাই তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
রাজশাহীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) ও মিডিয়া সেলের মুখপাত্র রফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা অডিও রেকর্ডসহ একটি অভিযোগ পেয়েছি। ঘুষ চাওয়ার ঘটনা যদি সত্য হয় তবে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে তার আগে ওই অডিওর কণ্ঠ ওসির কি না? সেটিও তদন্ত করে দেখা হবে।