পেটের দায়ে ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করছেন মেনু মিয়া
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১ সেপ্টেম্বর,শুক্রবার,২০২৩ | আপডেট: ০৫:০৪ পিএম, ১৫ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
গরু বা মহিষ দিয়ে হাল চাষ এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রপাতি আবিষ্কারের ফলে কৃষিতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। এখন হালচাষের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে ইঞ্জিন-চালিত পাওয়ার টিলার বা ট্রাক্টর। কিন্তু কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার কমড়ভোগ গ্রামে এবার দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। এখানে হালচাষে ব্যবহার করা হচ্ছে ঘোড়া।
পৌর এলাকার কমড়ভোগ গ্রামের মেনু মিয়া একজন কৃষক। তার নিজের কোনো জমি নেই। আগে অন্যের জমিতে বর্গা চাষ করতেন। কিন্তু তিনি তিন বছর ধরে অন্যের জমি টাকার বিনিময়ে চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। আর এভাবেই তিনি সংসারের সচ্ছলতা ফিরে আনতে সক্ষম হচ্ছেন।
গত কয়েক দিনের কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টিপাত হওয়াতে এ এলাকার আমন ধানের প্রান্তিক চাষীরা নেমে পড়েছেন তাদের ফসলের জমি প্রস্তুত করার কাজে। সেই জন্য কদর বেড়েছে ঘোড়া দিয়ে হাল চাষ করা বর্গাচাষী মেনু মিয়ার।
উপজেলার বোয়ালিয়া ও দড়িচরিয়াকোনা গ্রামে এ ধরনের চিত্রই দেখা যায়। দড়িচরিয়াকোনা গ্রামের বর্গা চাষী মেনু মিয়া বলেন, বড় অভাবের সংসার আমার। সংসারে আমার মা, স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তাদের ভরণপোষণ করতে আমার প্রচুর বেগ পেতে হয়। আগে অন্যের জমিতে বর্গাচাষ করে সংসার চালাতাম। কিন্তু এতে ফসল উৎপাদনে খরচ বেড়ে যাওয়ায় সেটা বন্ধ করে দিয়ে অন্য কোনো কাজ খুঁজতে থাকি। এদিকে বাজারে গরুর দাম অত্যন্ত চড়া। দুটি গরু কিনতে প্রায় দুই লাখ লাগত। তাই তিন বছর আগে গরুর পরিবর্তে ৪৪ হাজার টাকায় দুইটি ঘোড়া কিনে চুক্তিতে ও টাকার বিনিময়ে অন্যের জমি হালচাষ করা শুরু করি।
তিনি আরো বলেন, ঘোড়া দিয়ে তাড়াতাড়ি হালচাষ ও জমিতে মই দেয়া যায়। প্রতিবিঘা জমি বাবদ খরচ নেয়া হয় মাত্র ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। এভাবে আমি প্রতিদিন ৪-৫ বিঘা জমি চাষ করতে পারি। এতে যে আয় হয় তা দিয়ে সংসার খরচ ও ঘোড়ার খরচ বাদ দিয়ে কিছু সঞ্চয়ও করতে পারি।
বোয়ালিয়া ও কমড়ভোগ এলাকার কৃষকরা জানান, এখন গরু দিয়ে হালচাষ তেমন করা হয় না বললেই চলে। তাছাড়া ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করলে জমি সমান হয় না। এতে খরচও বেশি লাগে। তাই আমরা ঘোড়া দিয়ে জমির মাটি সমান করে অধিক পরিমাণে ফসল ফলাতে পারি।
কটিয়াদী উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মইনুল ইসলাম বলেন, ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করে জীবিকা নির্বাহ করা একটি অপ্রচলিত পদ্ধতি। কৃষি বিভাগ সবসময় তাদেরকে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে চাষাবাদ করার পরামর্শ দিয়ে থাকে।