avertisements 2

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জিমে গোপনে নারীর ভিডিও ধারণ, ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১ সেপ্টেম্বর,শুক্রবার,২০২৩ | আপডেট: ০২:৩৬ পিএম, ১১ মে,শনিবার,২০২৪

Text

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি ব্যায়ামাগারে (জিম) গোপনে আপত্তিকর ভিডিও ধারণের প্রতিবাদ করায় এক গৃহবধূ, তার বোনসহ তিন জনকে আটকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার পর ‘৯৯৯’ এ ফোন পেয়ে তাদের উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে জিমের পরিচালক হাবিবুল্লাহ ভূঁইয়াসহ তিন জনকে আটক করেছে পুলিশ। পরে তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

বুধবার (৩০ আগস্ট) সন্ধ্যায় শহরের মৌলভীপাড়ায় বিএস ফিটনেস ক্লাব নামের একটি ব্যায়ামাগারে এ ঘটনা ঘটে। আটক হাবিবুল্লাহ (৩২) জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি। আটক অন্য দুজন হলেন ব্যায়ামাগারের ফিটনেস প্রশিক্ষক মিতু আক্তার (২৮) ও সহযোগী সাইম (২৫)। 

এ ঘটনায় বুধবার রাতে ওই গৃহবধূর ভাসুর মাসুদুর রহমান ৪ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাত ৮/৯ জনকে আসামি করে সদর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এদিন রাতে অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করার পর তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

লিখিত অভিযোগ ও আহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ওই গৃহবধূ ও তার বোন জেলা শহরের মৌলভীপাড়ায় অবস্থিত বিএস ফিটনেস সেন্টারে নিয়মিত ব্যায়াম করেন। সেখানে মেয়েদের ব্যায়াম করার আলাদা ব্যবস্থা ও পুরুষদের যাওয়ার অনুমতি না থাকায় দুই বোন গত কয়েক মাস আগে সেখানে ভর্তি হয়েছিলেন। গোপন ভিডিও ধারণ করায় গত কয়েকদিন ধরে ব্যায়ামাগারের প্রশিক্ষক মিতু আক্তারের আচরণ তাদের সন্দেহ হয়‌। প্রশিক্ষক মিতু গোপনে তাদের ভিডিও ধারণ করেছে বলে গত দুই দিন আগে তারা নিশ্চিত হন। 

বুধবার বিকেলে ওই গৃহবধূ ও তার বোন গোপনে ভিডিও ধারণের বিষয়ে প্রশিক্ষক মিতুকে জিজ্ঞেস করে। এনিয়ে মিতুর সঙ্গে তাদের বাকবিতণ্ডা হয়। প্রশিক্ষক মিতু এক পর্যায়ে বিষয়টি ব্যায়ামাগারের পরিচালক জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হাবিবুল্লাহ ভূঁইয়াকে জানান। খবর পেয়ে হাবিবুল্লাহ ব্যায়ামাগারে পৌঁছে প্রশিক্ষক মিতুকে সঙ্গে নিয়ে তাদের দুই বোনের কাছে যান। এসময় মিতু চুলের মুঠি ধরে ওই গৃহবধূ ও তার বোনকে মারধর শুরু করেন। 

খবর পেয়ে তাদের বাঁচাতে জেলা শহরের উত্তর পৈরতলার সোহেল মিয়া নামের এক স্বজন ব্যায়ামাগারের ভেতরে যান‌। এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের সহ সভাপতি হাবিবুল্লাহ ও তার সহযোগীরা লোহার রড দিয়ে সোহেলকে বেধড়ক মারধর করে আটকে রাখেন। বিষয়টি জানতে পেরে তাদের পরিবারের লোকজন ঘটনাস্থলে পৌঁছেন। কিন্তু ফটক তালাবদ্ধ থাকায় তারা কেউ ব্যায়ামাগারের ভেতরে ঢুকতে পারেননি। 

সেসময় মৌলভীপাড়া-মধ্যপাড়া সড়কের আশপাশে উৎসুক মানুষ জড়ো হন। এক পর্যায়ে কয়েকজন ভিডিও করে ঘটনাটি ফেসবুকে শেয়ার দেন। সেখান থেকে গৃহবধূর ভাসুর ও ফয়সাল নামে এক সচেতন ব্যক্তি ‘৯৯৯’ এ ফোন করে পুলিশের সহায়তা চান। পাশাপাশি গৃহবধূর ভাসুরসহ অন্যান্য লোকজন ঘটনাস্থল থেকে ফোন করে বিষয়টি সদর থানা পুলিশকে অবহিত করেন। 

সন্ধ্যায় সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মারধরের শিকার দুই বোন ও আহত সোহেলকে উদ্ধার করে। ঘটনাস্থল থেকে ব্যায়ামাগারের পরিচালক জেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি হাবিবুল্লাহ ভূঁইয়া, প্রশিক্ষক মিতু আক্তার ও মো. সাইম নামের ওই তরুণকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। আর গুরুতর আহত হওয়ায় ওই গৃহবধূ, তার বোন ও আহত সোহেল ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।

বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা জেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি হাবিবুল্লাহ ভূঁইয়া ওই গৃহবধূ ও তার বোনকে মারধর করার অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, মুঠোফোনে আপত্তিজনক ভিডিও ধারণের বিষয়ে একজন নারীর ফোন পেয়ে তিনি ব্যায়ামাগারে যান। সেখানে যাওয়ার পথে সোহেল নামে একজন তাকে ফোন করে বকাঝকা করেন। এরপর তিনি কয়েকজন লোকজন নিয়ে ব্যায়ামাগারে পৌঁছেন। ব্যায়ামাগারে ভাঙচুর দেখে সোহেলকে আটক করা হয়। পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে নেওয়ার সময় পেছন থেকে কেউ একজন তাকে ছুরিকাঘাত করে।‌ এ বিষয়ে মামলা দায়ের করবেন বলেও জানান তিনি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম হোসাইন বলেন, জিমের ঘটনায় ৪ জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৮/৯ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই মামলায় আটক তিন জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, দুই জনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। হাবিবুল্লাহর কোমরের বামপাশের ওপরে সামান্য ছুরিকাঘাতের আঘাত রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2