avertisements 2

ডেঙ্গুর ভয়াল রূপ

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৭ জুলাই,সোমবার,২০২৩ | আপডেট: ০৭:৫৪ এএম, ২৬ এপ্রিল,শুক্রবার,২০২৪

Text

ডেঙ্গু ক্রমেই ভয়াবহ হয়ে উঠছে। চলতি মাসের ১৬ দিনেই সর্বোচ্চ আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ইতোমধ্যে দেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর ঘটনা ১০০ ছাড়িয়েছে এবং এক দিনে ডেঙ্গুতে হাসপাতালে ভর্তি ১৬০০ ছাড়িয়ে গেছে। গতকাল রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত পূর্বের ২৪ ঘণ্টায় দেশে এক হাজার ৪২৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ছয়জনের। এর মধ্যে ঢাকায় ভর্তি হয়েছে ৭৪১ জন এবং মৃত্যু হয়েছে চারজনের।

হাসপাতালগুলোতে নতুন রোগী ভর্তি করার জন্য যথেষ্ট সিট নেই, মেঝেতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বিছানা পেতে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। চলতি মাসে সংক্রমণ যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে মৃত্যুর সংখ্যাও। জনসাধারণের মধ্যে যথেষ্ট সচেতনতা সৃষ্টি করা যায়নি বলে খারাপ অবস্থা নিয়ে হাসপাতালে আসছে। মশা নিধনে সিটি করপোরেশনের যথেষ্ট প্রচেষ্টা না থাকায় ডেঙ্গু ক্রমেই ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে মশক নিধনে যে কীটনাশক ব্যবহার হচ্ছে এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা নতুন করে কার্যকর মশক নিধন কীটনাশক নিয়ে আসার দাবি করেছেন।

ডেঙ্গু জীবানুবাহী এডিস মশা যেমন পরিবেশের সাথে নিজেকে খাপখাইয়ে নেয়ার সক্ষমতা গড়ে তুলেছে তেমনি এই মশার সবগুলো স্ট্রেইনই কার্যকর বলে এ মাসে ডেঙ্গু ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন। ঢাকা শহরেই ডেঙ্গু সবচেয়ে বেশি। চলতি মাসে দেশে যত ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এর বেশির ভাগই ঢাকা শহরের ৫৩ সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছে। যেমন চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গত ১৫ জুলাই পর্যন্ত দেশে ১৯ হাজার ৪৫৪ জন ডেঙ্গু রোগী কেবল হাসপাতালেই ভর্তি হয়েছে, এর মধ্যে ঢাকা শহরের ৫৩ সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছে ১৩ হাজার ১০৯ জন। ঢাকা শহরের ৬৭.৩৮ শতাংশ রোগীই ঢাকা শহরে ভর্তি হয়েছে। এর বাইরে আরো অনেক ডেঙ্গু আক্রান্ত রয়েছে যারা হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে চিকিৎসকের প্রাইভেট চেম্বার থেকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হচ্ছে। মেডিসিন ও রিউমাটোলজির বিশিষ্ট চিকিৎসক অধ্যাপক ডা: সৈয়দ আতিকুল হক এ ব্যাপারে বলেন, বর্তমানে ডেঙ্গুর যে ৪টি সেরুটাইপ রয়েছে (ডেন ১ থেকে ৪ পর্যন্ত) সবগুলো সেরুটাইপই এডিস মশা বহন করছে এবং সেরুটাইপ বেশি কার্যকর বলে মানুষ বেশি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে। এর আগে কখনো সবগুলো সেরুটাইপ কার্যকর ছিল না। ডেঙ্গু জীবাণুবাহিত এডিস মশা বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডা: মো: শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, সিটি করপোরেশন মশক নিধনে যে কীটনাশক ব্যবহার করছে এই কীটনাশকে মশা মরে কি না তা নতুন করে পরীক্ষা করাতে হবে। মশক নিধনে এখন কীটনাশক কার্যকর না হলে পৃথিবীর যেখানে কার্যকর কীটনাশক ব্যবহার হচ্ছে সেখান থেকে নিয়ে আসতে হবে।

বিশিষ্ট জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা: মোহাম্মদ মোশতাক হোসেন বলেন, এডিস মশার বৈশিষ্ট্যে পরিবর্তন হয়েছে। আগে এই মশাগুলো কেবল সকাল ও সন্ধ্যায় কামড়াতো। কিন্তু রাতের বেলাও কামড়াচ্ছে। আগে এডিস মশা পরিষ্কার পানিতে ডিম ফুটে লার্ভা হতো, এখন নোংরা পানিতেও লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে। আগে কেবল শহরাঞ্চলের মশা হিসেবে চিহ্নিত হলেও এখন গ্রামেও পাওয়া যাচ্ছে।
এ দিকে ঢাকার হাসপাতালগুলোতে দেখা যাচ্ছে, তারা নতুন করে রোগী ভর্তি করতে চাচ্ছে না। কারণ তাদের কাছে এখন আর যথেষ্ট সিট নেই। যারা আসছে তাদের ফ্লোরে বিছানা বিছিয়ে দিতে হচ্ছে। কোনো কোনো হাসপাতালে বিছানাও দিতে পারছে না। রোগীর স্বজনরা বাসা থেকে যে চাদর নিয়ে আসেন সেটা বিছিয়েই হাসপাতালে আছেন।

এ দিকে গতকাল রোববার ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা: আবুল বাশার মুহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ডেঙ্গুতে জ্বর ছেড়ে গেলেই নিরাপদ ভাবা উচিত নয়, প্রকৃত বিপদ তখন থেকেই শুরু হয়। জ্বর ছাড়ার পর রক্তের প্লাটিলেট কমে যেতে শুরু করে, প্লাটিলেট মেপে দেখতে হবে। নির্দিষ্ট লক্ষণ প্রকাশ পেলে অবশ্যই হাসপাতালে যেতে হবে। ডেঙ্গু বেড়ে যেতে থাকলেও এখন পর্যন্ত জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে জরুরি অবস্থা ঘোষণার সময় এখনো আসেনি। অতএব, মহামারী (পেন্ডেমিক) ঘোষণা করারও সময় হয়নি। এখন পর্যন্ত রোগীদের চিকিৎসা দেয়া যাচ্ছে, এখনো শয্যা সঙ্কট হয়নি। তিনি বলেন, বিলম্বিত বর্ষা শুরুর কারণে ডেঙ্গু বাড়ছে, এটা আরো বাড়তে থাকবে। আমরা যথাসাধ্য চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। তবে ঢাকা শহরের হাসপাতালগুলো ভরে যাচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, মুগদা মেডিক্যাল কলেজে রোগীর চাপ বেশি। তিনি বলেন, আমরা রোগীদের অন্যান্য সরকারি হাসপাতালে যেতে বললে তারা যেতে চান না।

তিনি বলেন, মহাখালীর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) হাসপাতালে অনেক শয্যা রয়েছে। এই হাসপাতালে দুইশতাধিক আইসিইউ বেড রয়েছে। প্রয়োজনে সে সেবাটিও রোগীরা পেতে পারবেন। তিনি বলেন, আমরা দেশের সর্বত্র ডেঙ্গু চিকিৎসার প্রটোকল পাঠিয়ে দিয়েছি, প্রটোকল মেনে চিকিৎসা করলে মৃত্যু কমে যাবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ওয়েবসাইটে প্রটোকল দেয়া আছে, যে কেউ সেখান থেকে ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2