শিক্ষিকা থাকেন ঢাকায়, হাজিরা খাতায় উপস্থিত বিদ্যালয়ে
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১১ জুন,রবিবার,২০২৩ | আপডেট: ০৪:৪৪ পিএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
শিক্ষিকা থাকেন ঢাকায় কিন্তু হাজিরা খাতায় উপস্থিতি বিদ্যালয়ে। ওই শিক্ষিকা নিয়মিত স্কুলে না আসলেও বেতন ঠিকই ভোগ করছেন। অন্যদিকে অভিযোগ উঠেছে উৎকোচের বিনিময়ে ওই শিক্ষিকাকে এ সুযোগ করে দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারের উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার ও প্রধান শিক্ষক। এ ঘটনাটি সাংবাদিকদের নজরে পড়লে প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার উভয় উভয়কে দোষারোপ করেন। ঘটনাটি নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার পুটিমারী ঝাকুয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
সূত্র জানায়, পুটিমারী ঝাকুয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শামীমা নওরিন জ্যোতি নামে একজন শিক্ষিকা চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে এ বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। যোগদান করার পর কয়েকদিন ক্লাস নিলেও পরবর্তীতে তিনি স্বামীর সাথে ঢাকায় অবস্থান করে। তিনি ঢাকায় অবস্থান করলেও বিদ্যালয়ের শিক্ষক হাজিরা খাতায় নিয়মিত উপস্থিতি দেখাচ্ছেন প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম।
অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারের দায়িত্বরত উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার শাখাওয়াত হোসেন বিষয়টি আগে থেকেই জানেন বলে জানা গেছে।
মঙ্গলবার (৬ জুন) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ওই বিদ্যালয়ে ৬ জন শিক্ষকের মধ্যে ৪ জন শিক্ষক উপস্থিত রয়েছে। এর মধ্যে অভিযুক্ত শিক্ষক শামীমা নওরিন জ্যোতিও অনুপস্থিত রয়েছে। এসময় ওই শিক্ষিকা দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ে না আসার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে তিনি ওই বিদ্যালয়ের সভাপতির ছোট বোন। তাই তাকে বিদ্যালয়ে আসতে হয় না। খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে ওই শিক্ষিকা বিদ্যালয়ে না এসেও হাজিরা খাতায় নিয়মিত উপস্থিত থাকছেন। ওই বিদ্যালয়ের কেউ না কেউ স্বাক্ষর করে রাখছেন। উপস্থিতি হাজিরা খাতায় দেখা গেছে ওই শিক্ষিকা যোগদানের দিন যে স্বাক্ষর দিয়েছেন তার সাথে পরবর্তী অনেক স্বাক্ষরের নেই কোন মিল। অপর দিকে অনুপস্থিতির বিষয়টি প্রকাশ্যে আসলে সোমবার উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার শাখাওয়াত হোসেন তাৎক্ষনিক বিদ্যালয়ে পরিদর্শনে গিয়ে হাজিরা খাতায় ওই শিক্ষিকাকে রবিবার থেকে অনুপস্থিত দেখান।
বিদ্যালয় সংলগ্ন বসবাসরত ওই বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী জানান শামীমা নওরিন জ্যোতি মেডাম কয়দিন স্কুলে এসেছিল। ওই মেডাম অনেক দিন ধরে বিদ্যালয়ে আসেন না বলে ওই শিক্ষার্থী জানান।
গ্রামবাসী দিপক চন্দ্র জানান ওই শিক্ষিকা স্বামীর সাথে ঢাকায় থাকেন। তাকে নিয়মিত বিদ্যালয়ে দেখা যায় না।
এ ব্যাপারে উপজেলার দু’একজন শিক্ষকের কাছে জানতে চাইলে তারা জানান- ওই শিক্ষিকা বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকেন বলে আমাদের জানা নেই। শিক্ষক শামীমা নওরিন জ্যোতির সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করর চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসি করেননি।
প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলামের কাছে ওই শিক্ষিকার অনুপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কথা বলেন। প্রথমে বলেন নওরিন নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসে। তিন দিন ধরে আসেনি। আবার বলেন এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার স্যার জানেন। আবার বলেন সোমবার আমাকে ফোন করে ছুটি নিয়েছে। তিনি আরও বলেন-ওই শিক্ষিকা গর্ভবতী। এজন্য আসেননি। সবশেষে তিনি বলেন- ওই শিক্ষিকা ঢাকায় গেছে।
উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার শাখাওয়াত হোসেনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এর আগেও ওই শিক্ষিকার অনুপস্থিতির বিষয়টি আমি ধরেছিলাম। তখন আমাকে জানানো হয় তার মিস ক্যারেস হয়েছে। তাই মানবিক কারণে পদক্ষেপ নেইনি। তবে স্বাক্ষরের গরমিলের বিষয়টি আমার দৃষ্টিগোচর হলে আমি প্রধান শিক্ষককে সতর্ক করাসহ অনুপস্থিতির কারণে শোকজও করেছি। সোমবার বিষয়টি আবারও শুনা মাত্রই আমি বিদ্যালয়ে গিয়ে ওই শিক্ষিকাকে উপস্থিত পাইনি। তার স্বাক্ষরের ঘরগুলো ফাঁকা ছিল। আমি অনুপস্থিত করেছি। এসময় প্রধান শিক্ষক আমাকে বলেন, স্যার শামীমা নওরিন জ্যোতি আপনার জন্য কিছু টাকা দিয়ে গেছে।
বিষয়টি প্রকাশ্যে আসলে সচেতন মহল তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।