মেম্বারকে টাকা না দিলে মেলে না ভাতার কার্ড
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৬ জুন,মঙ্গলবার,২০২৩ | আপডেট: ০৫:৩৯ এএম, ১৭ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
বয়স্ক ভাতা,প্রতিবন্ধী ভাতা,বিধবা ভাতা ও মাতৃত্বকালীন ভাতা এমন কোনো ভাতা বাদ নেই যেখান থেকে কমিশন নেন না। কখনো অগ্রিম টাকা,কখনো বা ভাতার টাকার একটি অংশ দেওয়ার সত্ত্বে করিয়ে দেন ভাতার কার্ড। এভাবেই জনগনের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ আত্মসাতসহ না-না দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার ৩নং চন্ডিগড় ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য (মেম্বার) মো. সিরাজুল ইসলাম তোতা মিয়ার বিরুদ্ধে।
এসব বিষয় উল্লেখ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর গণস্বাক্ষরের এক লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন করে ওই ওয়ার্ডের ভুক্তভোগীরা।
জানা গেছে,৩নং চন্ডিগড় ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ডে মেম্বার পদে টানা দুই বার নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হয়েছিলেন। এতপর তৃতীয় বার নির্বাচনে অংশ নিলে বিজয়ী হয়ে মেম্বার নির্বাচিত হন তিনি। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই অনিয়ম,দুর্নীতির কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হচ্ছে সাধারণ জনগণ। সরকারি বিভিন্ন ভাতার কার্ড করে দিতে জনগণের কাছ থেকে বেশি অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। তার চাহিদা মোতাবেক টাকা দিতে না পারলে ভাতা পাওয়ার উপযোগী হওয়া সত্ত্বেও মেলে না ভাতার কার্ড। প্রকৃত সুবিধাভোগীদের বাদ দিয়ে টাকার বিনিময়ে ভাতার কার্ড দিয়ে যাচ্ছেন। এতে করে প্রকৃত সুবিধাভোগীরা সরকারের সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর অভিযোগের শেষ নেই।
মেলাডহর গ্রামের ডালিয়া বেগম,পারভীন আক্তার,ফাতেমা খাতুন, রাবিয়া খাতুনসহ আরো অনেকেরই কাছ থেকেই চালের কার্ড/বয়স্কভাতার কার্ড করিয়ে দেওয়ার কথা বলে জনপ্রতি অগ্রিম ১ হাজার টাকা নিয়েছেন। এছাড়াও গভীর নলকূপ (সাবমার্সেবল) পাওয়ে দেওয়ার কথা বলে বিভিন্নজনের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে আদায় করাসহ অনেক অভিযোগ রয়েছে ইউপি সদস্যর বিরুদ্ধে।
মেলাডহর গ্রামের গৃহবধূ মৌসুমি আক্তার বলেন, আমি গর্ভবতী ভাতার কার্ড করার জন্য মেম্বারের কাছে গেলে তিনি আমারে বললেন ওনাকে কিছু টাকা দেওয়া লাগবে। ভাতার কার্ড বাবদ ২ হাজার ৫০০ টাকা দিয়েছি। কিন্তু আমার কার্ড হয়নি।
ফাতেমা খাতুন বলেন,আমার স্বামী অসুস্থ হয়ে দীর্ঘ ধরেই বিছানায় পড়ে আছে। স্বামীর বয়স্ক ভাতার কার্ডের জন্য মেম্বারের কাছে গেলে তিনি টাকা দাবী করেন। গরিব মানুষ ভাবলাম কিছু টাকা দিয়েও যদি কার্ড পাই, অসুবিধা কী। প্রথমে সুধীঋীণ করে ১ হাজার টাকা দিয়েছি। পরবর্তীতে আবারও ২০০ টাকা নেন কিছুদিন পর আবারও ১০০ টাকা নিয়েছেন। কিন্তু ১ বছর হয়ে গেছে তারপরও কার্ড পাইছি না। আমরা গরিব মানুষ আমরার সাথে এটা করা কি ঠিক হইতাছে?
ধানসিরা গ্রামের বাসিন্দা বিলকিস বেগম বলেন,চালের কার্ডের জন্য মেম্বারের কাছে গেলে তিনি বললেন কার্ড করে দিবেন কিন্তু ৪ হাজার টাকা অগ্রিম দিতে হবে। তারপর আমি ১৫০০ টাকা ওনাকে দিয়েছি কিন্তু এ নেন নাই। ৪ হাজার টাকাই লাগবে । পরবর্তীতে আর চালের কার্ডটিও করে দেননি। তিনি আরও বলেন,কোনো কাজের জন্য কেউ সিগনেচারের জন্য গেলেও টাকা দিতে হয়। নইতো তিনি সিগনেচার করেননা।
অপর বাসিন্দা আবুল কাশেম বলেন, সাবমার্সেবল এনে দিবেন বলে মেম্বার আমার কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা নিয়েছেন ১ মাস আগে। কিভাবে ওনি সাবমার্সেবল দিবেন এটা উনিই জানেন!
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য মো. সিরাজুল ইসলাম তুতা মিয়া মুঠোফোনে বলেন,"আমি কোনো টাকা-পয়সা নিইনি। অভিযোগগুলোর প্রমান নাই।আর নলকূপের টাকা ওই লোক দিয়েছেন এনে দিতে না পারলে টাকা ফিরত দিয়াম।"
গভীর নলকূপের জন্য আপনি কত টাকা করে নিয়েছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, যিনি টাকা দিয়েছেন উনাকেই জিজ্ঞেস করুন উনিই বলুক।
৩নং চন্ডিগড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এমদাদুল হক (আলম) সরকার বলেন, পরিষদের প্রতিটি মিটিং এ মেম্বারদের এইসকল বিষয়ে সর্তক করা হয়। আমার পরিষদের ওই সদস্যের ব্যাপারে আমার কাছে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ আসেনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রাজীব-উল-আহসান বলেন,অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।