avertisements 2

মদের টাকা জোগাতে ইজিবাইক চালক শাকিলকে খুন, গ্রেপ্তার ৪

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২২ মে,সোমবার,২০২৩ | আপডেট: ০৬:০৯ এএম, ৮ মার্চ,শুক্রবার,২০২৪

Text

বাবা ছিদ্দিক মিয়ার মৃত্যুর পর অসুস্থ মা ও ছোট ভাইয়ের দায়িত্ব নিজের কাধে তুলে নেন দশম শ্রেণির ছাত্র মো. শাকিল (১৮)। নিজের পড়ালেখা, মায়ের চিকিৎসা ও সংসারের খরচ জোগাতে শাকিল স্কুলের ক্লাস শেষে প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ইজিবাইক চালাতেন।

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ইজিবাইক নিয়ে বের হওয়ার পর আর বাসায় ফেরেনি শাকিল। পরদিন ভোরে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার মঠবাড়ী পদ্মা রেলওয়ে সেতুর নিচে পরিত্যক্ত এক ইট ভাটা থেকে শাকিলের গলা কাঁটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। শাকিল দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের জাজিরা গ্রামের বাসিন্দা। এ ঘটনায় শাকিলের বড় বোন সীমার করা মামলায় দ্রুত সময়ের মধ্যে হত্যাকাণ্ডে জড়িত চার জনকে গ্রেপ্তার করে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, জনি (২০), শারাফাত (২০), ইব্রাহিম চান (২১) ও সাব্বির হোসেন মেহেদী (২২)। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি রক্তমাখা সুইসগিয়ার চাকু, আসামিদের ব্যবহৃত রক্তমাখা সিএনজি ও লুণ্ঠিত ইজিবাইক উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, মদের টাকা সংগ্রহ করতে ইজিবাইক ছিনতায়কালে শাকিলকে টার্গেট করে কিশোর গ্যংয়ের সদস্যরা। তারা যাত্রী সেজে শাকিলের ইজিবাইকে ওঠে। কিশোর গ্যাংটি শাকিলের পরিচিত হওয়ায় মৃত্যু নিশ্চিত করেই লাশ ফেলে দেয়। পরে গত শুক্রবার সকাল ৬টার দিকে স্থানীয়রা দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় ফোন করে জানায়, মঠবাড়ী পদ্মা রেলওয়ে সেতুর নিচে পরিত্যক্ত এক ইট ভাটার ভিতরে একটি গলা কাঁটা লাশ পড়ে আছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে।

ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আসাদুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশ লাশের সুরতহাল রিপোর্ট করার সময় দেখতে পায়, শাকিলেকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। তার মাথা দেহ থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে। পিঠে অসংখ্য ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। পেটের ডান পাশে ছুরিকাঘাত করায় নাড়ি-ভুঁড়ি বের হয়ে গেছে। এ ঘটনায় শাকিলের বড় বোন সীমা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলাদায়ের করেন। তদন্তে নেমে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শনাক্ত করে পুলিশ। এর ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে গতকাল শনিবার রাতে হত্যাকান্ডে জড়িত চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে উল্লেখ করে পুলিশ সুপার বলেন, হত্যায় জড়িত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা সবাই মাদকাসক্ত। তারা পরিকল্পনা করে একটা ইজিবাইক ছিনতাই করবে। এরপর সেটির ব্যাটারি বিক্রির টাকা দিয়ে মদের পার্টি করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তারা দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কাউটাইল ঘাটে টার্গেট ইজিবাইকের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। পরবর্তীতে কোন টার্গেট ইজিবাইক না পেয়ে তারা কাটাইল ঘাট এলাকা থেকে সামনে এগিয়ে গিয়ে শাকিলকে পায়। শাকিল হত্যাকারী জনির পূর্ব পরিচিত হওয়ায় সহজেই শাকিলকে নির্জন স্থানে নিয়ে যাওয়া সহজ হয়। পরে জনি, শারাফাত ও সাব্বির গাড়ি নিয়ে মঠবাড়ী পরিত্যক্ত ইটখোলায় যায়। অপরদিকে ইব্রাহিম চান সিএনজি নিয়ে পিছু পিছু আসে। ঘটনাস্থলে পৌঁছানো মাত্রই পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী শারাফাত সুযোগ বুঝে সুইসগিয়ার দিয়ে শাকিলের গলায় টান দেয়। এতে শাকিল ইজিবাইক থেকে পড়ে যায় এবং গলা চেপে ধরে চিৎকার শুরু করে। তখন জানি পেছন থেকে শাকিলের পিঠে এলোপাথাড়ি চাকু মারতে থাকে। কিন্তু তারপরও শাকিল চিৎকার করতে থাকায় জনি, সাব্বির ও ইব্রাহিম চান শাকিলের মাথা ও হাত-পা চেপে ধরে এবং শরাফাত শাকিলকে সুইসগিয়ার দিয়ে মাথার সামনে-পেছনে জবাই করে মাথা প্রায় বিচ্ছিন্ন করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর শরাফত, জনি ও ইব্রাহিম চান সিএনজিতে করে চলে যায়। আর সাব্বির নিহত শাকিলের ইজিবাইক নিয়ে চলে যায়। মূলত আসামিদের মদের পার্টির টাকার জন্যই তারা পূর্ব পরিচিত ইজিবাইক চালক শাকিলকে হত্যা করে।
 

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2