avertisements 2

লাগামহীন বাজারের আঁচে বিপর্যস্ত মানুষ

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৭ মে,রবিবার,২০২৩ | আপডেট: ১০:৪১ পিএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪

Text

সিন্ডিকেটের কারসাজি নতুন নয়। কিন্তু করোনার অভিঘাতে মানুষ বড় অসহায়। মানুষ অনেকটাই নিঃস্ব। নিত্য প্রযোজনীয় দ্রব্যমূল্য না কমালে মানুষের সব কিছু নাগালের বাইরে চলে যাবে। সে দাঁড়াবে কোথায়? সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা দুবেলা দুমুঠো ভাত। এটার জন্য সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করলেই অনেকটাই সমাধান সম্ভব।

নিত্যপণ্যের বাজার ক্রমশই লাগামহীন হয়ে পড়েছে। করোনার ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতেই পরিস্থিতি কেমন নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। সবজির দাম বাড়লেও কৃষক যে লাভবান হবে তা কিন্তু হচ্ছে না। কৃষক যেসব পণ্যের দাম ৫ টাকা পাচ্ছে সেসব পণ্য কারওয়ান বাজারে আসতে আসতে তিনগুণ দাম বাড়ছে । অর্থাৎ একটি সিন্ডিকেট এ দাম বাড়াতে মূল ভূমিকা পালন করছে। দেশে দ্রব্যমূল্য বাড়ার এই অস্বাভাবিক অবস্থায় দিশাহারা মানুষ। তারপরও জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েই চলেছে।

সবকিছুর দাম বাড়লেও বাড়ছে না কেবল মানুষের আয়। এ অবস্থায় শহুরে জীবনে টিকে থাকা দায় হয়েছে। এই অবস্থায় ভালো নেই মধ্য আয়ের কর্মজীবী মানুষ। এরাই এখন সবচে দুঃসময়ে। মানুষের দুঃসময়ে শুধু খাদ্যদ্রব্য নয়, জীবন-যাপনে প্রয়োজনীয় সবকিছুর দামই হু হু করে বাড়ছে। এতে নাভিশ্বাস উঠেছে মধ্য আয়ের মানুষেরও। মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় করা ব্যক্তিরাও এখন সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। বাসা ভাড়া, সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ, অফিসে যাতায়াতসহ সংসারের যাবতীয় খরচের সঙ্গে যোগ হয়েছে নিত্যপণ্যের লাগামহীন বাড়তি মূল্য।

রমজান মাস সমাগত। অথচ বাজার অস্থির হয়ে আছে। যেটা মোটেও কাঙ্ক্ষিত নয়। বাংলাদেশে একবার কোনো পণ্যের দাম বাড়লে আর কমতে চায় না, এটা যেন স্বাভাবিক নিয়মে দাঁড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে সব জিনিসের দাম বেড়ে গেছে এমন ঘোষণায় দাম বাড়ে বারে বারে এবারে রমজান ও রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে পণ্য মূল্য আবার বাড়লে মানুষ আরও অসহায় হয়ে পড়বে।

ন্যায্যমূল্যে দ্রব্য বিক্রির গাড়ির পেছনে মানুষের লাইন ক্রমশ দীর্ঘ হচ্ছে। দেশের একটি অনিয়ম নিয়ম হয়ে গেছে, রমজানের সময় মূল্য বেড়ে যায়। কেন বাড়ে, কারা বাড়ায় এটা দেখভাল করার কেউ আছে বলে আমাদের মনে হয়নি। এবারও হয়ত বাড়বে। তারপর কী হবে তা জানে না কেউ। সরকার বিভিন্ন বিষয়ে নজর দেয়ার কথা বললেও সিন্ডিকেটকে কোনোমতে ভাঙা যাচ্ছে না।

মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে চলতি সপ্তাহে রাজধানীর বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। কেজিতে ১৫ টাকা বেড়ে পেঁয়াজের দাম ৬০ টাকায় উঠেছে। চড়াদামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সবজি। অপরিবর্তিত রয়েছে ডিম, মাছ ও মুরগির দাম। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরলে যে চিত্র দেখা যাবে সেটা সাধারণ মানুষের জীবন-যাপনের বাইরে। এসব চিত্র সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের চোখে পড়ার কথা ছিল। কারণ শীতের মৌসুমের শুরুতে কফি বরবটি, বেগুন, শিমের যে দাম ছিল এখনও তাই। কোথাওবা বেশি।

বরবটি কিনতে ক্রেতাদের কেজিপ্রতি ব্যয় করতে হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা। তবে ২৫০ গ্রাম কিনলে গুনতে হচ্ছে ৪০ টাকা। এর মধ্যে বাজারে নতুন আসা ঢ্যাঁড়সের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকা। ভালো মানের করলার কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা। সাধারণ মানের করলা ৫০ টাকা কেজি পাওয়া যাচ্ছে। বরবটি ও ঢ্যাঁড়সের এমন দামের বিষয়ে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের জনৈক ব্যবসায়ীর অভিমত নতুন আসা ভালো মানের বরবটির দাম এখন একটু বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। ভালো জিনিস নিতে খরচ বেশি হবে। প্রশ্ন হচ্ছে ভালো জিনিসের দাম বেশি সেটাই বিশ্বাস করা গেল, কিন্তু সে দাম কৃষক কেন পায় না? কৃষক-শ্রমিক যদি তার উৎপাদিত ফসলের দাম পেত তাহলে এ সংকট তৈরি হয় না। কিন্তু বার বার একই ঘটনা ঘটলেও এর থেকে কোনো পরিত্রাণ নেই।

শীতের সবজি শালগম, মুলা, শিম, লাউ সবছিুর দাম শীত শুরুর দামের চেয়ে কোথাও বেশি। গত সপ্তাহে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পেঁয়াজের দাম বেড়ে এখন ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। কোনো কোনো ব্যবসায়ী বাছাই করা পেঁয়াজের কেজি ৬৫ টাকা বিক্রি করছেন। দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে আলুও। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ১৫ টাকা কেজির হওয়া আলু এখন ১৮ টাকা। এ তালিকায় আরও রয়েছে টমেটো। গত সপ্তাহে ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পাকা টমেটোর দাম বেড়ে এখন ৬০ টাকা। মাছবাজারে রুই, কাতলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৪৫০ টাকা। দাম বাড়ার ব্যাপারটা এমন হয়েছে যে, কোনো বস্তুর দাম সরকার বেঁধে দেয়ার নিয়ম হারিয়ে গেছে। যে যা পারে দাম হাঁকলেই হলো।

এভাবে দ্রব্যমূল্য লাগামহীনভাবে বাড়তে থাকলে মানুষ যাবে কোথায়? করোনাকাল শেষ হয়েছে তা বলা যাচ্ছে না, মানুষের অর্থনৈতিক অবস্টথা এখনও দুর্বল। করোনার প্রথম দিকে যারা ঢাকা ছেড়েছিল তাদের আশা ছিল আবার ঢাকায় ফেরার। আবার সন্তানদের স্কুলে পাঠানোর। কিন্তু সে আশা পূরণ হয়নি। বরং বাল্য বিয়ে আর শিশুশ্রম বেড়েছে। বেড়েছে শিশু-কিশোরদের অপরাধ প্রবণতা। ক্ষুদ্র -মাঝারি ব্যবসায়ীরা করোনা-প্রনোদনা পেলে আবার উঠে দাঁড়াতে পারে।

সারা দেশে, করোনা-প্রনোদনা পেয়েছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ৪৬ ভাগ। এ খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হলেও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়নি। দেশের উত্তরবঙ্গ ঘুরে সবজির যে চিত্র দেখা গেছে তা খুবই করুণ। কৃষকের ১০ টাকার পণ্য কারওয়ান বাজার আসতে আাসতে ৪০ টাকা। পাড়ার ভ্যানে ভ্যানে সেসবই ৫০/৬০ টাকা। ট্রাক ভাড়া, পথে চাঁদা দিতে দিতে দামের লাগাম টানা দুষ্কর হয়ে পড়ে। এর নাম সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের হাতে সয়াবিন থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য। এই সিন্ডিকেট ভাঙা না গেলে নিম্ন-আয়ের মানুষের অচিরেই রাজধানী ছাড়তে হতে পারে। সরকার এটা জানে না তা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়।

সিন্ডিকেটের কারসাজি নতুন নয়। কিন্তু করোনার অভিঘাতে মানুষ বড় অসহায়। মানুষ অনেকটাই নিঃস্ব। নিত্য প্রযোজনীয় দ্রব্যমূল্য না কমালে মানুষের সব কিছু নাগালের বাইরে চলে যাবে। সে দাঁড়াবে কোথায়? সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা দুবেলা দুমুঠো ভাত। এটার জন্য সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করলেই অনেকটাই সমাধান সম্ভব। তা না হলে এলাকাভেদে কৃষকদের সমিতি করে তাদের পণ্য পরিবহনের জন্য একটা ট্রাক কিনে দিলে কৃষক তার পণ্য নিজেই বাজারে নিতে পারবে।

মধ্যস্বত্বভোগী না থাকলে সিন্ডিকেট দুর্বল হয়ে যাবে। মানুষের সংকট লাঘব হবে। সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর বাজারে নজরদারি না করলে সংকট নিরসন সম্ভব নয়। বাজার অস্থির হওয়ার ব্যাপারে বার বার বিভিন্ন সিন্ডিকেটের নাম উঠে আসে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের পদক্ষেপই পারে যেকোনো সংকট নির্মূল করতে। সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল পণ্যমূল্য কমাতে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে সাধারণ মানুষ বিপদে পড়বে।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2