মুরগি ছেড়ে গিলা-কলিজায় নজর নিম্ন আয়ের মানুষের
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৫ মার্চ,
বুধবার,২০২৩ | আপডেট: ১০:৪১ পিএম, ২৪ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
নিম্ন আয়ের মানুষের ভরসা এখন মুরগির অবিক্রিত অংশ গিলা-কলিজা, গলা, পাখনা ও পা। আস্ত মুরগি এখন নিম্ন আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। তাই তারা নিরুপায় হয়ে মুরগির এই অবিক্রিত অংশই কেজি হিসেবে কিনে বাড়ি ফিরছেন।
মুরগির দাম বেড়ে যাওয়ায় ১০০ টাকা কেজির গিলা-কলিজাও এখন ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাই গিলা-কলিজা কিনতে গিয়েও অনেককে হিমশিম খেতে দেখা গেছে। সোমবার (১৩ মার্চ) সকালে নগরীর বাংলাবাজারের বেশ কয়েকটি মুরগির দোকান ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় এক দেড় মাস ধরে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০০ টাকা বেড়ে ২৫০ থেকে ২৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফলে ব্রয়লার মুরগিও এখন নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। তাই তারা মুরগির গিলা-কলিজা, গলা ও পা কেনার দিকে ঝুঁকছেন।
নগরীর বাংলাবাজারে বাজার করতে আসা টাইলস মিস্ত্রি সাদ্দাম বলেন, আগে ব্রয়লার মুরগি কিনতাম ১৪০ টাকা করে কেজি। এখন সেই মুরগির দাম ২৫০ টাকা ছাড়িয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে মুরগির গিলা-কলিজা, গলা ও পা ১৭০ টাকা কেজি দরে কিনছি। আগে কখনো এগুলো না কিনলেও এখন বাজারের যে অবস্থা তাতে কিছুদিন পর মাছ-মাংসের স্বাদ ভুলে যেতে হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চাকরিজীবী বলেন, আমাদের বেতন বাড়ছে না কিন্তু দিনে দিনে সব জিনিসপত্রের দাম বেড়েই চলেছে। গত এক মাস আগেও যে ব্রয়লার মুরগির কিনেছি ১৩০ থেকে ১৫০ টাকায়, তা এখন মাসের ব্যবধানে ২৬০ টাকা কেজি হয়েছে। তাছাড়া ওজন দিয়ে ১ কেজির ব্রয়লার মুরগি মেলানোও যায় না, মুরগি ধরলেই দেড় থেকে দুই কেজি হয়ে যায়। যার দামও প্রায় ৫শ’ টাকা পড়ে যায়। তাই এখন সারা মাস চলার হিসাব করে মুরগির গিলা-কলিজা কিনে নিয়ে যাচ্ছি।
রিকশাচালক জাহিদুল বলেন, প্রায় এক মাসের বেশি সময় হয়েছে ব্রয়লার মুরগিও কিনছি না। কবে দাম কমবে সেই আশায় আছি। কিন্তু এক দেড় মাস ধরে ব্রয়লার মুরগিও ২৫০ টাকার নিচে নামছে না। এদিকে ঘরে ছেলে-মেয়ে শুধু শাকসবজি দিয়ে ভাত খেতে খেতে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। তাই নিরুপায় হয়ে মুরগির গিলা-কলিজা কিনতে এসেছি।
তিনি আরও বলেন, আগে যে গিলা-কলিজার কেজি ১০০ টাকা ছিল সেটাও এখন বেড়ে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা হয়েছে। এই দুর্মূল্যের বাজারে আমাদের মতো দিন আনা দিন খাওয়া মানুষের এখন টিকে থাকাই যেন মুশকিল হয়ে পড়েছে।
বাংলাবাজারের মুরগি বিক্রেতা আরমান খান বলেন, কয়েক দিনের ব্যবধানে দেশি মুরগির দাম কেজিতে ৮০ টাকা বেড়ে ৫৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ব্রয়লার, সোনালী, সাদা কক, লেয়ার মুরগির দাম বেড়েছে কেজিতে ২০-৫০ টাকা। বাজারে সোনালী মুরগি ৩৩০ টাকা, ব্রয়লার ২৪০-২৫০ টাকা, লেয়ার মুরগি ৩২০ টাকা, সাদা কক ৩১০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। মূল্যবৃদ্ধির পর থেকে বেচাবিক্রি এখন অনেক কমে গেছে।
তিনি আরও বলেন, দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেকে মুরগি কিনতে না পেরে গিলা-কলিজা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তাই গিলা-কলিজার চাহিদাও বেড়েছে আগের তুলনায় বহুগুণ। অনেক সময় কাস্টমারকে দিতেও পারছি না।
আরেক মুরগি বিক্রেতা ইলিয়াস হোসেন বলেন, আগে বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় মুরগি নিলে তারা গিলা-কলিজা রেখে যেত। সেগুলো নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছি। এখন রেস্তোরাঁগুলোতেও বেচা বিক্রি কমে গেছে, তারা আগের মতো মাল নিচ্ছে না। ফলে নিম্ন আয়ের মানুষ অনেক সময় গিলা-কলিজাও না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে।