avertisements 2

দুই ভাইকে খুন

শোকে পাগল মা, বাবাকে কাছে না পেয়ে নির্বাক শিশু

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১ মার্চ, বুধবার,২০২৩ | আপডেট: ০৩:৩৪ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪

Text

বাবা বাবা শব্দ উচ্চারণ করছে শিশু সন্তান: ছবি সংগৃহীত

সোনারগাঁয়ের কাঁচপুরের জমি সংক্রান্ত বিরোধে দুই ভাইকে হত্যায় তাঁদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। একটি সুখী পরিবার হঠাৎ করেই কার্যত শেষ হয়ে গেছে। দুই ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় ষাটোর্ধ্ব জহুরা বেগম। বাবাকে হারিয়ে নির্বাক হয়ে গেছে শিশু আনাস আহমেদ আদনান।

রোববার কাঁচপুর ইউনিয়নের পাঁচপাড়া এলাকায় আসলাম সানী (৪৮) ও শফিকুল ইসলাম রনি (৩৫) নামের দুই ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করে তাঁদের চাচাতো ভাইয়েরা। তাঁদের আরেক ভাইও সংকটাপন্ন।

হত্যাকাণ্ডের পর বিক্ষুব্ধ স্বজন ও এলাকাবাসী রাতে জড়িতদের বাড়িতে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে তাদের দুটি বসতঘরসহ ৯টি ভাড়া দেওয়া কক্ষ পুড়ে যায়। খবর পেয়ে সোনারগাঁ থানা পুলিশ রাত ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে আসে। পুলিশ আসার আগেই বাড়িঘর আগুনে পুড়ে যায়।

পাঁচপাড়া এলাকায় সরকারি অর্থায়নের একটি রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণের জায়গা নিয়ে আসলামের সঙ্গে তাঁর চাচাতো ভাই মোস্তফা মিয়ার তর্কবিতর্ক হয়। এক পর্যায়ে মোস্তফার নেতৃত্বে মামুন, মফিজুল রহমান ও মারুফ চাপাতি, রামদা ও রড নিয়ে আসলাম, শফিকুল ও তাঁদের আরেক ভাই রফিকুল ইসলামকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে আসলাম ও শফিকুলকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

এ ঘটনায় সোমবার নিহতদের চাচা মহিউদ্দিনকে প্রধান আসামি করে ৯ জনের বিরুদ্ধে সোনারগাঁ থানায় মামলায় করেছেন তাঁর ভাতিজি শামসুন্নাহার। স্থানীয়রা জানান, তিন ছেলেকে নিয়ে পাঁচপাড়া এলাকায় বসবাস করেন জহুরা বেগম। তাঁর মেজো ছেলে রফিকুলও আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

জহুরা বেগম বিলাপ করে বলেন, 'আমার সব শেষ হয়ে গেছে, আমি এখন কী নিয়ে বাঁচব? আমার নাতি-নাতনিরা কাকে বাবা বলে ডাকবে? ওদের এখন কে দেখবে? সামান্য জমি নিয়ে ওরা আমার সন্তানদের এভাবে খুন করতে পারল! আল্লাহ ওদের মাফ করবে না। আমি ওদের ফাঁসি চাই। আমি আর কিছু চাই না।'

ওই বাড়িতে গিয়ে নিহতের মা ও স্বজনের শোকের মাতম দেখা যায়। নিহত রনির ১৪ মাস বয়সী একমাত্র সন্তান আনাস আহমেদ আদনান সারাদিন বাবার সঙ্গে খুনসুটিতেই ব্যস্ত সময় কাটাত। কিন্তু রোববার বিকেল থেকে বাবাকে না পেয়ে অনেকটাই চুপচাপ হয়ে গেছে সে। বাবাকে দেখতে না পেয়ে বিষণ্ণ মন তার।

রনির স্ত্রী সানজিদা আক্তার বলেন, 'আনাস ওর বাবার ভক্ত। রোববার থেকেই বাবাকে কাছে না পেয়ে ছেলেটা কেমন যেন হয়ে গেছে! ভালো করে কথা বলতে না পারলেও বারবার বাবা বাবা শব্দ উচ্চারণ করছে। আমার ছেলেকে কী জবাব দেব আমি? আমার ছেলেকে কীভাবে মানুষ করব এখন?' তিনি বলেন, সামান্য জমি নিয়ে এভাবে দুটি মানুষকে হত্যা করে ফেলল ওরা! আল্লাহ ওদের ছেড়ে দেবেন না।

শফিকুলের শোকে তিন সন্তান নিয়ে পাগলপ্রায় সোনিয়া আক্তার। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, 'মোস্তফা ও তার পরিবারের অন্য সবাই মিলে পরিকল্পনা করে হামলা করে আমার স্বামী ও দেবরকে খুন করেছে। ওরা জায়গা-জমির জন্য খুন করেছে। আমি বিচার চাই। ওরা মাঝে মাঝেই আমাদের হত্যার হুমকি দিত।'

নিহতদের বড় বোন শামসুন্নাহার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, 'পাঁচ মিনিটের মধ্যে আমার ভাইগো কোপাইয়া নির্মমভাবে মাইরা ফেলল। এবার আমাগো হজে যাওয়ার কথা ছিল। রনিরও যাওয়ার কথা ছিল।'

গতকাল সোমবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম। তিনি নিহতের পরিবারকে সমবেদনা জানিয়েছেন। এ সময় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি ব্যবস্থার আশ্বাস দেন তিনি।

স্থানীয়রা জানান, ১২ শতাংশ জমি নিয়ে তাঁদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছিল। ওই জমি নিয়ে উভয় পক্ষের তিনটি মামলা রয়েছে নারায়ণগঞ্জ আদালতে। হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্তদের নির্মাণাধীন বাড়ির ১ দশমিক ৫ শতাংশ জায়গা নিয়ে আসলাম তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরে আদালত নির্মাণাধীন বাড়ির কাজ বন্ধ করে দেন। সেই ক্ষোভ থেকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে স্বজনরা জানিয়েছেন।

এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল বিকেলে মরদেহ পাঁচপাড়ায় নিয়ে এলে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। এ সময় আত্মীয়স্বজন তাঁদের লাশের পাশে বিলাপ করে মাটিতে গড়াগড়ি করতে থাকেন। অনেক স্বজন লাশ দেখে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। মাগরিবের পরে স্থানীয় কবরস্থানে তাঁদের দাফন করা হয়।
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) চাইলাউ মারমা বলেন, জড়িতদের গ্রেপ্তারে এরই মধ্যে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে। আশা করি, শিগগির তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2