ফুলগাজীর বদরপুরে শত একর জমি অনাবাদি
৬০ লাখ টাকার স্লুইচগেইটটি এখন কৃষকের গলার কাঁটা!
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১ মার্চ,
বুধবার,২০২৩ | আপডেট: ০৫:৩৬ এএম, ১৪ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার মুন্সিরহাট ইউনিয়নের বদরপুরে বিএডিসির বাস্তবায়িত ৬০ লাখ টাকার স্লুইচগেইটটি কোনো কাজে আসছে না। বরং কৃষকের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে সরকারি অর্থে নির্মিত এই স্থাপনাটি। নির্মাণের কিছুদিন পর থেকেই এটি বিকল অবস্থায় পড়ে আছে। তিন বছরেও এর চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সংস্কার না হওয়ায় বোরো মৌসুমে পানির অভাবে বদরপুরসহ আশপাশের এলাকায় আবাদ ব্যাহত হচ্ছে। কিন্তু এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ দৃশ্যমান হচ্ছে না। এতে করে স্থানীয় কৃষক ও সচেতন মহলে ক্ষোভ এবং অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভারত থেকে নেমে আসা পানি দিয়েই বদরপুর ও আশপাশের এলাকায় কৃষি নির্ভরতা। প্রতিবছর শত শত একর জমি আবাদ হয় এ এলাকায়। কৃষকদের সুবিধার্থে ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে বদরপুর মৌজার তৈতোয়াছড়া খালের উপর বড় আকারের হাইড্রোলিক স্ট্রাকচার (স্লুইচগেইট) নির্মাণ করে বিএডিসি। ক্ষুদ্রসেচ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে এটি নির্মাণ করে চেয়ারম্যান নুরুল আমিনের মালিকীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স রিয়া এন্টারপ্রাইজ।
শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, স্লুইস গেইটের উভয়পাশে মাটি সরে যাওয়ায় গার্ডওয়াল দেবে গেছে। বোরো আবাদ মৌসুমে গেইট বন্ধ থাকার কথা থাকলেও খোলা রয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় মাটিভর্তি বস্তা দেয়ায় খালের পানিতে ভেসে গেছে। ফলে আশপাশের শত শত একর জমি অনাবাদি পড়ে আছে। বীজতলা তৈরি করলেও সেটি জমিতেই নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ইতিমধ্যে অনেক জমিতে বীজতলা লালচে হতে দেখা গেছে। তৎসংলগ্ন স্থানে ভারত সীমান্তের কাছেই পাম্প বসিয়ে জমিতে সেচের ব্যবস্থা করেছেন এক কৃষক। আরেক কৃষক মনির আহম্মদ সবজি ক্ষেতের পরিচর্যা করছেন।
মনির আহম্মদ জানান, ৩ থেকে ৪ হাজার টাকার বিভিন্ন ধরনের সবজির চারা রোপন করেছেন। শুধু তাই নয় প্রতি মৌসুমে বর্গা চাষ করে ধান রোপন করলেও এবার তা করতে পারছিনা।
দিদার হোসেন নামের এক প্রবাসী জানান, নিম্নমানের কাজ করায় স্লুইচগেইটটি কৃষকদের কোন কাজে আসছেনা। ফলে প্রায় ৩শ ২০শতক জমিতে চাষাবাদ হয়নি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল কাশেম বলেন, বদরপুর এলাকায় চলতি বোরো মৌসুমে প্রায় ১শ একর জমি অনাবাদি রয়েছে। পানি না পাওয়ায় আমি নিজেও ২শ ৪০শতক জায়গায় বোরো আবাদ করতে পারিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক একরাম পাটোয়ারী বলেন, 'সরকার স্লুইচগেইট নির্মাণ করলেও কৃষকদের কোন কাজে আসছেনা। স্থানীয় এলাকাবাসী কৃষি নির্ভরশীল হওয়ায় গত তিনবছর ধরে দারুণ ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। একইভাবে আমার পরিবারের ২শ শতকের বেশি জমিতে চাষাবাদ হচ্ছেনা।
মুন্সীরহাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বদরপুর এলাকায় কৃষি জমি অনাবাদি ও স্লুইচগেইট নির্মাণে অনিয়ম প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান।
ফুলগাজী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল আলিম মজুমদার বলেন, গত তিনবছর আগেও কৃষকরা ভালোভাবেই কৃষি কাজ করতে পারতেন। তাদের সুবিধার জন্য বিএডিসি স্লুইচগেইট করে দিলেও অসুবিধা বেশি হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিএডিসি এমনকি পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
ফেনীস্থ বিএডিসির সহকারি প্রকৌশলী কামরুল হাসান বলেন, বিষয়টি নজরে আসায় পরিদর্শন করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তারা দ্রুত স্লুইচগেইট এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।