২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা নিয়ে উধাও ছাত্রলীগ নেতা!
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৩ ফেব্রুয়ারী,বৃহস্পতিবার,২০২৩ | আপডেট: ০২:৫১ পিএম, ২৪ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শান্ত কুমার রায় নামে এক ছাত্রলীগ নেতা নবীনগর উপজেলা থেকে প্রতারণা করে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে উধাও হয়েছেন।
শান্ত কুমার রায় নবীনগর উপজেলার বড়িকান্দি ইউনিয়নের থোল্লাকান্দি গ্রামের নির্মল রায়ের ছেলে। তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক উপ-সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
উপজেলার সলিমগঞ্জ ইউনিয়নের ৭ তরুণ মঙ্গলবার রাতে নবীনগর থানায় লিখিত অভিযোগে এমনটা উল্লেখ করেছেন। বিভিন্ন পাওনাদারের বক্তব্য অনুযায়ী, ধার ও সংগঠনে পদ দেয়ার নাম করে শান্ত রায় হাতিয়ে নিয়েছেন কমপক্ষে ২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।
অভিযোগকারীরা হলেন- বাড়াইল গ্রামের শ্যামল চন্দ্র দাস, হক সাব, আব্বাস উদ্দিন, সুজন মিয়া ও অক্লান্ত দেবনাথ, নিখলী গ্রামের খোরশেদ আলম এবং বড়িকান্দি গ্রামের ছগির আহমেদ।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্নজনের কাছ থেকে ধার হিসেবে শান্ত হাতিয়ে নিয়েছেন বিপুল টাকা। ধার নেয়ার সময় তিনি প্রত্যেককে এক বা দুই মাসের মধ্যে পুরো টাকা ফেরত অঙ্গীকার করেন। কিন্তু কারও টাকাই ফেরত দেননি তিনি।
তাদের মধ্যে শ্যামলের কাছ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি ৮ লাখ ৯০ হাজার, গত বছরের ১৬ জুলাই ছগিরের কাছ থেকে ১২ লাখ, ওই বছরের সেপ্টেম্বরে হক সাবের কাছ থেকে ৪০ লাখ, ২১ নভেম্বর আব্বাস উদ্দিনের কাছ থেকে ২০ লাখ ৬০ হাজার টাকা ধার হিসেবে নেন এই ছাত্রলীগ নেতা। এছাড়া গত জানুয়ারিতে সুজন মিয়ার কাছ থেকে ২০ লাখ, ৫ জানুয়ারি অক্লান্ত দেবনাথের কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা ও খোরশেদ আলমের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা ধার নেন শান্ত।
তারা টাকা ফেরত চাইলে শান্ত টালবাহানা শুরু করেন। এক পর্যায়ে সবার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। আর তিন/চারদিন আগে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা আত্মসাতের উদ্দেশে শান্ত ও তার বাবা নির্মল রায় আত্মগোপনে চলে যান।
শান্ত রায়ের পাওনাদারের তালিকা আরও দীর্ঘ। তাদের মধ্যে বড়িকান্দি ইউনিয়নের থোল্লাকান্দি গ্রামের বিকাশ ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলমের ৩৯ লাখ, আতিকুর রহমানের ৩ লাখ, মুক্তারামপুর গ্রামের শাহ জালালের ৫৩ লাখ, ধরাভাঙ্গা গ্রামের বাবলু মিয়ার ১১ লাখ, বাড়াইল গ্রামের মাহফুজুর রহমানের ৩ লাখ ও নরসিংদীর মুরাদনগরের বাদল মিয়ার কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে শান্ত ও তার বাবা নির্মল রায় লাপাত্তা।
ধার হিসেবে টাকা দিয়ে এসব ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি শান্ত ও তার বাবার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, সলিমগঞ্জ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ পাইয়ে দেয়ার কথা বলে রিফাত আহম্মেদ থেকে ৮ লাখ ও বড়িকান্দি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি পদ দেয়ার কথা বলে জাহিদুল ইসলামের কাছ থেকে ৩ লাখ নিয়েছেন শান্ত। মোজাম্মেল হক নামে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে নিয়েছেন ৩৫ লাখ টাকা। এসব হিসাব করলে শান্ত কমপক্ষে ২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা নিয়ে উধাও হয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, ক্ষমতাসীন দলের বড় নেতাদের সঙ্গে সেলফি তুলে এলাকায় নিজেকে প্রভাবশালী নেতা হিসেবে জাহির করতেন শান্ত। শনিবার ও রোববার অনেককে টাকা পরিশোধের কথা ছিল। তা না দিয়ে তিনি তার বাবাকে নিয়ে আত্মগোপন করেছেন। অনেকের ধারণা তারা ভারতে পালিয়ে গেছেন।
সলিমগঞ্জ বাজারের ঢাকা কনফেকশনারির স্বত্বাধিকারী বাবলু মিয়া বলেন, ‘শান্ত আমার কাছ থেকে ১১ লাখ টাকা নিয়েছেন। দোকান বাকি হিসেবে পাওনা রয়েছে আরও ২০ হাজার টাকা।
অভিযোগকারী মো. হক, সুজন মিয়া ও শ্যামল দাস বলেন, ‘শান্ত আমাদের বন্ধু। বিশ্বাস করতাম বলেই তাকে টাকা ধার দিয়েছিলাম।’
নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুউদ্দিন আনোয়ার বলেন, ‘ছয়জন লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে।’
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে শান্ত রায়ের মোবাইল ফোনে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে।