avertisements 2

সাত আসনে সন্তুষ্ট নয় ১৪ দল শরিকরা

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৬ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৩ | আপডেট: ০৮:৫১ এএম, ৪ মে,শনিবার,২০২৪

Text

জাতীয় নির্বাচনে ছাড় পাওয়া সাতটি আসন নিয়ে সন্তুষ্ট নয় ১৪ দলের শরিকরা। এ নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভ-অসন্তোষ দানা বাঁধছে। আসন বাড়ানোর বিষয়টি সুরাহা করতে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ফের বৈঠকের আহ্বানও জানিয়েছেন শরিক দলের নেতারা।

একই সঙ্গে সমঝোতার আসন থেকে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী সরিয়ে নেওয়ার দাবিতেও নিশ্চল তারা। ছাড় আসনে নৌকা প্রতীকে লড়লেও স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকাতে জয় পাওয়া কষ্টকর হবে– এমন শঙ্কা তাদের। এ অবস্থায় জোটের প্রধান শরিক আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আবারও আলোচনার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল শুক্রবার নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ১৪ দল শরিকদের সাত আসনের বেশি ছাড় দেওয়া সম্ভব নয়। এমনকি ছাড় দেওয়া আসন থেকে দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী সরিয়েও নেওয়া হবে না। মোট কথা, শরিক দলের প্রার্থীদের ভোটে লড়াই করেই জিতে আসতে হবে। আওয়ামী লীগ তাদের জয়ের গ্যারান্টি দেবে না।

ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যে শরিক দলে ক্ষোভ-অসন্তোষ আরও বেড়েছে। জোটের দুই শরিক দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ও জাতীয় পার্টি-জেপির নেতারা গতকাল শুক্রবার প্রকাশ্যে ক্ষোভ জানিয়েছেন। আরেক শরিক তরীকত ফেডারেশন সংবাদ সম্মেলন করে আসন বণ্টনের সমালোচনা করেছে। অবশ্য বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি সতর্ক প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে এ নিয়ে আরও আলোচনা হতে পারে বলে মত দিয়েছে। শরিক অন্য দলগুলো ‘চুপ’ থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও আওয়ামী লীগের পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানার অপেক্ষায় রয়েছে।

তিন দফা বৈঠকের পর বৃহস্পতিবার রাতে ১৪ দল শরিকদের জন্য সাতটি আসনে ছাড় দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আসনওয়ারি যাচাই-বাছাই ও জয়ের সম্ভাবনার বিচারে ওই সাতটি আসনে ছাড় দেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে দলীয় সূত্রগুলো জানায়। এর পর ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু শরিক দলের নেতাদের ফোন করে ছাড় দেওয়া সাতটি আসন ও এগুলোতে জোটগত মনোনয়নের কথাও জানান।গতকাল ওবায়দুল কাদেরও দু-একজন শরিক নেতার সঙ্গে টেলিফোনে এ নিয়ে কথা বলেছেন।

১৪ দলের শরিকদের জন্য যে সাতটি আসনে ছাড় দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টি তিনটি, জাসদ তিনটি এবং জাতীয় পার্টি-জেপির একটি আসন রয়েছে। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বরিশাল-২ (ঢাকা-৮ থেকে সরিয়ে), সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা রাজশাহী-২ ও পলিটব্যুরোর সদস্য অ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ সাতক্ষীরা-১, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু কুষ্টিয়া-২, স্থায়ী কমিটির সদস্য একেএম রেজাউল করিম তানসেন বগুড়া-৪ ও মোশারফ হোসেন লক্ষ্মীপুর-৪ এবং জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু পিরোজপুর-২ আসনে ছাড় পেয়েছেন। তবে এর আগে রাশেদ খান মেননকে বরিশাল-৩ আসনে ছাড় দেওয়ার কথা জানানো হয়েছিল। গতকাল রাতে জাতীয় পার্টির (জাপা) সঙ্গে বৈঠকে বরিশাল-৩ আসনটি তাদের ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। মেননকে দেওয়া হয় বরিশাল-২।

শরিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আসন বণ্টনের এ পরিস্থিতিতে জাসদ ও তরীকত ফেডারেশনই বেশি হতাশ। কেননা, একাদশ সংসদে দলের তিনটি আসনের বিপরীতে তিনটি আসনে ছাড় পেলেও বাদ পড়েছেন জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার। তাঁকে তাঁর ফেনী-১ আসনে ছাড় দেওয়া হয়নি। যদিও জাসদের আরেক নেতা মোশারফ হোসেনকে লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে ছাড় দিয়ে আসনসংখ্যা ঠিক রাখা হয়েছে। অন্যদিকে, তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীকে তাঁর চট্টগ্রাম-২ আসনে ছাড় দেওয়া হয়নি। আসনটির বর্তমান এমপি নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর বদলে তাঁর ভাতিজা ও নতুন নিবন্ধিত বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) চেয়ারম্যান শাহজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমেদ মাইজভান্ডারীকে ছাড় দেওয়ার কথা বলা হয়েছে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে।

এ ব্যাপারে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বৃহস্পতিবারই বিভিন্ন গণমাধ্যমের কাছে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন। গতকালও ইনু সমকালকে বলেছেন, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সাতটি আসনে ছাড় দেওয়ার যে কথা বলা হচ্ছে, সেটি ছিল প্রাথমিক প্রস্তাব। আমরা বিনয়ের সঙ্গে এই ‘অসম্পূর্ণ প্রস্তাব’ পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানাচ্ছি। কেননা ১৪ দল শরিকদের জন্য ছাড় দেওয়া আসন সংখ্যা আরও বাড়ানোর প্রয়োজন। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনার কথাও বলেছি।

একই সঙ্গে শরিক দলের প্রার্থীদের আসন থেকে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরও সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন জাসদের এই নেতা। তিনি জানান, আসন বণ্টনের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সরিয়ে নেওয়া না হলে দলীয়ভাবে বসে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে জাসদ।

তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর দাবি, আওয়ামী লীগের তরফ থেকে তাদের দুটি আসনে ছাড় দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের টেলিফোন করেও তাঁকে (মাইজভান্ডারী) চট্টগ্রাম-২ আসনে জোটের প্রার্থী করা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন। তারা এখন আওয়ামী লীগ প্রতিশ্রুত দুটি আসনেই নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে চান।

এদিকে, গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে ১৪ দলের শরিক গণআজাদী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে জাতীয় পার্টি-জেপির সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম ১৪ দলের আসন বণ্টনের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, আসন বণ্টনের ক্ষেত্রে ১৪ দলের শরিকদের প্রতি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হয়নি। এ ক্ষেত্রে শরিকদের প্রতি বৈষম্যমূলক একটি দৃষ্টিভঙ্গিও নেওয়া হয়েছে। আমরা জোটনেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আবেদন জানাব– তিনি যেন এই আসন বণ্টন পুনর্মূল্যায়ন করেন।

ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা গতকাল গণমাধ্যমকে বলেন, ওয়ার্কার্স পার্টিকে যে তিনটি আসনে ছাড় দেওয়া হয়েছে, সেগুলোতে স্বতন্ত্র প্রার্থীগত সমস্যা তেমন একটা নেই। তার পরও বিষয়টি নিয়ে শরিকদের সঙ্গে আরও আলোচনা হতে পারে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আসন বণ্টন প্রশ্নে ১৪ দল শরিকদের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। আগামী দিনেও আলোচনা চলবে। আলোচনার মাধ্যমে আমরা একটা সুন্দর জায়গায় পৌঁছতে পারব। এটি নিয়ে আমাদের মধ্যে সংশয়ও নেই।

আসন বণ্টন প্রশ্নে এর আগে গত ৪ ডিসেম্বর গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর শীর্ষনেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে জোটনেত্রী শেখ হাসিনা আসন বণ্টনের বিষয়টি সমন্বয় করতে চার সদস্যের লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করে দেন। পরদিন ৫ ডিসেম্বর লিয়াজোঁ কমিটি কয়েকজন শরিক নেতার সঙ্গে বৈঠক করে। তখন পর্যন্ত শরিকদের পাঁচটির বেশি আসনে ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানানো হয়। এর পর গত রোববার রাতে সংসদ ভবনের এমপি হোস্টেলে ১৪ দল শরিকদের সঙ্গে আরেক দফা বৈঠক করেন আসন সমঝোতায় দায়িত্ব পাওয়া আওয়ামী লীগ নেতারা।

এদিকে, শরিকদের ছাড় দেওয়া আসন থেকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সরিয়ে নেওয়া হলেও দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী না সরানোর আগের সিদ্ধান্ত বহাল রয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের স্বার্থে ছাড় পাওয়া আসনের বাইরে উন্মুক্ত আসনে শরিক দলগুলোকে দলীয় প্রতীক নিয়ে ভোটের মাঠে থাকার আহ্বানও জানানো হয়েছে।

তরীকত ফেডারেশনের সংবাদ সম্মেলন

আসন বণ্টন নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দলীয় বক্তব্য তুলে ধরতে গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডিতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে তরীকত ফেডারেশন। এতে দলের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, জোটের শরিকদের সাতটি আসনে নাম প্রকাশ করা হয়েছে, এটাই চূড়ান্ত নয়। আমরা জানি, আমরা আছি। আওয়ামী লীগকে বলব– প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তরীকত ফেডারেশনকে ওই দুটি আসনই দেন।

তিনি বলেন, কৌশলের কারণে সাতটা আসন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। আমারটা কেন দেয়নি, সেটা তারাই বলতে পারবেন। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন, সেটাই মেনে নেব।

চট্টগ্রাম-২ আসনে তাঁর ভাতিজা সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ মাইজভান্ডারীকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ছাড় দেওয়া হয়েছে– এ প্রশ্নে নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, এ বিষয়ে জোটের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু কিছু বলেননি। আওয়ামী লীগের অন্য সূত্র এটি বলতে পারে। তবে সুপ্রিম পার্টিকে ছাড় দেওয়া হলে সেটি রাজনীতির জন্য ভয়ংকর বার্তা হবে।

তিনি বলেন, জোটের মনোনয়ন যে কাউকে দিতে পারে, অসুবিধা নেই। তবে রাজনীতির বিবেক কোথায় যাবে? তিন মাস আগে নিবন্ধন পেয়ে কেউ যদি মূল্যায়িত হয়, তাহলে আমাদের মূল্যায়নের কী হবে? আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী সরিয়ে দেওয়ার কোনো দাবি তিনি করবেন না বলে জানান তরীকত ফেডারেশন চেয়ারম্যান।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2