avertisements 2

দলীয় প্রতীক পেতে তদ্বির করছেন অনেক নেতা

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১০ অক্টোবর,মঙ্গলবার,২০২৩ | আপডেট: ০৭:৪৭ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪

Text

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১, ১৭ ও ৪৩-৫৪ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৮ আসন। ঢাকার উত্তর প্রবেশমুখের এই আসন রাজনৈতিক-বাণিজ্যিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ আসনটিতে অপেক্ষাকৃত উচ্চ মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত শ্রেণির মানুষের বসবাস, যাদের সিংহভাগই ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। এ আসনটি গুরুত্বপূর্ণ ও ভিআইপি আসন। এটি জাতীয় সংসদের ১৯১তম আসন। ২০০১ সালের আদমশুমারির পরিসংখ্যান অনুযায়ী জনসংখ্যা বৃদ্ধির পর নির্বাচন কমিশন ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে জনসংখ্যার পরিবর্তন প্রতিফলিত করার জন্য সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে ঢাকা-১৮ আসনটি সৃষ্টি করে।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচনে এ আসনে ভোটার ছিলেন চার লাখ ৪২ হাজার ৪৬৮ জন। ভোট দেন তিন লাখ ৪২ হাজার ৬৪৫ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাহারা খাতুন বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান দুই লাখ ১৩ হাজার ৩১৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আজিজুল বারী  হেলাল।

ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান এক লাখ ১৬ হাজার ৪৮১ ভোট। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের সাহারা খাতুন বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেনি। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের সাহারা খাতুন ধানের শীষ প্রতীকের আসম রবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জেএসডির শহীদ উদ্দীন মাহমুদকে হারিয়ে বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান তিন লাখ তিন হাজার ৯২ ভোট। জেএসডির শহীদ উদ্দীন মাহমুদ ধানের শীষ প্রতীকে পান মাত্র ৭২ হাজার ১৫০ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফল প্রত্যাখ্যান করে। ২০২০ সালের ৯ জুলাই সংসদ সদস্য সাহারা খাতুন মৃত্যুবরণ করেন। পরে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ হাবিব হাসান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

ঢাকা-১৮ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ হাবিব হাসান দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও মনোনয়ন চাইবেন। হাবিব হাসান ছাড়াও মনোনয়ন চাইবেন দক্ষিণখানের সাবেক চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন, আওয়ামী লীগের খোরশেদ চৌধুরী, যুব মহিলা লীগের সভাপতি ও সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নাজমা আকতার, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের, বিমানবন্দর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. শাহাজান আলী মন্ডলসহ ডজনখানেক নেতা।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন ২০২০ সালের উপনির্বাচনের প্রার্থী যুবদলের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কফিল উদ্দিন আহমেদ ও মোস্তফা জামান। এ তিনজনই মনোনয়নের জন্য জোর তদ্বির করছেন। মোস্তফা জামান বলেছেন, দলের দুর্দিনের স্বীকৃতি দিতে হলে যোগ্য ও পরীক্ষিত নেতাকেই বেছে নিতে হবে। স্থায়ী বাসিন্দা মোস্তফার রয়েছে পারিবারিক প্রভাব। দলের সাংগঠনিক কর্মকান্ডে তিনি বিগত ২০ বছর ধরেই সক্রিয়।

জাতীয় পার্টি (জাপা) থেকে মনোনয়ন চাইবেন প্রেসিডিয়াম সদস্য চিত্রনায়ক সোহেল রানা (মাসুদ পারভেজ), উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের সহধর্মিণী শেরিফা কাদের ও যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন মৃধা, উপনির্বাচনের প্রার্থী হাজী নাসির উদ্দিন সরকার।

জানা গেছে, এই আসনটি ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের আগে সৃষ্টি হয়। ওই বছর অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে প্রথম সংসদ সদস্য হয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হন অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন। পরবর্তীতে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এই পরিসংখ্যান থেকে এটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি বলে মনে হতে পারে! কিন্তু আড়ালে অন্য কিছু। বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম দৃশ্যমান না হলেও বিএনপিও কম শক্তিশালী নয়। সম্প্রতি বিএনপি এক দফা এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে নিয়ে মাঠে নেমেছে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক তৎপরতা শক্ত হলেও দলীয় কোন্দল তীব্র। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এই মতবিরোধ চোখে পড়ে। বিএনপিতে গ্রুপিং আরও বেশি। সেদিক থেকে বিএনপি-আওয়ামী লীগ উভয় দলই অস্বস্তিতে।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন কে পেতে পারেন জানতে চাইলে বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী জানিয়েছেন, বর্তমান এমপি হাবিব হাসানের সম্ভাবনা রয়েছে যথেষ্ট। তবে তিনি যদি না পান, তা হলে ধরে নিতে হবে এবার বহিরাগত আসার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও এলাকার তোফাজ্জল ও খসরু চৌধুরীর সমর্থকরা মনে করছেন, নতুন মুখ হিসেবে তারাই এবার পেয়ে যেতে পারেন নৌকার মনোনয়ন।

সরেজমিন দেখা যায়, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে ভোটের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা)। তবে বিএনপি প্রকাশ্যে সরব না হলেও ভেতরে ভেতরে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা তৎপর রয়েছে কৌশলী জনসংযোগে।

বর্তমান এমপি হাবীব হাসান ছাড়াও এ আসনে আরও দুজন শক্তিশালী মনোনয়নপ্রত্যাশী এবার কোমর বেঁধেই মাঠে নেমেছেন। তারা হলেন- দক্ষিণখানের সাবেক চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন ও  ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক  মো. খসরু  চৌধুরী সিআইপি। দুজনই এ আসনে নৌকার প্রার্থী হচ্ছেন এমন আলোচনা চলছে সর্বত্র।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমান এমপি হাবিব হাসান এবারও মনোনয়নের ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদী। তার অনুসারীরা মনে করেন হাবিব হাসানকে মনোনয়ন দেওয়া হলে তিনি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবেন। উত্তরার স্থানীয় বাসিন্দা হিসেবে তার পারিবারিক ইমেজ ও সাংগঠনিক প্রভাবে প্রার্র্থী হিসেবে তিনিই শক্তিশালী বলে মনে করেন তার সমর্থকরা।

তবে তোফাজ্জল হোসেনেরও রয়েছে ব্যাপক পারিবারিক প্রভাব। তার বড় ভাই মুক্তিযুদ্বের গ্রুপ কমান্ডার এসএম মোজাম্মেল হক ছিলেন দক্ষিণখান ইউনিয়নের ২৭ বছরের চেয়ারম্যান। নিজ বাড়ির সামনে সাত বিঘা জমিতে গড়ে তুলেছেন ইউনিভার্সিটি ও স্কুল-কলেজ। এ ছাড়া গড়ে তুলেছেন অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মাদ্রাসা ও সাংস্কৃতিক সংঘ। আওয়ামী লীগের দুর্দিনে তিনি জেল-জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েও দলকে উজ্জীবিত রেখেছেন। দক্ষিণখান থানায় তার নিজস্ব ভোট ব্যাংক থাকার কথা উল্লেখ করে তোফাজ্জল হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, দলের দুর্দিনে ছিলাম। কিন্তু সুদিনে কোনো সুবিধা নেওয়ার জন্য কারও কাছে ধরনা  দেইনি। দলের জন্য আত্মনিয়োগ করেছি, বাকি জীবনও তাই করব।

এলাকাবাসী জানায়, তোফাজ্জল হোসেন ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রতাবর্তনের দিন বিমানবন্দরে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে অভ্যর্থনা জানান। তিনি বর্তমানে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।

আওয়ামী লীগের মনোননয়প্রত্যাশী হিসেবে মো. খসরু চৌধুরী গত কয়েক বছর ধরেই বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত গণসংযোগ, পথসভা ও উঠান বৈঠক করছেন। বৃহত্তর উত্তরা থানা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উত্তরখান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান মিলন বলেন, এক যুগেরও বেশি সময় ধরে খসরু চৌধুরী ঢাকা-১৮ আসনের মানুষের দুঃখ-দুর্দশা দূর করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিটি শাহাদাত বার্ষিকীতে তিনি মাসব্যাপী আলোচনা সভা ও খাবার বিতরণের কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। প্রতিবছর শীতে তার পক্ষ থেকে এ আসনের সাতটি থানা ও ১৪টি ওয়ার্ডের হাজার হাজার পরিবারের মাঝে কম্বল বিতরণ করেন। নিজস্ব অর্থায়নে স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল করে মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন। দক্ষিণখান ও উত্তরাখানে তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে ৩০ হাজারেরও অধিক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2