avertisements 2

কোনো অবস্থাতেই ছাড় দেবে না আ.লীগ

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৩১ জুলাই,সোমবার,২০২৩ | আপডেট: ০৯:০১ এএম, ৩ মে,শুক্রবার,২০২৪

Text

বিএনপি ও তার মিত্রদের আন্দোলনে কোনো অবস্থায়ই ছাড় দেবে না আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে শনিবার বিএনপির ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি ঘিরে ব্যাপক সহিংসতা, গাড়ি ভাঙচুর ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনার পর আরও কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দল। বিএনপির আন্দোলন কর্মসূচির দিনে পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে শান্তি সমাবেশ চলবে। নাশকতা-নৈরাজ্য মোকাবিলায় রাজপথে সতর্ক অবস্থানও বহাল থাকবে। একই সঙ্গে চলবে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি।   

বিএনপির অবস্থান কর্মসূচির দিনে দলটির দুই নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও আমান উল্লাহ আমানের ওপর হামলার পর ডিবি কার্যালয়ে গয়েশ্বরকে পুলিশের আপ্যায়ন এবং হাসপাতালে আমানকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ফলমূল ও ফুল পাঠানোর ঘটনায় সরকারপক্ষের নমনীয় মনোভাবের ইঙ্গিত কিনা– এ প্রশ্নও উঠেছে রাজনৈতিক মহলে। তবে সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক নেতারা বলছেন, এটি রাজনীতিতে সহমর্মিতা ও সহানভূতির পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মহানুভবতার পরিচায়ক হলেও এর সঙ্গে বিএনপির সন্ত্রাসনির্ভর আন্দোলনকে ছাড় দেওয়ার বিষয় নেই। গত ডিসেম্বরে বিএনপির আন্দোলন কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর থেকে যে ধরনের কঠোর মনোভাব দেখানো হয়েছে, তা অব্যাহত থাকবে। এ ছাড়া ২০১৩-১৫ সালের মতো আন্দোলন অগ্নিসন্ত্রাসে রূপ নিলে আরও কঠোর অবস্থান নেবে সরকার।

পুলিশের অনুমতি না পেলেও শনিবার ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে গেছে বিএনপি। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পূর্বঘোষিত শান্তি সমাবেশ কর্মসূচি আগের দিন গভীর রাতে প্রত্যাহার করেছিল আওয়ামী লীগ। এর পরও বিএনপির কর্মসূচি ঘিরে সন্ত্রাস-সহিংসতার আশঙ্কা থেকে গাবতলী, আমিনবাজার, যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা, দনিয়া, উত্তরা, টঙ্গীসহ কয়েকটি পয়েন্টে রাস্তার পাশে সতর্ক অবস্থান ছিল সরকার সমর্থকদের।

সূত্র জানায়, বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি ঘিরে দিনভর নজরদারি ছিল আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক নেতাদের। ওই দিন সকাল থেকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কার্যালয়ে অবস্থান করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। দুপুর পর্যন্ত বিএনপির অবস্থান ঘিরে নাশকতা, গাড়ি ভাঙচুর ও বাস জ্বালানোর খবর আসায় বিকেলেই দল ও সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা ছাড়াও ঢাকা মহানগরীর সরকারদলীয় এমপিদের সঙ্গে জরুরি যৌথ সভা ডাকেন ওবায়দুল কাদের। ওই সভা থেকে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে রোববার আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।  

এ ছাড়া শনিবার এক ব্রিফিংয়ে ওবায়দুল কাদের বিএনপির নাশকতার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের ইঙ্গিত দেন। তিনি বলেন, আমরা যেটা আশঙ্কা করেছি, সেটাই হয়েছে। তাদের আন্দোলনের এক দফা– অগ্নিসন্ত্রাস। এটাই করতে চেয়েছিল বিএনপি। কিন্তু আওয়ামী লীগের শক্ত অবস্থানের কারণে বড় ধরনের নাশকতা ও বিশৃঙ্খলা করতে পারেনি। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন– আন্দোলনের নামে বিএনপির অগ্নিসন্ত্রাসের পাঁয়তারা কঠোরহস্তে দমন করা হবে। 

শান্তি সমাবেশ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেছেন, নির্বাচনী প্রচার ও কৌশলের অংশ হিসেবেই জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে সমাবেশ করছে আওয়ামী লীগ। একই সঙ্গে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েও তারা কাজ করছেন। শান্তি সমাবেশ বা শোভাযাত্রা– এগুলোর ভেতর দিয়েই রাজনৈতিকভাবে দল ও সরকারের কর্মকাণ্ড তুলে ধরছেন তারা। এটা নির্বাচনের কৌশল। এটা কারও বিরুদ্ধে নয়; কাউকে ঠেকানোর জন্যও নয়।

এদিকে বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবির প্রতি বিদেশিদের সমর্থন না মেলায় স্বস্তিতে রয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তারা মনে করছেন, বিদেশিদের চাপ মূলত নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা তা নিয়ে। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কথা বলছে না, বলবেও না। কোন সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে, তা নিয়ে বিদেশি চাপ নেই। আওয়ামী লীগ এখন গুরুত্ব দিচ্ছে, আগামী নির্বাচন যে সুষ্ঠু হবে, বিদেশি রাষ্ট্রগুলোকে তা বোঝানোর ওপর। একই সঙ্গে বিএনপির আন্দোলনের সহিংসতা ও সন্ত্রাসের দিকগুলো বিদেশিদের কাছে তুলে ধরার প্রচেষ্টাও রয়েছে দলটির মধ্যে। একটি সূত্র জানিয়েছে, শনিবারের সহিংসতার ভিডিও চিত্র এরই মধ্যে বিদেশি দূতাবাস ও রাষ্ট্রদূতদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্ট উইংয়ের নেতারা।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিদেশিরা কখনোই তত্ত্বাবধায়ক বা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের কথা বলে না। সেটা তারা আইন অনুযায়ী বলতেও পারে না। বাংলাদেশে সংবিধানের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বলেন, বিদেশিরা সুষ্ঠু নির্বাচন চায়, আমরাও চাই। আমাদের সঙ্গে বিদেশিদের কথার কোনো পার্থক্য নেই। নির্বাচন হবে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করে। দলের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বিদেশিদের পদক্ষেপে দল, সরকার, বিশেষত কর্মীদের মনোবলে যেন প্রভাব না পড়ে, সে বিষয়েও দৃষ্টি রাখছে আওয়ামী লীগ।

বিএনপির আন্দোলন ও নির্বাচন প্রশ্নে বিদেশিদের ‘প্রচ্ছন্ন চাপ’ মোকাবিলার কৌশলের পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতিও পুরোদমে চলছে আওয়ামী লীগে। আগামী ২ আগস্ট রংপুরে বিভাগীয় মহাসমাবেশে যোগদানের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা মূলত নির্বাচনী অভিযাত্রা শুরু করছেন বলেই মনে করা হচ্ছে। রংপুরের পর দেশের অন্য বিভাগ ও জেলাগুলোতেও মহাসমাবেশ ও জনসভার মতো কর্মসূচি রাখবেন শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগ এরই মধ্যে তৃণমূলে কর্মসূচি বাড়ানো এবং তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু ও তৃণমূলকে নির্বাচনমুখী করার লক্ষ্যে এটি করা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবেই ৬ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে তৃণমূল নেতাদের নিয়ে বিশেষ বর্ধিত সভা ডেকেছে দলটি। বর্ধিত সভা থেকেই তৃণমূলে নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরুর দিকনির্দেশনা দেবেন শেখ হাসিনা। শোকের মাস আগস্ট শেষে আগামী সেপ্টেম্বরে সর্বাত্মক নির্বাচনী কর্মযজ্ঞ শুরুর কথাও জানিয়েছেন শেখ হাসিনাসহ দলটির নীতিনির্ধারক নেতারা।

একই সঙ্গে ১৪ দল ও মহাজোটের শরিক দলগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ বাড়িয়েছে আওয়ামী লীগ। সম্প্রতি গণভবনে ১৪ দলের শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জোটের প্রধান নেতা শেখ হাসিনা। সেখানে আগামী নির্বাচন ১৪ দলগতভাবে করার ঘোষণা পুনর্ব্যক্ত করার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, ১৪ দলের বাইরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তিকে নিয়ে আরেকটি জোট করা হবে, যারা নির্বাচন ও সরকারবিরোধীদের আন্দোলন মোকাবিলায় আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের পাশে থাকবে।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2