avertisements 2

টানা কর্মসূচিতে যাচ্ছে বিএনপি

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৫ জুলাই,মঙ্গলবার,২০২৩ | আপডেট: ০৭:৫২ এএম, ৪ মে,শনিবার,২০২৪

Text

এক দফা দাবি মানতে সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে টানা কর্মসূচিতে যাচ্ছে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী দলগুলো। আগামী ২৭ জুলাই ঢাকার মহাসমাবেশ থেকে এই আলটিমেটাম দেয়ার কথা সক্রিয়ভাবে ভাবা হচ্ছে। একই সাথে বেঁধে দেয়া সময় শেষে ৩০ জুলাই থেকে রাজধানীতে নানামুখী লাগাতার কর্মসূচি পালনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বিএনপি ও যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সাথে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

গত ১২ জুলাই নয়াপল্টনের সমাবেশ থেকে ১৮ ও ১৯ জুলাই ঢাকাসহ দেশব্যাপী দুই দিনের পদযাত্রার কর্মসূচি ঘোষণার মধ্য দিয়ে সরকারের পদত্যাগের একদফার আন্দোলনে নামে বিএনপি। এর পর ২২ জুলাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যোনে তারুণ্যের সমাবেশ থেকে ২৭ জুলাই ঢাকায় মহাসমাবেশের ঘোষণা দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল। ওই দিন যুগপতের শরিক দল ও জোটগুলোও ঢাকায় পৃথকভাবে মহাসমাবেশ ডেকেছে ।

জানা গেছে, বিএনপি এক দফার চলমান আন্দোলন কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে নিয়ে যেতেই মহাসমাবেশ ডেকেছে। সরকার ‘নির্বাচনী সঙ্কট’ সমাধানে আগ্রহী নয় ধরে নিয়েই দলটি আন্দোলন পরিকল্পনা এখন রাজপথে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়ে এগুচ্ছে। বিএনপি তাদের শরিকদের সঙ্গে মহাসমাবেশ থেকে এক দফার নতুন কর্মসূচি নিয়ে ইতোমধ্যে আলোচনা করেছে। সেখানে দাবি আদায়ে সরকারকে আলটিমেটাম দেয়ার বিষয়টি এসেছে বলে জানা গেছে । নেতারা মতামত দিয়েছেন, দাবি মানতে সরকারকে কিছু সময় দেয়া দরকার। সরকার এই সময়ের মধ্যে সাড়া দিলে ভালো, অন্যথায় তখন দাবি আদায়ে টানা কর্মসূচিতে যেতে হবে। বিএনপির নীতি-নির্ধারকরাও টানা আন্দোলনে যাওয়ার আগে আলটিমেটামের কথা ভাবছেন।

জানা গেছে, মহাসমাবেশ থেকে দুই দিনের আলটিমেটাম দিয়ে ৩০ জুলাই রোববার থেকে ঢাকায় টানা কর্মসূচিতে যেতে পারে বিএনপি। এই কর্মসূচির মধ্যে থাকতে পারে বিক্ষোভ, সমাবেশ, অবস্থান ও ঘেরাও। আগস্টের ১০ তারিখ পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলতে পারে। এই সময়ের মধ্যে ঢাকায় একই দিন একাধিক স্থানে সমাবেশের কর্মসূচি আসতে পারে। তবে ১৫ আগস্টের জাতীয় শোকদিবসের কারণে এক দফার কর্মসূচি সাময়িক স্থগিত রাখবে বিএনপি ও যুগপতের শরিকরা। এই সময়ের মধ্যেও ক্ষমতাসীনরা সাড়া না দিলে পরবর্তীতে ২০ আগস্ট থেকে ফের লাগাতার কর্মসূচিতে যাবে বিএনপি, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত যা অব্যাহত থাকবে। এই সময়ে ঢাকায় ঘেরাওয়ের সঙ্গে টানা অবস্থানের কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলনকে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে নিয়ে যেতে চায় দলটি।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আন্দোলন প্রসঙ্গে বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত যতগুলো আন্দোলন করেছি, প্রতিটি আন্দোলন শান্তিপূর্ণ হয়েছে। এক দফার আন্দোলন ঘিরে আমাদের দু’জন লোক নিহত হয়েছেন, ৯ হাজার মিথ্যা মামলা করেছে, তারপরও আমরা শান্তিপূর্ণভাবে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। আগামীতেও আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করব।
এ দিকে ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অথবা নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ করতে গতকাল সোমবার পুলিশকে চিঠি দিয়েছে বিএনপি। ডিএমপি কমিশনার বরাবর পাঠানো চিঠিতে উল্লেখিত দুটি স্থানের যেকোনো একটিতে মহাসমাবেশ করার কথা জানানো হয়েছে।

ঢাকার এই মহাসমাবেশ ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি শুরু করেছে বিএনপি। দফায় দফায় মিটিং করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। এর অংশ হিসেবে গতকাল নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপি, কেন্দ্রীয় অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন ও ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের নিয়ে যৌথ সভা করেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ ছাড়া মহাসমাবেশ সফলে প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ, পার্শ্ববর্তী সব জেলাসহ দলের সব সাংগঠনিক ইউনিট থেকে নেতা-কর্মীদের আনার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ঢাকার মহাসমাবেশ থেকে কী বার্তা দেয়া হবে- জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল ইসলাম জানান, বার্তা একটাই- পদত্যাগ। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারের পদত্যাগ নিশ্চিত করা হবে।
জানা গেছে, বিএনপি কর্মসূচি ঘোষণা করে নিজে থেকে কোনো সংঘর্ষে জড়াতে চায় না। তবে রাজপথে শক্তভাবেই শেষ পর্যন্ত থাকতে চায় তারা।

বিএনপির নীতি-নির্ধারকরা সরকারের সাম্প্রতিক মনোভাব মূল্যায়ন করেছেন। দলটির মতে, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারের ন্যূনতম কোনো সদিচ্ছা নেই। বরং তারা আরেকটি ‘একতরফা’ নির্বাচনের দিকেই হাঁটছে। এ অবস্থায় বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকেও রাজপথের আন্দোলন দ্রুত সময়ের মধ্যে তুঙ্গে নেয়া ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই। জানা গেছে, দুই দিন পরে ঢাকায় যে মহাসমাবেশ ঢাকা হয়েছে, সেই সমাবেশে বাধা দেয়া হলে বিএনপির কর্মসূচি যেকোনো দিকে টার্ন নিতে পারে। বিএনপির নেতৃত্ব মূলত এবার বৃহৎ আন্দোলনের ক্ষেত্র হিসেবে একমাত্র ঢাকাকে গুরুত্ব দিচ্ছে। সেই ভাবেই গত কয়েক মাস ধরে দলকে নানাভাবে সংগঠিত করার চেষ্টা হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গত এক মাস অন্যসব কর্মসূচির মধ্যেই রুদ্ধদ্বার বিভাগীয় বৈঠক করেছেন। যেখানে বিগত নির্বাচনের প্রার্থীরা ছাড়াও জেলার শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এসব বৈঠকে প্রতিটি জেলা থেকে ঢাকার কর্মসূচিতে লোক সমাগম ঘটানোর কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিএনপির নীতি-নির্ধারকদের চিন্তা অনুযায়ী, ঢাকায় লাগাতার বৃহৎ কর্মসূচির মধ্য দিয়েই আন্দোলনকে তারা চূড়ান্ত সফলতার দিকে নিয়ে যেতে চান। এ জন্য প্রতিটি কর্মসূচিতে সমাগমও ঘটানো হবে ব্যাপকভিত্তিতে।

গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক আন্দোলনের পরবর্তী লক্ষ্য সম্পর্কে বলেন, এই সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের রাস্তা খুলে দিতে হবে। এ জন্য মহাসমাবেশ ডাকা হয়েছে। কিন্তু সরকার যদি সেটা না করে, তাহলে আমরা ধারাবাহিক আন্দোলনে যাব। এরপর বিরোধী দলের জন্য রাজপথে থাকা ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই। তিনি আরও বলেন, মহাসমাবেশের দিনটি বৃহস্পতিবার হওয়ায় দাবি মেনে নিতে সরকারের জন্য ৪৮ ঘণ্টার একটা সময়সীমা নিশ্চয় থাকবে। যাতে ওই সময়ের মধ্যে সরকার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন- কখন, কীভাবে পদত্যাগ করবেন এবং আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে কীভাবে একটি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করবেন।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2