avertisements 2

রাজপথে ‘দৃঢ় অবস্থানে’ ছাড় দেবে না আওয়ামী লীগ

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৯ জুন,বৃহস্পতিবার,২০২৩ | আপডেট: ০৯:৪১ পিএম, ১৮ মে,শনিবার,২০২৪

Text

জাতীয় নির্বাচনের বাকি আর ছয় মাস। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনে অনড় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনে রয়েছে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো। রাজনীতির মাঠে চলছে হুমকি-পাল্টা হুমকি। পাল্টাপাল্টি সভা-সমাবেশের মাধ্যমে চলছে মাঠের লড়াই। এ পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক মহলে অভিন্ন প্রশ্ন– ঈদের পর কোন পথে যাবে দেশের রাজনীতি?

আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী দলগুলোর কর্মসূচিকে আর হালকাভাবে নিচ্ছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে রাজপথে বিরোধীদের মোকাবিলায় আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কৌশল কী হবে তা এখনও চূড়ান্ত নয়। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বলছেন, বিরোধী দলগুলোর কর্মসূচির পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে মাঠ দখলে রাখার চেষ্টা থাকবে তাঁদের। 

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, ঈদের ছুটি শেষে জুলাই মাসটি দেশের রাজনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। কারণ, এই মাসে নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনীতির গতি-প্রকৃতির দ্রুত পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জুলাইয়ে অবশ্য আওয়ামী লীগের তেমন কোনো বড় কর্মসূচি নেই। কিন্তু আগস্টজুড়ে নানা কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত রয়েছে দলটির। এর পর সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে শুরু হবে নির্বাচনী ডামাডোল।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, বিএনপি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত ওই অবস্থান ধরে রাখতে পারবে না। সদ্য সমাপ্ত পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন তার বড় প্রমাণ। বিএনপি এই নির্বাচন বর্জন করে অংশগ্রহণকারীদের দল থেকে বহিষ্কার করলেও দলের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতা কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছেন। গাজীপুর, বরিশালসহ একাধিক সিটিতে মেয়র পদেও বিএনপি নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেন। এ অবস্থায় ধারণা করা হচ্ছে, আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যা বাড়বে। ফলে নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তে থাকা বিএনপির জন্য কঠিন হবে।     

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতারা বলছেন, বিরোধীদের আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি দেখে তাঁরা কৌশল ঠিক করবেন। বিদ্যমান সাংবিধানিক কাঠামোয় বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে প্রয়োজনে রাজপথেও কিছুটা ছাড় দেওয়া হবে। তবে সব সিদ্ধান্ত হবে অবস্থা বুঝে। 

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, ‘বিএনপি দেশের একটি বড় রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগ তাদের বাদ দিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে চায় না।’ তিনি বলেন, ২০১৪ সালে নেতৃত্বের ভুল সিদ্ধান্তে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২০১৮ সালে একই আসনে তিন-চারজন প্রার্থী দিয়ে তারা মনোনয়ন বাণিজ্য করেছে।’

বিএনপি-জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীরা ভেতরে ভেতরে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে মনে করেন মুহাম্মদ ফারুক খান। তিনি বলেন, ‘আন্দোলন করে দাবি আদায় হবে না–এটা বিএনপিও জানে। নেতাকর্মীর মনোবল চাঙ্গা রাখতেই তারা মাঠ দখলের চেষ্টা করছে। কিন্তু সেই সুযোগ দেওয়া হবে না।’

ফারুক খান বলেন, ‘নির্বাচনের আর কয়েক মাস বাকি। এই সময়ে বিএনপির কর্মসূচিকে হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। এ কারণে আওয়ামী লীগ নিজের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে। তবে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আওয়ামী লীগের অনেক নেতা মনে করেন, সরকারবিরোধী শক্তি হিসেবে বিএনপি ও জামায়াতের সাংগঠনিক শক্তি ভালো। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে জামায়াতকে বাদ দিয়ে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জোট গঠন নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের  মধ্যে এখনও সম্পর্ক খানিকটা শীতল। আর ওই সুযোগ কাজে লাগাতেই নির্বাচনের আগে জামায়াতকে কর্মসূচি পালনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য সমকালকে বলেন, রাজপথে নামতে না পেরে জামায়াতের কর্মী-সমর্থকরা বিএনপির কর্মসূচিতে যাচ্ছিলেন। তা ছাড়া জামায়াতের সংস্কারপন্থি অংশই এখন দলটির নেতৃত্বে। আজ হোক, কাল হোক– তাদের কর্মসূচি পালনের সুযোগ দিতেই হতো।

বিরোধীদের আন্দোলন সম্পর্কে আওয়ামী লীগের ওই নেতা বলেন, নেতৃত্বের দুর্বলতার কারণে বিএনপির আন্দোলন খুব একটা গতি পাবে বলে তাঁরা মনে করছেন না। তার পরও মার্কিন ভিসা নীতি নিয়ে এক ধরনের ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা  রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যেও এ নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। তবে এই পরিস্থিতি জুলাইয়ের মধ্যেই কেটে যাবে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ মনে করছেন, বিরোধীদের আন্দোলনের হুমকি কার্যকর কিছু হবে না। তাঁর মতে,  ‘২০১৩ সাল থেকে তারা আন্দোলন করছে। সরকার পরিস্থিতি সামাল দিয়ে এসেছে। এখন বিএনপি কতটুকু কী করতে পারবে, সে ধারণা আওয়ামী লীগের রয়েছে।’ বিএনপির নেতৃত্বে দুর্বলতার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, “খালেদা জিয়া এখন ‘খাঁচায় বন্দি বাঘ’। আর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ‘দেশান্তরী পলাতক আসামি’।’’

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপি মহাসচিব ও দলের অন্যান্য নেতৃত্ব কতটুকু কী করতে পারে এবং সে ক্ষেত্রে কী করতে হবে– সেটা আমাদের জানা আছে। তাদের শক্তি-সামর্থ্য সম্পর্কেও আমরা জানি। কর্মসূচি-আন্দোলনের কথা বিএনপির বাগাড়ম্বর ছাড়া অন্য কিছু নয়।’ 

বর্তমান সরকারকে হটিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানে আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে বিএনপি। পাশাপাশি আদালতের রায়ে নিবন্ধন হারানো জামায়াতে ইসলামীও পৃথক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে যাচ্ছে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘বিএনপির নেতৃত্বে আন্দোলন করে সরকার পতন ঘটানোর বাস্তবতা নেই। তবে আওয়ামী লীগ যে কোনো পরিস্থিতি রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করবে।’ তিনি বলেন, ‘বিরোধীদের মোকাবিলায় রাজনীতির মাঠ দখলে রাখার প্রস্তুতি আওয়ামী লীগের রয়েছে।’

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, দেশের নির্বাচনী রাজনীতিতে সভা-সমাবেশ ও কর্মসূচি দিয়ে রাজপথ দখলে রাখা একটি কৌশল। বিএনপি বড় কর্মসূচি দিলে আওয়ামী লীগও সভা-সমাবেশের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবে। কারণ এসব কর্মসূচির প্রভাব ভোটের রাজনীতিতে পড়ে। এর আগে বিএনপি যতবারই বড় কর্মসূচি ঘোষণা করে, ততবারই আওয়ামী লীগ বা তার সহযোগী সংগঠন পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে মাঠ দখলের চেষ্টা করেছে। পরিস্থিতি যাই হোক, আগামীতেও তার ব্যত্যয় হবে না। কারণ সংসদ নির্বাচনের বেশিদিন বাকি নেই।

দলটির সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও বলেছেন, ‘আগামী নির্বাচন পর্যন্ত শান্তি সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ রাজপথ দখলে রাখবে।’

নির্বাচন কমিশন ঘোষিত রোডম্যাপ বা কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী নভেম্বরে ঘোষণা করা হবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তপশিল। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ অথবা ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে হবে ভোট।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2