avertisements 2

ভারতের আদালতে খালাস পেয়ে ৮ বছর পর দেশে ফেরার অপেক্ষায় বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৩ এপ্রিল,সোমবার,২০২৩ | আপডেট: ০৭:৩১ পিএম, ৫ মে,রবিবার,২০২৪

Text

অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে আট বছর ধরে ভারতের জেলে ও জামিনে ছিলেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। অভিযোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার পর মেঘালয় রাজ্যের শিলং শহরে অবস্থানরত এই নেতা দেশে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

কিন্তু কবে, কীভাবে তিনি দেশে ফিরবেন তা বাংলাদেশে ও ভারতের সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো নিশ্চিত করতে পারেনি। তবে যে কোনো মুহূর্তে দেশে ফিরবেন বলে শিলং থেকে বৃহস্পতিবার বেনারকে জানিয়েছেন সালাহউদ্দিন আহমেদ।

“আমাকে বাংলাদেশে ডিপোর্ট করতে ভারত সরকারের প্রতি আদেশ দিয়েছেন আদালত। আমি দেশে ফেরার অপেক্ষায়, যে কোনো মুহূর্তে দেশে ফিরব,” বেনারকে বলেন সালাহউদ্দিন।

তিনি জানান, “ভারত ও বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ আলোচনা করে আমাকে ডিপোর্ট করার ব্যবস্থা করবে।”

বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ. কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা বেনারকে বলেছেন, সালাহউদ্দিন আহমেদের প্রত্যর্পণের ব্যাপারে তাঁরা এখনও কিছু জানেন না।

এদিকে দলের কেন্দ্রীয় এই নেতাকে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৃহস্পতিবার বিকেলে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই আহ্বান জানান।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জয়লাভের পর ওই বছরের ১২ জানুয়ারি টানা দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিএনপি-জামায়াত অনির্দিষ্টকালের অবরোধ শুরু করে, যা চলে টানা ৯২ দিন।

সরকারের তথ্য অনুযায়ী, অবরোধ চলাকালে বিএনপি-জামায়াতের তাণ্ডব ও হত্যাযজ্ঞ চলে। এসময় পেট্রোলবোমায় ২৩১ জন নিহত এবং ১ হাজার ১৮০ জন আহত হন। ২ হাজার ৯০৩টি গাড়ি, ১৮টি রেল গাড়ি ও ৮টি লঞ্চে আগুন দেয়া হয়। টার্গেট করে ৭০টি সরকারি অফিস ও স্থাপনা ভাঙচুর এবং ৬টি ভূমি অফিস পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

এসব সহিংসতায় জড়িত অভিযোগে পুলিশ বিএনপি-জামায়াতের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের আটক করতে শুরু করে। সেই সময় সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমেদ অজ্ঞাত স্থান থেকে অনলাইনে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করতেন। তিনি দলের মুখপাত্র হয়ে ওঠেন।

সালাহউদ্দিনকে গুম করা হয়: মির্জা ফখরুল

সালাহউদ্দিন আহমেদের নিখোঁজ হওয়ার বর্ণনা দিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “২০১৫ সালের উত্তাল সরকারবিরোধী আন্দোলনকে দমানোর জন্য ১০ মার্চ রাতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে সাদা পোশাকে কিছু সশস্ত্র ব্যক্তি উত্তরার এক বন্ধুর বাসা থেকে সালাহউদ্দিন আহমেদকে তুলে নিয়ে যায় এবং দীর্ঘ ৬১ দিন অজ্ঞাত স্থানে তাঁকে গুম করে রাখা হয়।”

“১০ মে চোখ বাঁধা অবস্থায় একটি গাড়িতে করে তাঁকে দীর্ঘ পথযাত্রা করিয়ে ১১ মে ভোররাতে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলংয়ের গলফ লিংক রাস্তার ওপর ফেলে রেখে যায়। কিছুক্ষণ পর সালাহউদ্দিন আহমেদ নিজেই চোখ খুলে স্থানীয় পথচারীদের সহায়তায় শিলং পুলিশের কাছে তাঁর পরিচয় এবং বিস্তারিত ঘটনা তুলে ধরেন। ভারতের পুলিশ অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করে,” বলেন তিনি।

ফখরুল বলেন, “ভারতীয় আদালত পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে সব সাক্ষ্য ও দলিল পর্যালোচনা করে তাঁকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন। সেই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে ভারত সরকার। আপিল আদালতও বিচারিক আদালতের বেকসুর খালাসের রায় ও প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ বহাল রাখেন।”

“সালাহউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ। তাঁকে বিনা কারণে অন্যায়ভাবে দীর্ঘ আট বছর ভারতের কারাগারে কাটাতে হয়েছে। তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব এখন সরকারের,” বলেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, “আমরা বাংলাদেশ সরকারের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, সালাহউদ্দিন আহমেদকে মুক্ত অবস্থায় দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হোক। ভারত সরকারকেও আহ্বান জানাচ্ছি, সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে অবিলম্বে সসন্মানে তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হোক।”

আমাদের কিছু করার নেই: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বেনারকে বলেন, “সালাহউদ্দিন সাহেব ভারতে ঘুরতে গেছেন। আবার উনি উনার মতো চলে আসবেন। এখানে আমাদের কিছু করার নেই।”

শিলং থেকে বাংলাদেশে ডিপোর্ট করতে ভারত সরকারের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “না, আমার জানা নেই, তারা আমাদের সাহায্য প্রার্থনা করেছেন কি না।”

এদিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ সম্মেলনে সালাহউদ্দিন আহমেদের দেশে প্রত্যর্পণের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ. কে আব্দুল মোমেন বেনারকে বলেন, “আমি জানি না কোনো আলোচনা হয়েছে কি না। দেশে ফেরার ব্যাপারে একটি প্রতিষ্ঠিত প্রক্রিয়া আছে। কোনো বাংলাদেশি নাগরিক দেশের বাইরে সাজাপ্রাপ্ত হলে সেই প্রক্রিয়া অনুসারে দেশে ফিরে আসবেন। সবার ক্ষেত্রে একই নিয়ম প্রযোজ্য।”

সালাহউদ্দিনকে কীভাবে বাংলাদেশে পাঠানো হতে পারে তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোখলেসুর রহমান।

তিনি বেনারকে বলেন, “কোনো ব্যক্তির পাসপোর্ট না থাকলে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে ট্রাভেল পাস দেওয়া হতে পারে, যার মাধ্যমে তিনি সেই দেশ ত্যাগ করতে পারবেন।”

“বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের কোনো একটি পয়েন্টে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সালাহউদ্দিন আহমেদকে প্রথমে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ’র কাছে হস্তান্তর করবে। এরপর বিএসএফ বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি’র কাছে তাঁকে হস্তান্তর করবে,” বলেন মোখলেসুর রহমান।কবে ফিরব বলতে পারছি না: সালাহউদ্দিন

সালাহউদ্দিন ভারতের আদালতে রায়ের কপি হাতে পেলেও কবে দেশে ফিরবেন তা এখনো নিশ্চিত নন বলে বেনারকে জানান। তিনি বলেন, “রায়ের কপি হাতে পেয়েছি। কবে ফিরব তা এখনো বলতে পারছি না। সংশ্লিষ্ট সব জায়গায় সর্বশেষ রায়ের কপি পাঠানো হয়েছে।”

২০১৮ সালের ২৮ অক্টোবর শিলংয়ের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ডি জি খারসিং সালাহউদ্দিনকে নির্দোষ বিবেচনায় মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেন। নিম্ন আদালতের সেই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে সরকার আপিল করে।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি শিলংয়ের জাজেস কোর্ট আপিল নিষ্পত্তি করে তাঁকে সংশ্লিষ্ট মামলা থেকে বেকসুর খালাস দেয়। একইসঙ্গে তাঁকে দ্রুত বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে ভারত সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণেরও নির্দেশ দিয়েছেন।

বাংলাদেশে ফেরার পর “যে কোনো পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে শতভাগ প্রস্তুত” আছেন বলে বেনারকে জানান সালাহউদ্দিন। ভারতের মানবাধিকারকর্মী কিরীটি রায়ের মতে, “বিদেশি নাগরিককে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি সময় সাপেক্ষ।”

“আদালতের রায়ের কপি ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো, রাজ্য সরকারের স্বরাষ্ট্র দপ্তর ও পররাষ্ট্র দপ্তর হয়ে সংশ্লিষ্ট দেশের ভারতীয় দূতাবাসের মাধ্যমে সব নথি যাচাই করা হয়। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে,” বেনারকে বলেন কিরীটি রায়।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2