ফেক আইডি, তছনছ জীবন
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪ | আপডেট: ০২:০৩ এএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী। প্রাণোচ্ছ্বল এক তরুণী। ঘুরে বেড়ানো আর সুন্দর মুহূর্তের ছবি ধারণ করা তার প্রিয় কাজ। সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু নভেম্বরের শুরুতে দেখেন হঠাৎ তার মোবাইলে অপরিচিত নম্বর থেকে একের পর এক কল আসছে। কেন এমন হচ্ছে- বুঝে উঠতে পারেন না। পরে একজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তার ছবি ও মোবাইল নম্বর দিয়ে একটি পেজে আপত্তিকর কমেন্ট করা হয়েছে। এভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিদিনই হয়রানির শিকার হচ্ছেন বহু তরুণী।
ফার্মেসি বিভাগের ওই শিক্ষার্থী জানান, আমি দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে গেছি। সেই সব জায়গার ছবি আমার ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাট ছাড়াও বিভিন্ন ট্যুর গ্রুপে পোস্ট করেছিলাম। এছাড়া ঢাকার মধ্যে কোথাও ঘুরতে গেলেও সেখানকার ছবি ফেসবুকে আমার বন্ধু মহলের সঙ্গে শেয়ার করি। এতে কখনো কোনো সমস্যা চোখে পড়েনি। কিন্তু নভেম্বর মাসের শুরুতে হঠাৎ করে আমার পার্সোনাল ফোন নম্বরে প্রচুর পরিমাণে কল আসে। তাদের একজন আমাকে জানায় আমার এই ফোন নম্বরটি সে একটা গ্রুপের পোস্টের কমেন্টের মধ্যে পেয়েছে। এ কথা শুনে তাকে বললাম আমার এই নম্বরে হোয়াটসঅ্যাপ আছে। আপনি ওই পেজের পোস্টের লিঙ্কটা পাঠান। উনি আমাকে লিঙ্কটা দেন। লিঙ্কের মধ্যে ঢুকে দেখি সেখানে একটি আপত্তিজনক কথা লিখে আমার নম্বরটি দিয়ে কমেন্ট করা হয়েছে। সেইদিন আমার ফোনে অসংখ্য কল আসে। উপায় না পেয়ে আমি সেই পেজের মডারেটরকে বলি যে, আপত্তিজনক ওই কমেন্টটা ডিলিট করতে। এরপর ওরা ডিলিট করে দেয়। কিন্তু যে আইডিটা দিয়ে কমেন্ট করা হয়েছিল, সেটার মধ্যে যতগুলো ছবি ছিল, সবগুলোই ছিল আমার ছবি। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। একটি পেজে ডিলিট করা হলেও ওই আইডি থেকে অন্য পেজেও আপত্তিকর কমেন্ট করা হয়। আমার ফোন নম্বর ছড়িয়ে দেয়া হয়। আমার ফোনে অসংখ্য কল আসতে থাকে। আমি রমনা থানায় যাই জিডি করতে। কিন্তু সেখানে যারা ছিলেন তারা আমার কথা খুব একটা গুরুত্ব দিয়ে শোনেননি। আমি আমার সঙ্গে হওয়া এই ঘটনাকে কমপক্ষে দশবার তাদের বুঝিয়ে বলি। আমি সেখানে কমপক্ষে দুইঘণ্টা অপেক্ষা করি একটা জিডি করার জন্য। তারপর জিডি করা শেষে তারা আমাকে বলেন, এটা আমরা সাইবার ক্রাইম বিভাগে জমা দেবো। ওখানে প্রতি মাসে এমন অনেক অভিযোগ জমা হয়। আপনাকেও ওরা ডাকবে কিছুদিন পর। এখনও পর্যন্ত আমাকে ডাকা হয়নি।
আরেক শিক্ষার্থী অনন্যা মিত্র। তিনি মানবজমিনকে জানান, ডিসেম্বরের ৭ তারিখে আমার এক বন্ধু ফোন দিয়ে জানায়, আমার ছবি ব্যবহার করে তৈরি করা একটি ফেক আইডি তার সামনে পড়েছে। সে ওটার লিঙ্ক পাঠায়। আমি দেখি আমার আইডি থেকে ছবি নিয়ে এ ফেক আইডিটি তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে একটা ছবি ছিল যেটা ভীষণরকম আপত্তিকর। এই ছবিটা মূলত আমি আমার ফেসবুক ওয়ালে পোস্ট করি। কিন্তু সেটা শাড়ি পরা একটা সুন্দর ছবি ছিল। সেই ছবিটাকে এডিট করে, হয়তো এআই দিয়ে খুবই খোলামেলাভাবে বানিয়ে ফেক আইডিটায় পোস্ট করেছে। আমি নিজেকে এই অবস্থায় দেখে বুঝে উঠতে পারছিলাম না যে, এই মুহূর্তে ঠিক কী করা উচিত। আমার পরিচিত মহলে, আত্মীয়দের সামনে নিজেকে ছোট বলে মনে হয়েছে। যদিও ছবিটি দেখে বোঝা যাচ্ছিল যে, এটা ফেক। কোনো একটা অ্যাপসের মাধ্যমে বানানো হয়েছে। তবুও আমার তো নিজস্ব একটা আত্মসম্মান আছে। সেটার যে ক্ষতি হলো এটার প্রতিদান কে দেবে। এরপর আমি আমার বন্ধুদের পরামর্শে অনেকগুলো আইডি দিয়ে রিপোর্ট মেরে ওই ফেক আইডিটাকে বন্ধ করি।
আতিয়া তাবাস্সুম নামে গ্রীন ইউনিভার্সিটির একজন শিক্ষার্থী মানবজমিনকে জানান, ফেসবুকে তার ছবি ব্যবহার করে ইদানীং বেশ কয়েকটি ফেক আইডি খোলা হয়েছে। প্রথমদিকে আমি এগুলোকে খুব একটা গুরুত্ব না দিলেও পরবর্তীতে দিতে বাধ্য হয়েছি। সদ্য ঘটে যাওয়া একটি বড় ঘটনাই এর অন্যতম কারণ। কয়েকদিন আগের কথা। মগবাজার আড়ং থেকে ফিরছিলাম। মৌচাক পর্যন্ত আসার পর হঠাৎ করে পরিচিত এক বড় ভাইয়ের সঙ্গে দেখা। তিনি পেশায় একজন ফটোগ্রাফার। প্রায়ই তিনি আমাকে ফটোসেশন করে দেন। তিনি আমাকে তার ফোন থেকে একটি আইডি দেখিয়ে বললেন, এটা কি তোর আইডি? নতুন খুলেছিস নাকি? আমাকে দুইদিন আগে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিল এই আইডি থেকে। আমি তো তুই ভেবে একসেপ্ট করেছিলাম। একটু পরে আমাকে মেসেজ করে দুই হাজার টাকা পাঠাতে বলে। যে নম্বরটা দিয়ে পাঠাতে বলে, আমি দেখি এটা তো তোর ফোন নম্বর নয়। পরে আমি ওই আইডিটায় মেসেজ দিয়ে বলি, তুই কি নম্বর চেঞ্জ করেছিস। এটা শুনেই আইডিটা থেকে আমাকে ব্লক করে দেয়। তখন আমার সন্দেহ হয়। এই কথা শুনে আমি তো অবাক যে আমার ছবি ব্যবহার করে এই ফেক আইডি দিয়ে না জানি আরও কত মানুষ প্রতারিত হয়েছে।