দৃষ্টিনন্দন ‘কাঠের গাড়ি’ তৈরি করে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন শামসুদ্দিন!
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১১ সেপ্টেম্বর,সোমবার,২০২৩ | আপডেট: ০৬:০০ এএম, ১৫ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
ছবি : সংগৃহীত
দীর্ঘ ছয় মাসের প্রচেষ্টায় কাঠ দিয়ে বানানো চার চাকার একটি ‘কাঠের মাইক্রো’-কে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিয়েছেন। এরই মধ্যে দৃষ্টিনন্দন এই গাড়িটি সবার নজর কেড়েছে। এর আগেও তিনি কাঠের তৈরি মোটরসাইকেল বানিয়ে সাড়া ফেলেছিলেন এলাকায়। কাজের ফাঁকে ফাঁকে নিজবাড়িতে বসে কাঠের তৈরি মাইক্রো বানিয়ে নজর কেড়েছেন নওগাঁর শামসুদ্দিন মণ্ডল। সরকারি সহযোগিতা পেলে বাণিজ্যিকভাবে এর প্রসার ঘটানোর ইচ্ছা তার।
নওগাঁর মান্দা উপজেলার কুসুম্বা ইউনিয়নের দেলুয়াবাড়ি সরদার পাড়া এলাকার বাসিন্দা শামসুদ্দিন মণ্ডল (৫০)। পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতা ভালো না হওযায় দ্বিতীয় শ্রেণির বেশি লেখাপাড়ার সুযোগ হয়নি। দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে কাজ করছেন কাঠমিস্ত্রির।
কাঠ দিয়ে তৈরি গাড়িটি অনেকটা ‘মাইক্রো’ আদলে তৈরি। গাড়িটির পুরো বডি কাঠের তৈরি। এটি চলছে বৈদ্যুতিক চার্জে। চালকসহ পেছনে বসার জন্য দুটি আসন রয়েছে। পরিবেশবান্ধব ও জ্বালানি সাশ্রয়ী এ গাড়িটি তৈরিতে খরচ হয়েছে ৪৯ হাজার টাকা। বর্তামানে গাড়িটিতে লাগান আছে ১২০ এমপিআর একটি পুরাতন ব্যাটারি। একবার চার্জ দিলে চলছে ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার। তবে চারটি নতুন ব্যাটারি লাগান গেলে এক চার্জে সারাদিন চালানো যাবে।
শামসুদ্দিন মণ্ডল জানান, রাস্তায় বিভিন্ন যাহবাহন চলাচল করতে দেখে ভাবতেন কীভাবে নিজে গাড়ি তৈরি করবেন। এরপর একদিন শখের বসে বাজার থেকে কাঠ কিনে নিয়ে আসেন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে শুরু করেন গাড়ি বানানোর কাজ। ৬ মাসের মধ্যে গাড়িটি বানানো শেষ হয়। এই কাজে তাকে কেউ সহযোগিতা করেনি। গাড়িটির চাকা ও এক্সেল ছাড়া সব জায়গাতে ব্যবহার হয়েছে কাঠ। গাড়ি বানাতে খরচ হয়েছে ৪৯ হাজার টাকা। তবে এখনও বাকি আছে রঙের কাজ।
তিনি আরও বলেন, প্রথম দিনে গাড়ি নিয়ে যখন রাস্তায় বের হন তখন খুবই ভালো লাগছিল। প্রথম দিন থেকেই এখনও গাড়িটি নিয়ে বের হলে সবাই দেখতে ভিড় করে। অনেক সময় বাধ্য হয়ে গাড়ি নিয়ে চলে আসেন। সবাই প্রশংসা করে। গাড়ি দেখতে এসে কেউ যেতে চায় না। গাড়ির সঙ্গে সবাই ছবি তোলে। সরকার সহযোগিতা করলে এর চেয়ে আরও উন্নত গাড়ি বানাতে পারবেন তিনি।
পরিবেশবান্ধব এই ‘কাঠের মাইক্রো’ নিয়ে নিজের ব্যক্তিগত কোনো কাজে বের হলে নজর কাড়ছে পথচারীদের। এক নজর দেখার জন্য গাড়ির চারপাশে ভিড় করছেন উৎসুক জনতা। কেউ কেউ আবার এ গাড়িটির সঙ্গে নিজের ছবি তুলে রাখছেন মুঠোফোনে।
তারা জানান, কাঠ দিয়ে যে এত সুন্দর গাড়ি বানানো যায় এর আগে কখনোই তারা দেখননি। দেখে খুব ভালো লাগলো। তার মেধার প্রশংসা করতে হয়। এই গাড়িটি দেখতে খুব সুন্দর লাগছে। দেখার মত। একজন কাঠমিস্ত্রি হয়ে, সে কীভাবে এত সুন্দর গাড়ি বানালো মাথায় ধরে না। মাঝে মধ্যে গাড়িটি রাস্তায় দেখি। গাড়িটি একটি পরিবেশ বান্ধব। সরকার থেকে তাকে সহযোগিতা করা হলে ভবিষ্যতে সে আরও ভালো মানের গাড়ি বানাতে পারবে।
এদিকে কুসুম্বা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নওফেল আলী মন্ডল জানান, নিজের প্রচেষ্টায় কাঠ দিয়ে পরিবেশ বান্ধব এমন গাড়ি তৈরি করায় আসলেই প্রশংসার দাবিদার তিনি। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে তাকে কিভাবে সহযোগিতা করা যায় সেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পরিবেশবান্ধব এই ‘কাঠের মাইক্রো’ ব্যবহারে যেমন পরিবেশের ক্ষতি হবে না ঠিক তেমনি জ্বালানী তেলের ওপর চাপ কমবে বলে আশা করেন সংশ্লিষ্টরা।