‘চোরের খনি’
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৯ সেপ্টেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০২:৪৪ পিএম, ২৬ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একবার দুঃখ করে বলেছিলেন, ‘সবাই পায় সোনার খনি, আমি পেয়েছি চোরের খনি।’ বাংলাদেশের প্রাথমিক দিনগুলোতে কী নিদারুণ কষ্টে বঙ্গবন্ধু কথাগুলো বলেছিলেন, তা সহজেই অনুমেয়। সেই দুঃসময়ের দিনগুলোতে তিনি জনগণ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সদোপদেশ দিতেন। আমি নিজে তাকে বলতে শুনেছি- এত লোভ কেন করো, সাড়ে তিন হাত মাটির নিচে যেতে হবে না! কিন্তু তার লোকেরা সে ধর্মের কাহিনী শোনেনি। শেখ মুজিব ধার্মিক ছিলেন। যে গতানুগতিক কর্মধারায় আমাদের পূর্বপুরুষরা ব্যক্তিগতভাবে ইসলামের অনুশীলন করেছেন, তিনি তাদের ব্যতিক্রম ছিলেন না।
১৯৭২ থেকে ’৭৫ পর্যন্ত সময়কালে বঙ্গবন্ধুর ভাষণগুলো শুনলে নাগরিকদের প্রতি তার নৈতিক বক্তব্যের অনেক প্রমাণ পাওয়া যাবে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে, নৈতিক শাস্ত্রে এবং ধর্মে মানুষ গড়ার অনেক ফর্মুলা আছে। কোনো মানুষই অপরাধী হয়ে জন্মায় না। পারিপার্শিক পরিবেশ তাকে অসৎ করে তোলে। কিন্তু যেখানে শিশুকাল থেকে একজন ব্যক্তি সততার মাঝে ও নৈতিকতার সাথে বেড়ে ওঠে, সে কখনো অনৈতিক কাজ করতে পারে না। মানুষ তার পরিবারকে অতিক্রম করে পাড়া, প্রতিবেশী বা গ্রামে মানুষ হয়। সেই পরিপাশর্^ ও পরিবেশ থেকে শিশু-কিশোররাও শেখে। যতই আমরা জাগতিক উন্নয়নের পথে অগ্রসর হচ্ছি, ততই অনৈতিক অধোগতির দিকে ধাবিত হচ্ছি। দিনে দিনে প্রতিবেশ থেকে আমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছি। আগেকার দিনের ছেলেমেয়েরা প্রতিবেশী বা পাড়ার অভিভাবকদের দেখাশোনা ও আদর-যত্নে মানুষ হতো। এখন ডিজিটাল উন্নয়নের ছোবলে সেই দায়দায়িত্ব উবে গেছে। অপরিণত ছেলেমেয়েরা যেমন মোবাইল অভিশাপে ব্যস্ত, ঠিক তেমনি অন্যের ছেলেমেয়েদের প্রতি আমাদের আবেগ অনুভ‚তিও হ্রাস পেয়েছে। ছোট সময় আমরা বিতর্ক করতাম- বিজ্ঞান আর্শীবাদ নাকি অভিশাপ, এখন আবার সেই প্রশ্নটি যেন জীবন্ত হয়ে উঠছে। সাহিত্যিক যাযাবর বলেছিলেন, বিজ্ঞান আমাদের দিয়েছে বেগ, আর কেড়ে নিয়েছে আবেগ। এখন আমরা আবেগ-অনুভ‚তিহীন নিষ্ক্রিয় ও নিষ্ফল একটি সমাজে বসবাস করি। সাক্ষ্য হিসেবে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ আত্মজীবনী ‘নিষ্ফলা মাঠের কৃষক’-এর উদাহরণ দেয়া যায়।
কথাটি মনে পড়ল মেয়েদের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয়ী দুই সেলিব্রেটির বিমানবন্দরে চুরির ঘটনা দেখে। গণমাধ্যমে খবর এসেছে, কৃষ্ণা রানী সরকার ও শামসুন্নাহারের ডলার চুরির ঘটনায় বিমানবন্দর ও মতিঝিল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন-বাফুফের লিগ্যাল উইং। গত সপ্তাহে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ী নারী ফুটবলাররা নেপাল থেকে ফেরার পর জনাকীর্ণ বিমানবন্দরে তাদের বরণে সবাই ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। বিশৃঙ্খলার জন্য নির্ধারিত সংবাদ সম্মেলন বাতিল করে ছাদখোলা বাসে বিমানবন্দর থেকে রাজকীয় সংবর্ধনা দিয়ে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় বাফুফে ভবনে। কিন্তু এরই মাঝে ঘটে দুঃখজনক ঘটনা। বিমানবন্দরে ভিড়ের সুযোগে দুই নারী ফুটবলারের ডলার চুরির ঘটনা ঘটে। আনন্দ-উল্লাসের মাঝে প্রথমে ঘটনাটি টের পায়নি কেউ। পরে নিজেদের লাগেজ খুলতে গিয়ে জানা যায় ডলার চুরির বিষয়টি। বিমানবন্দর থেকে ফেরার পর কৃষ্ণা ৯০০ ডলার ও বাংলাদেশী ৫০ হাজার টাকা এবং শামসুন্নাহারের ৪০০ ডলার পাওয়া যায়নি।
বাফুফে নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, তারা বাংলাদেশ বিমান এবং সিভিল এভিয়েশনকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়েছেন। এ ছাড়া মতিঝিল থানা ও বিমানবন্দর থানায় সাধারণ ডায়েরি-জিডি করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ছোট মেয়েদের জন্য এটি বড় অর্থ। এটি শেষ পর্যন্ত শনাক্ত না হলে আমরাই তাদের এ অর্থ দিয়ে দেবো। এ দিকে বিমানবন্দর থেকে দুই ফুটবলারের অর্থ চুরির বিষয়টি অস্বীকার করেছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। তারা এক বিবৃতি দিয়ে বলেন, বাফুফের প্রটোকল প্রতিনিধি লাগেজপত্র বুঝে নেন। পরবর্তীকালে দুই ফুটবলারের অর্থ চুরির বিষয়টি সিসি টিভি ফুটেজে পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করা হয়। তারা বলেন, অক্ষত এবং তালাবদ্ধ অবস্থায় বিমান ও বন্দর কর্তৃপক্ষ লাগেজ হস্তান্তর করেছে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ আরো বলে যে, যাত্রী সেবার মান উন্নয়ন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং দেশের ভাবমর্যাদা সমুন্নত রাখতে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বদ্ধপরিকর। এ দিকে বাফুফে জানিয়েছে, চোর ধরতে মাঠে নেমেছে বিভিন্ন গোয়েন্দা ইউনিট। তবে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বারবার করে নিশ্চিত করছে, তারা অক্ষত অবস্থায় সব লাগেজ, ব্যাগেজ সুন্দরভাবেই বাফুফে কর্মকর্তাদের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছে। বাফুফে ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের পরস্পরবিরোধী দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অবশেষে কী ঘটে তা অপেক্ষার বিষয়। তবে বিমানবন্দরে এই অভিযোগ নিত্যদিনের। চ্যাম্পিয়ন নারীদের অর্থ চুরি নিয়ে হইচই হলেও সাধারণ মানুষের ব্যাগ ও ব্যাগেজ চুরির ঘটনাগুলো নীরবে নিভৃতে নিষ্ফল হয়ে যায়। পৃথিবীর এমন কোনো বিমানবন্দর নেই যেখানে ঢাকার মতো চুরির অভিযোগ নিত্যদিনের।
শুধু বিমানবন্দর নয়, এই চুরির অভিযোগ সর্বত্র। কয়েক মাস আগে ইউরোপের এক রাষ্ট্রদূতের ভ্যানিটি ব্যাগ চুরি হয়ে যায় বাংলা একাডেমির অনুষ্ঠান থেকে। সে কী এক বিব্রত অবস্থা। বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তায় ঘেরা প্রতিষ্ঠান থেকে ডিজিটাল কায়দায় কোটি কোটি টাকা চুরি হয়ে যায়। কয়েক বছর আগের কথা, মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী ব্যক্তিদের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ যে সোনার মেডেল দেয়া হয় তাতেও ছিল চুরি। তখন বলা হয়েছিল, স্বর্ণকার মায়ের সোনাও চুরি করে। এ কথায় আমরা কার পক্ষে সাফাই গেয়েছি তা একটি প্রশ্ন বটে। যেখানেই তাকাবেন সেখানেই চুরি। মসজিদের মতো জায়গায় জুতা চুরি হয়। চুরি হয় মাঠে ঘাটে হাটে, বাসস্ট্যান্ডে ও রেলস্টেশনে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই লোপাট হয়ে যেতে পারে আপনার সহায়-সম্পত্তি। সর্বত্রই চোর গিজগিজ করছে। আমি বাস থেকে নামছিলাম। উঠে দাঁড়িয়েছি মাত্র। পেছনে সিটের উপর রাখা মোবাইলটি গায়েব। সারা বাস সার্চ করা সে এক কঠিন কাজ। যাত্রীদের তাড়াহুড়ো তো আছেই। অবশেষে অনন্যোপায় হয়ে চোরের কাছে আত্মসমর্পণ। গ্রামগঞ্জে চুরির অন্ত নেই। প্রায়ই দেখা যায়, গবাদিপশু চুরির হিড়িক। কয়েক দিন আগে আমাদের গ্রামে গরু চোরের উপদ্রব লক্ষ করা গেল। অনেক অনুসন্ধান করে জানা গেল, গ্রামের কর্তাব্যক্তিরা এর সাথে জড়িত। পরে চোর ধরা গেলেও চোরের থলিয়াদারদের নাম উচ্চারণ করাও সম্ভব হয়নি। আরো জানা গেল, থানা পুলিশও এর সাথে জড়িত। থানায় মামলা দিলে উল্টো হয়রানি হতে হয়। চোরের মায়ের বড় গলা শোনা যায় সর্বত্র। কয়েক মাস আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিটি মসজিদের মতো অভিজাত জায়গায় মাগরিবের নামাজ পড়ছিলাম। সেজদারত অবস্থায় কারেন্ট চলে যায়। নামাজ শেষে দেখা যায়, অনেকের মোবাইল নেই। এই ঘটনার কী সান্ত¡না নেবেন আপনি? জুতা চোর না হয় মসজিদে যায় চুরির জন্য। নামাজিরা তো চুরির জন্য যায় না। আর সাধারণভাবে বিশ^াস করা হয়, নামাজি মানুষরা তুলনামূলকভাবে সৎ হবে। তাহলে কি আমাদের বিশ্বাস করতে হবে যে, নামাজিদের একাংশ চোর? ধর্ম যে মানুষের মর্মে পৌঁছে না, এটি তার অকাট্য প্রমাণ।
এসব ছোটখাটো চুরির বর্ণনার কারণে আপনারা আমার ওপর হয়তো বিরক্ত হচ্ছেন। আমি স্বভাবগতভাবে চুরির দুঃখজনক ব্যাধির কথা উল্লেখ করছিলাম। চুরি দু’ধরনের হতে পারে। একটি হলো ব্যক্তিক। অপরটি হলো পদ্ধতিগত বা সিস্টেমেটিক। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের মেগা চুরির ক্ষেত্রে সিস্টেমেটিক বিষয়টির প্রাধান্য লক্ষ করা যায়। মেগা প্রজেক্টে মেগা চুরি হয়। পদ্মা ব্রিজ নির্মাণে আমাদের চুরির অভিযোগে বিশ্বব্যাংকের অনুদান বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের রাজনৈতিক এলিটরা এতে গুড ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট পেয়েছেন। পদ্মা ব্রিজের কাজ শেষ হয়েছে। আমার প্রশ্ন একটি জাতি হিসেবে যে চুরির বদনাম রয়েছে সে পারসেপশন থেকে রক্ষা পাবো কিভাবে?
অনেক আগের কথা, দেশের সবচেয়ে বড় ধনী এবং ঠিকাদারের প্রতীকী অঙ্গুলি কর্তনের কথা শুনেছিলাম। এখনো মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে আমাদের একজন এমপি চুরির অভিযোগে কারাদণ্ড ভোগ করছে। বাংলাদেশে চুরির ব্যাপারটি সর্বাত্মক। রাজনীতিবিদরা চুরিবিদ্যায় এতটাই পারঙ্গম যে, তারা কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে। বিদেশে সেকেন্ড হোম বানায়। আমলাতন্ত্র এই সেকেন্ড হোমের ফাস্ট পার্টনার। এখন নিম্নআদালত থেকে উচ্চ আদালত পর্যন্ত সর্বত্রই চুরি ও দুর্নীতির অভিযোগ শোনা যায়। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ও প্রশাসক- সবার বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ। সর্বাঙ্গে ব্যথা ওষুধ দেবো কোথা? এসব বর্ণনার পর কথাটি এরকম হয়ে যায় না যে, চুরির অভিযোগে আমরা সবাই অভিযুক্ত! অবশ্য চৌর্যবৃত্তি সম্পর্কে আমাদের অতীত ইতিহাসেও সাক্ষ্য প্রমাণ আছে।
সদ্য প্রয়াত আকবর আলি খান তার ছলনা জালের রাজনীতি গ্রন্থে এই অতীত সম্পর্কে কিঞ্চিৎ বর্ণনা করেছেন। অবশ্য চুরিবিদ্যা মহাবিদ্যা যদি না পড়ে ধরা। বিদেশে বড় বড় চুরি হয়। বোফর্স স্ক্যান্ডাল ইত্যাদি শোনা যায়। কিন্তু সাধারণভাবে জনগণের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ নেই। বরং সেসব দেশে সাধারণ জিনিসও মালিককে পৌঁছে দেয়া হয়। আমাদের রাজনৈতিক চৌর্যবৃত্তি বা ভোট চুরির কথা বলা অতটা নিরাপদ নয়, যতটা অর্থনৈতিক চুরির কথা বলা যায়। আর সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হলো যে, জনগণ যেন চুরি-চামারি বা প্রজেক্ট চুরিকে সাধারণ ব্যাপার মনে করে। এটি যেন তাদের গা সওয়া হয়ে গেছে। না হলে পুকুরচুরির মতো চুরিবিষয়ক শব্দাবলি বাংলা ভাষায় এলো কী করে? সাম্প্রতিক রাজনৈতিক এলিটদের চুরি সম্পর্কে প্রয়াত প্রবীণ সাংবাদিক এবিএম মূসার কথা মনে করা যায়। তিনি বলে গেছেন, এদের দেখলে চোর বলুন।
আবারো বঙ্গবন্ধুর দুঃখবোধে ফিরে যেতে চাই। তিনি চোরমুক্ত একটি নৈতিক জাতি চেয়েছিলেন। আমরা যদি সে অবস্থা থেকে পঞ্চাশ বছর পূর্তিতে সমীক্ষা নেই তাহলে দেখব ওই সময় যা চোরের সংখ্যা ছিল, এখন তা বেড়ে শতগুণ হয়েছে। মনীষী এরিস্টটল রাষ্ট্রকে নৈতিক প্রতিষ্ঠান বলেছেন। তিনি মনে করেন, সরকার নিজে নৈতিক আচরণ করবে এবং তার সিটিজেনকে নৈতিক হওয়ার পথ দেখাবে। নৈতিক হওয়ার অনুকরণ, অনুশাসন ও অনুশীলন ঘটাবে। প্লেটো তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘রিপাবলিক’-এ বলেছিলেন, সর্বোচ্চ শিক্ষার মাধ্যমে নৈতিকতা নিশ্চিত করা যায়। পরে মানুষের মজ্জাগত স্বভাব উপলব্ধি করে তিনি যে গ্রন্থটি লেখেন তার নাম ল’স বা আইন। মনীষী হবসের ভাষায় মানুষ স্বভাবতই ‘সেলফিস, পুওর, ব্রিটিশ, ন্যাস্টি অ্যান্ড শর্ট’। ভারতীয় ধর্মবিদ্যায় ‘কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ ও মাৎসর্যের’ কথা বলা হয়েছে। এ থেকে মানব চরিত্রের উত্তরণের জন্য নৈতিক জীবনের কথা বলা হয়েছে। আর ধর্মই হচ্ছে সে নৈতিক উৎসের প্রধান ক্ষেত্র। উল্লেখ্য, পুরনোকালে প্রতিটি রাষ্ট্রই ছিল ধর্মাশ্রিত। ধর্মই ছিল রাজা, রাজ্য, রাজধানী ও রাজনীতির প্রধান অবলম্বন।
আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় এর নাম-ধামের পরিবর্তন হয়েছে মাত্র। আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান বলে যে, কৃত্রিমভাবে রাষ্ট্র গঠন সম্ভব। কিন্তু জাতি গঠন করতে গেলে তাকে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। প্রথমত, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান- আইনসভা, নির্বাহী ও বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হবে সর্বোচ্চ নৈতিক মানদণ্ডে। এর নেতৃত্ব হতে হবে সর্বাধিক নৈতিক। আর নাগরিক সাধারণকে একটি সামাজিক প্রক্রিয়া বা সোশালাইজেশনের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নৈতিক করে গড়ে তোলা প্রয়াস নিতে হবে। এই প্রয়াস ও পরিকল্পনার প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- পরিবার তথা মাতা-পিতা, পাড়া-প্রতিবেশী, প্রাথমিক থেকে বিশ^বিদ্যালয় পর্যন্ত প্রসারিত শিক্ষাব্যবস্থা।
এর প্রতিটি স্তরে নৈতিক তথা ধর্মশিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। এটুকু যথেষ্ট নয়, সরকার সব প্রচারযন্ত্র তথা গণমাধ্যম ব্যবহার করে নাগরিক সাধারণকে সৎ, সংযমী ও সুন্দর জীবনের দীক্ষা দেবে। অশ্লীল ছায়াছবি, মাস্তানির প্রদর্শন ও লোভ-লালসার আহ্বান দিয়ে আর যা-ই হোক নৈতিক নাগরিক গড়া সম্ভব নয়। আজকে সমগ্র জাতি যে নৈতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে, তাতে সরকার, রাজনৈতিক দল ও গণমাধ্যমকে মানুষকে ভালো হওয়ার কথা বলতে হবে। ইতোমধ্যে যে সর্বনাশ সাধিত হয়েছে তা সহজেই পূরণ সম্ভব নয়। একটি নৈতিক সরকার ও নৈতিক বিপ্লবের মধ্য দিয়েই কেবল ‘চোরের খনি’ ব্যবস্থার পরিবর্তন হতে পারে।