ছোট্ট চিপ নিয়ে বড় লড়াই, যুক্তরাষ্ট্রকে কুপোকাতের চেষ্টায় চীন
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১১ জুলাই,মঙ্গলবার,২০২৩ | আপডেট: ১০:৫০ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
আকারে খুব বড় নয়। দৈর্ঘ্য মাপতে ন্যানোমিটারের আশ্রয় নিতে হয়। ওই ছোট্ট চিপের মধ্যেই কিন্তু লুকিয়ে বিশ্বজুড়ে বড়সড় পরিবর্তনের বীজ। চিপটি বদলে দিতে পারে অনেক সমীকরণ।
মোবাইল, ক্যামেরা থেকে শুরু করে ল্যাপটপ- বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির দুনিয়া চিপ ছাড়া অচল। যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশে চিপ দরকার হয়। ওই চিপের বাজারেই যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দ্বন্দ্ব বেঁধেছে চীনের।
বিশ্বজুড়ে চিপ তৈরির বাজারে আধিপত্য বিস্তার করতে দীর্ঘ দিন ধরেই সচেষ্ট চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশ দুটি। যুক্তরাষ্ট্র একের পর এক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে এ বার পাল্টা আঘাতের ছক কষেছে চীন। চিপ মূলত গ্যালিয়াম ও জার্মেনিয়াম ধাতু দিয়ে তৈরি। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ‘বাণিজ্যদ্বন্দ্বে’ এই ধাতু দু’টিকেই হাতিয়ার করেছে চীন।
সম্প্রতি চীন সরকার গ্যালিয়াম ও জার্মেনিয়ামের বেশ কিছু পণ্যের রফতানির ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। রফতানিতে বসেছে নানা রকম শর্ত। সরকারের এই নতুন ঘোষণায় যদিও বিপাকে পড়েছে চীনা ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা। তারা চিপের বাজারে বড়সড় ক্ষতির আশঙ্কা দেখছে। রফতানিতে বিধিনিষেধের কারণে ব্যবসার ক্ষতি হতে পারে বলেও মনে করছে তারা।
সরকারের বিধিনিষেধে চীনের চিপ তৈরির বাজারে বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ হারাবে বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
চীনের একটি যন্ত্রাংশ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, সরকারের ঘোষণার কথা জানাজানি হওয়ার পর থেকেই পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে।
চিন সরকার জানিয়েছে, জাতীয় নিরাপত্তা সুনিশ্চিত ও স্বার্থ সুরক্ষিত করার উদ্দেশে গ্যালিয়াম ও জার্মেনিয়ামের পণ্য রফতানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগামী ১ আগস্ট থেকে গ্যালিয়ামে তৈরি আটটি পণ্য ও জার্মেনিয়ামে তৈরি ছয়টি পণ্যের রফতানি নিয়ন্ত্রণ করা হবে। ওই পণ্যগুলো রফতানির জন্য আলাদা করে সরকারের অনুমতি নিতে হবে।
চীনের ওই পদক্ষেপের নেপথ্যে তাদের যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী মনোভাবকেই দেখছে অনেকে। তাদের মতে, দীর্ঘ দিন ধরে চীনের প্রযুক্তিগত উন্নয়নকে থমকে দিতে যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছে। এবার চীন তার পাল্টা আঘাত করতে প্রস্তুত।
মোবাইল, ল্যাপটপ, সৌর প্যানেল, বৈদ্যুতিক যানবাহনের সেমিকন্ডাক্টর তৈরি হয় গ্যালিয়াম ও জার্মেনিয়াম দিয়ে। এই দুই ধাতুর প্রাথমিক উৎপাদক চীন।
২০২২ সালে গ্যালিয়ামে তৈরি চীনের পণ্য সবচেয়ে বেশি কিনেছে জাপান, জার্মানি ও নেদারল্যান্ডস। জার্মেনিয়ামের পণ্য সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে জাপান, ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রে।
চীনের ক্রেতাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রও রয়েছে। ফলে রফতানি নিয়ন্ত্রিত হলে চিপের ব্যবহার তথা প্রযুক্তির দুনিয়ায় পিছিয়ে পড়বে যুক্তরাষ্ট্র। এভাবেই তাদের সমস্যায় ফেলতে পারে বেজিং।
অনেকের ধারণা, চিপ রফতানির জন্য অনুমতি চাইতে বলেছে চীন সরকার। তার মাধ্যমেই যুক্তরাষ্ট্রে ওই পণ্য রফতানিতে তারা বাধা দিতে পারে। বিপদে পড়তে পারে ওয়াশিংটন।
চীনের আরোপিত বিধিনিষেধ ১ আগস্ট থেকে প্রযুক্ত হতে চলেছে। ইউরোপ, আমেরিকার অনেক ক্রেতা তার আগেই বেশি করে ওই ধরনের পণ্য কিনে মজুত করে রাখতে চাইছে। ফলে চিপের বাজারে নতুন সঙ্কট তৈরি হতে পারে।
চীন থেকে কেনা গ্যালিয়াম, জার্মেনিয়াম ব্যবহার করে উন্নত প্রযুক্তির মাইক্রোচিপ প্রস্তুত করে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। তারপর সেগুরো আবার চীনে বিক্রি করা হয়।
গত কয়েক মাসে যুক্তরাষ্ট্র চীনে মাইক্রোচিপ বিক্রিতে একাধিক বিধিনিষেধ আরোপ করেছে বলে অভিযোগ।
চিপের বাজারে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের এই পারস্পরিক টানাপড়েন সারাবিশ্বের বাণিজ্যেই প্রভাব ফেলতে পারে। দুই বৃহৎ শক্তির ঘাত-প্রতিঘাতে ক্ষতির আশঙ্কা করছে ব্যবসায়ীরা।