সিডনী হিল্টনঃ নিভৃতবাসের দিনগুলি - ৫
ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন
প্রকাশ: ০৪:৪৩ পিএম, ৯ সেপ্টেম্বর,
বুধবার,২০২০ | আপডেট: ০২:২৫ পিএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
কোয়ারেন্টিনের দ্বিতীয় দিনে করা কোভিড টেস্টের রেজাল্ট নেগেটিভ এসেছে। দশম দিনে আজ আরেকটি টেস্ট হল। সেটি নেগেটিভ হলে আগামী বৃহস্প্রতিবার আজাদী মিলবে।
টাইমলাইনে এক বন্ধু লিখেছে, “কোয়ারেন্টিনের সৌজন্যে এবার কারাগারে থাকারও অভিজ্ঞতা হল তোমার”। মন্দ বলেনি বন্ধু। শুনেছি, জেলকোড অনুযায়ী কিছু কয়েদি কারাগারে ডিভিশান পেয়ে থাকে। কোয়ারিন্টিনে আমাকে ডিভিশান দেয়া হলেও পার্থক্য হল হিল্টনের নির্জন প্রকোষ্ঠের বাইরে পা রাখার সাধ্য আমার নেই।
করোনাকালে গৃহবন্দি দিনগুলো অনেক কিছুই শিখিয়েছে আমাদের। ড্রইংরুমের কোনায় বেড়ে উঠা মানি প্ল্যান্ট গাছটি সবুচ কচি পাতার আগমনে যে কতটা সুন্দর হতে পারে তা করোনাকাল না এলে আমার কখনোই জানা হতনা। শিখা হতনা যোজন দূরে থেকেও পরিবার ও প্রিয়জনদের সাথে সম্পর্ককে কিভাবে আঁকড়ে রাখতে হয়, কিভাবে অল্পতে মেলে অপার আনন্দ।
এখন ৪০১৫ কক্ষের জানালাই হচ্ছে নিরাপত্তা কর্মীর অলক্ষ্যে মুক্ত পৃথিবীতে ঢুকে পড়ার একমাত্র প্রবেশ দ্বার। এই জানালায় চোখ রেখে প্রতিদিনই দেখি দিগন্ত প্রসারিত নীলাকাশ, রৌদ্রস্নাত সকাল-সন্ধ্যা, সূর্যের শব্দহীন উদয়-অস্ত আর রাতের কালো আকাশে মহাজাগতিক উল্কা পতন। দেখি পিচঢালা রাজপথে পিঁপড়ের মত গাড়ীর সারি কিংবা ফুটপাতে লিলিপুটিয়ান মানুষের ঢল।
আর ক’টা দিন পর কোয়ারেন্টিনের শৃংখল খুলে আমিও নেমে পড়বো আমার আগের দেখা এই শহরে। বুক ভরে শ্বাস নেবো মুক্ত হাওয়ায়। জানি একদিন এই ঝড় থেমে যাবে। আবার নিজের পরিচয়ে, নিজের ছন্দে ফিরবে এই পৃথিবী। জনকোলাহল তরঙ্গ আটকে দেয়া বাঁধ ভেঙ্গে বিপুল গর্জনে ব্যস্ত হবে সিডনী শহর। আবার ভিড় জমবে ক্যাসিনোতে; মার্টিন প্লেস ও টাউন হলের প্রসারিত ফুটপাতে গীটার হাতে গান শোনাবে ভিনদেশী কোনো পর্যটক। প্রায়ান্ধকার আকাশচুম্বি অট্টালিকায় আবার জলবে ঝলমলে বাতি।
আমি এখন সেই নতুন সময়ের দিন গুনছি……
-লেখকের ফেসবুক টাইমলাইন হতে সংগৃহীত