সিডনী হিল্টনঃ নিভৃতবাসের দিনগুলি - ৩
ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন
প্রকাশ: ০৯:০৪ পিএম, ৭ সেপ্টেম্বর,সোমবার,২০২০ | আপডেট: ১০:২১ এএম, ১ জুলাই,মঙ্গলবার,২০২৫

সিডনী বিমান বন্দরে পা রেখে চমকে উঠেছি। এই বিমান বন্দর ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে হাজারো মানুষের কর্মসংস্থান। যাত্রীদের সমাগমে উদ্দাম, প্রানোচ্ছল সেই টার্মিনাল ভবনে এখন শ্মশানের নিরবতা। আমাদের ফ্লাইটের মালপত্র নিয়ে কেবল একটি লাগেজ বেল্ট খোলা। বিমান বন্দরে গাড়ী পার্কিংয়ের জন্য রয়েছে বহুতল বিশিষ্ট দালান। এক সময় পুরো এলাকাটা যাত্রীদের ভীড় ও আওয়াজে গমগম করত। আর এখন? চারপাশে ভুতুড়ে অন্ধকার। বিমান থেকে নামার আগে সব যাত্রীদের মাস্কের সাথে ফেস শিল্ডও পড়তে বলা হল। টার্মিনালের বাইরে এসে দেখি, যেসব পুলিশ ও সেনবাহিনীর জোয়ান আমাদের স্বাগত জানানোর জন্য দাঁড়িয়ে আছে, তাদের অনেকের মুখেই মাস্ক নেই। হোটেলের লবিতেও তাই দেখলাম। এ কেমন সুরক্ষা ব্যবস্থা মাথায় ধরলনা। লকডাউন, কোয়ারেন্টাইন কোনোটাই কাজে আসবেনা, যদি নাগরিকদের মাস্ক পড়িয়ে সুরক্ষা-বিধি সুদৃঢ় করা না হয়।
জুলাই মাসের শেষের দিকে কাতারের মত ছোট্ট একটি দেশে প্রতিদিন সংক্রমনের হার ছিল দুই থেকে আড়াই হাজার। মাস্ক, কভিড অ্যাপ্স এবং জ্বর পরিমাপ, এই তিনটিকে সংক্রমন নিয়ন্ত্রনের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে সংক্রমনের হার এখন দু’শ জনের মধ্যে নামিয়ে আনতে সমর্থ হয়েছে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। আর এজন্য পুরো দেশকে টোটাল লকডাউনের সিন্দুকে ভরতে হয়নি। কাতারে মাস্ক পড়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আইন অমান্যকারীদের জন্য রয়েছে বিশাল অংকের জরিমানা ও কড়া শাস্তি। অফিস, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, কেমিস্ট, সপিং মল, মসজিদ থেকে শুরু করে যে কোনো যায়গার প্রবেশ দ্বারে প্রথম দেখা হয় মুখে মাস্ক আছে কিনা, এরপর তাপমাত্রা মেপে মোবাইল ফোনে কভিড অ্যাপ্সে সবুজ সঙ্কেত দেখে তবেই ঢুকতে দেয়া হয়। তিন স্তরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থাকার ফলে চলাফেরা করতে নিজেকে কখনো অরক্ষিত মনে হয়নি।
মাস্ক পড়া বাধ্যতামূলক করতে নিউ সাউথ ওয়েল্স সরকার কেনো যে গড়িমসি করছে জানিনা। বিশ্বের প্রথম যে কয়টি দেশ মোবাইল ফোনে কভিড আপ্স চালু করে তার মধ্যে অস্ট্রেলিয়া অন্যতম। অথচ সিডনী শহরে এখন কতজন এই অ্যাপ্স ব্যবহার করছে জানিনা। ফ্রিডমের নামে মাস্ক না পড়ে আমেরিকা কি ধরনের মাশূল দিচ্ছে তা আমরা দেখতে পাচ্ছি। কভিড ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আমেরিকায় মৃত্যুর সংখ্যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিহত সেনা সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে।
লকডাউনের যাঁতাকলে পড়ে পঙ্গু হচ্ছে পৃথিবী, বন্ধ হচ্ছে জীবিকার পথ। যার পরিনাম হবে ভয়াবহ, যেখান থেকে ফেরার আর পথ থাকবেনা। পুরো লকডাউন দিয়ে কভিড-১৯ নামের ভাইরাসকে ভেনিস করে দেয়া যাবেনা। গত পাঁচ মাসের অভিজ্ঞতা তাই বলে। তাই করোনাত্তোর নিউ নরমাল পৃথিবীতে, যথাযথ সুরক্ষা-বিধি মেনে চলে করোনার সাথেই বসবাস করার প্রস্তুতি নিতে হবে আমাদের।(চলবে)