avertisements 2

ডেঙ্গু আক্রান্ত স্বামী-স্ত্রী হাসপাতালে, সন্তানরা বাড়িওয়ালার কাছে

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২০ সেপ্টেম্বর, বুধবার,২০২৩ | আপডেট: ০৬:১৫ পিএম, ৩০ এপ্রিল,মঙ্গলবার,২০২৪

Text

ডেঙ্গু আক্রান্ত স্ত্রী পূজা বালাকে গত ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি করেন স্বামী শংকর হালদার। ছোট দুই কন্যাসন্তানকে রেখে যান বাড়িওয়ালার কাছে। এরপর হাসপাতালে দিনরাত স্ত্রীর সেবায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন শংকর। এর ঠিক চারদিন পর গত ১৬ সেপ্টেম্বর তারও জ্বর আসে। নমুনা পরীক্ষায় তারও ডেঙ্গু পজিটিভ ধরা পড়ে। এ অবস্থায় খবর পেয়ে গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকায় ছুটে আসেন শংকরের শ্বশুর-শাশুড়ি। তারাই এখন হাসপাতালে মেয়ে এবং জামাতার সেবায় নিয়োজিত।

হাসপাতালে স্ত্রী ডেঙ্গু ওয়ার্ড পেলেও শংকরের চিকিৎসা চলছে একটি টিনশেড বিল্ডিংয়ের নিচতলার বারান্দায়। চিকিৎসকের পরামর্শে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শংকর জানিয়েছেন, মিটফোর্ড হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে কোনো শয্যা ফাঁকা নেই। ওয়ার্ডের মেঝেতেও অনেক রোগী। সেখানে তারা গাদাগাদি করে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বাধ্য হয়ে তাকে হাসপাতালের একটি টিনশেড বিল্ডিংয়ের নিচতলার বারান্দায় থাকতে হচ্ছে। সেখানকার পরিবেশও তেমন স্বাস্থ্যসম্মত নয়।

মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে মিটফোর্ড হাসপাতালের ওই টিনশেড বিল্ডিংয়ের নিচতলার বারান্দায় বসে সঙ্গে কথা বলতে বলতে হতাশা আর আক্ষেপ ঝরে পড়ে শংকরের কণ্ঠে।

শংকর হালদার বলেন, আমি পপুলার ডায়াগনস্টিকে এক্স-রে বিভাগের এটেন্ডেন্ট। অল্প টাকা বেতন পাই। থাকি বুড়িগঙ্গার ওপারে। সামান্য বেতন দিয়ে কোনোরকমে পরিবার নিয়ে চলি। হঠাৎ স্ত্রীর এমন অসুস্থতায় দৌড়াদৌড়ি করে নিজেও অসুস্থ হয়ে পড়ি। একসঙ্গে দুজন অসুস্থ হওয়ায় ছোট দুই মেয়েও মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। এ অবস্থায় নিজেকে খুব অসহায় লাগছে। গ্রাম থেকে শ্বশুর-শাশুড়ি এসেছেন। তারা কিছুক্ষণ স্ত্রীর কাছে কিছুক্ষণ আমার কাছে থাকছেন। তাদেরও খুব কষ্ট হচ্ছে।

এসময় কোলে শুয়ে থাকা তিন বছর বয়সী মেয়ে ঐশীকে দেখিয়ে তিনি বলেন, আমার স্ত্রী অসুস্থ হওয়ার পর থেকে মেয়েরা ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করে না। সবসময় মনমরা হয়ে থাকে। হাসপাতাল থেকে কবে যে বের হবো, কবে যে সুস্থ হবো, বলতে পারি না।

‘এখন অবস্থা এমন, আমি সুস্থ থাকলে বেশি কষ্ট হতো না। শ্বশুর হাসপাতালের পরিবেশের সঙ্গে অভ্যস্ত নয়। উনারা সবকিছু ঠিকঠাক চেনেনও না’- বলেন ডেঙ্গু আক্রান্ত শংকর।

শংকর হালদারের শ্বশুর-শাশুড়ি জানান, তাদের বাড়ি বরিশাল। মেয়ে ও জামাতার অসুস্থতার কথা শুনে ঢাকায় ছুটে এসেছেন। মেয়ে মিটফোর্ডের দোতলায় নারী ওয়ার্ডে আর জামাতা নিচতলার বারান্দায় ভর্তি। মেয়েকে বেশিক্ষণ একা রাখতে পারেন না। অন্যদিকে বিভিন্ন পরীক্ষার রিপোর্ট আনা-নেওয়া এবং পরীক্ষার জন্য লাইনে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা তাদের জন্য অনেক কষ্টকর। এছাড়া খাবার ও ওষুধ আনতেও অনেক সময় নিচে যেতে হয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, শুধু শংকর হালদার নন, মিটফোর্ড হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডগুলোতে রোগীদের উপচেপড়া ভিড়। ওয়ার্ডগুলোতে তো জায়গা নেই-ই, মেঝেতেও রোগীদের গাদাগাদি। এ হাসপাতালে প্রতিদিন ডেঙ্গুরোগীর চাপ বাড়ছে। হাসপাতাল স্টাফ নার্সদের সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিনই ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা বাড়ছে। রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে তারা হিমশিম খাচ্ছেন।

মিটফোর্ড হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আনোয়ারুল আজিম বলেন, প্রতিদিন রোগীরা সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরছেন। আবার নতুন রোগীও ভর্তি হচ্ছেন। আমাদের এখানে ডেঙ্গুরোগীদের জন্য টিনশেড বিল্ডিংয়ের নিচতলার বারান্দাও প্রস্তুত করা হয়েছে। দোতলায়ও নারী-পুরুষের পৃথক ডেঙ্গু ওয়ার্ড রয়েছে। এছাড়া দুই নম্বর ভবনের মেডিসিন ওয়ার্ডের তিনটি মেঝেতে ডেঙ্গুরোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে রোগীর চাপ প্রতিদিনই বাড়ছে।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2