avertisements 2

প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত সেই রূপাকে ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে বরখাস্ত

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৭ জুন,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ১০:০১ পিএম, ২৫ ডিসেম্বর, বুধবার,২০২৪

Text

ঢাকায় প্রতিরক্ষা মহা-হিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়ের অধীনে ডিফেনস ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্টের অডিটর নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসে জড়িয়ে গ্রেফতার বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদ হারানো সেই মাহবুবা নাসরিন রূপা এবার দুপচাঁচিয়া উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত হলেন। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় স্থানীয় সরকার বিভাগ উপজেলা-০১ শাখার স্মারকে সিনিয়র সহকারী সচিব মমতাজ বেগম স্বাক্ষরিত পত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে। 

বৃহস্পতিবার দুপুরে দুপচাঁচিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন জিহাদী জানান, গত ২ জুন তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে তার সম্মানী ভাতা বন্ধ রয়েছে। জামিন লাভের পর তিনি কয়েক দিন অফিসে এসেছিলেন।মাহবুবা নাসরিন রূপা জানান, তিনি সাময়িক বরখাস্তের চিঠি পেয়েছেন।

স্থানীয় সরকার বিভাগের ওই পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবা নাসরিন রূপা নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি গ্রেফতার হন। অভিযোগের বিষয়টি দুর্নীতি, অসদাচরণ বা ক্ষমতার অপব্যবহারের শামিল মর্মে প্রতীয়মান হওয়ায় উপজেলা পরিষদ আইন ১৯৯৮ উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) আইন-২০১১ দ্বারা সংশোধিত এর ১৩(১)(গ) ধারা অনুযায়ী নির্দেশক্রমে সাময়িকভাবে বরখান্ত করা হলো। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছাত্রলীগ ইডেন কলেজ শাখার সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক, বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও দুপচাঁচিয়া উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবা নাসরিন রূপা উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের ভুঁইপুর গ্রামের মৃত আতাউর রহমানের মেয়ে। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে তিনি বড়। বাবা আতাউর রহমান দীর্ঘদিন ঢাকায় বেসরকারি অফিসের নিরাপত্তা প্রহরীর চাকরি করতেন। গ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে ঢাকায় বাবার কর্মস্থলে লেখাপড়া করেন। ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন।

গত ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে তিনি হঠাৎ করেই ঢাকা থেকে দুপচাঁচিয়ায় এসে ১৪ দল মনোনীত জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য প্রার্থীর পক্ষে গণসংযোগে নামেন। পরে গত ২০১৯ সালের মার্চে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ার পর এলাকায় তার পরিচিতি প্রকাশ পায়। ঢাকার ইডেন কলেজের ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক পরিচয়ে তিনি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের আশীর্বাদ নিয়ে নির্বাচনে মাঠে নামেন। সরকারি দলের পরিচয় দিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে বেশ কয়েকজন নারী প্রার্থীকে ডিঙিয়ে তিনি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। 

নির্বাচিত হবার কিছু দিনের মধ্যেই তার বাবা মারা যান। তারপর শুরু হয় উপজেলা আওয়ামী লীগের নেত্রী পরিচয়ে বিভিন্ন দপ্তরে তার দাপট। নির্বাচনে জিতে শপথ গ্রহণের পর উপজেলা পরিষদের প্রথম মিটিংয়ে তিনি আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের ইশারায় উপজেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান-১ নির্বাচিত হন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকর্মী জানান, রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে থাকা ছবি দেখিয়ে তিনি এলাকায় প্রভাব সৃষ্টি করেন। তার হস্তক্ষেপে হাইব্রিড নেতাদের নিয়ে দুপচাঁচিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি করা হয়। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলেও রূপার সুপারিশ লাগে। এলাকার রাজনীতিতে অবদান না থাকলেও উচ্চমহলের চাপে তাকে জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য পদ দেওয়া হয়। রূপা অনেকের মতো এলাকায় ‘হাইব্রিড’ নেতা হিসেবে পরিচিত।

এদিকে প্রশ্ন ফাঁসে জড়িয়ে গ্রেফতার হওয়ার পর গত ২৩ জানুয়ারি বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আল রাজি জুয়েল স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় মাহবুবা নাসরিন রূপাকে জেলা আওয়ামী লীগের কার্য নির্বাহী কমিটির সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়। এরপরও তিনি দুপচাঁচিয়ায় এলে দাপটের সঙ্গে দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নেন। রূপাকে সাময়িক বরখাস্ত করার খবরে এলাকায় অনেকের মাঝে স্বস্তি দেখা দিয়েছে।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2