খালেদাকে পদ্মা সেতুতে নিয়ে টুস করে ফেলে দেওয়া উচিত: প্রধানমন্ত্রী
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৯ মে,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০৭:০৫ এএম, ২৫ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
পদ্মা সেতুর নির্মাণ এবং প্রকল্প নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ড. ইউনূসের নেতিবাচক ভূমিকার সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে সেতুর ওপর থেকে টুস করে নদীতে ফেলে দেওয়া উচিত এবং ড. ইউনূসকে পদ্মা নদীতে চুবিয়ে তোলা উচিত।’
গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। দলের সভাপতি শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “খালেদা জিয়া বলেছিল, ‘জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতু বানাচ্ছে, ওখানে চড়া যাবে না। চড়লে ভেঙে পড়বে।’ পদ্মা সেতুতে নিয়ে গিয়ে ওখান থেকে (খালেদা জিয়াকে) টুস করে নদীতে ফেলে দেওয়া উচিত। আর যিনি আমাদের একটা এমডি পদের জন্য পদ্মা সেতুর মতো সেতুর টাকা বন্ধ করেছেন, তাকেও আবার পদ্মা নদীতে নিয়ে দুই চুবানি দিয়ে উঠিয়ে নেওয়া উচিত। মরে যাতে না যায়। একটু পদ্মা নদীতে দুইটা চুবানি দিয়ে সেতুতে তুলে দেওয়া উচিত। তাহলে যদি এদের শিক্ষা হয়।”
খালেদা জিয়ার ওই মন্তব্য প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়া জোড়াতালির কথা বলেছিলেন, কারণ স্প্যানগুলো যখন বসানো হচ্ছিল, সেটা তার কাছে জোড়াতালি মনে হয়েছিল।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘পদ্মা সেতুর অর্থ বন্ধ করাল ড. ইউনূস। কেন? গ্রামীণ ব্যাংকের একটি এমডির পদে তাকে থাকতে হবে। তাকে আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম গ্রামীণ ব্যাংকের উপদেষ্টা হতে। উপদেষ্টা থাকা তো আরও উচ্চমানের। সেটা সে ছাড়বে না। অথচ তার বয়সে কুলায় না। ড. ইউনূস কিন্তু আমাদের সরকারের বিরুদ্ধে মামলাও করেছিল। কিন্তু কোর্ট আর যাই পারুক, তার বয়স তো কমিয়ে দিতে পারে না, ১০ বছর। কারণ, গ্রামীণ ব্যাংকের আইনে আছে ৬০ বছর পর্যন্ত থাকতে পারে। তখন তার বয়স ৭১ বছর। এই বয়সটা কমাবে কীভাবে? সেই মামলায় সে হেরে যায়। কিন্তু প্রতিহিংসা নেয়।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘ড. ইউনূস এবং যেটা আমরা শুনেছি মাহফুজ আনাম, তারা আমেরিকায় চলে যায়। স্টেট ডিপার্টমেন্টে চলে যায়। হিলারির কাছে মেইল পাঠায়। যাক, একদিকে শাপেবর হয়েছে। কেন হয়েছে? বাংলাদেশ যে নিজের অর্থায়নে পদ্মা সেতু করতে পারে, সেটা আজকে আমরা প্রমাণ করেছি। কিন্তু আমাদের এখানের একজন জ্ঞানী লোক বলে ফেললেন যে পদ্মা সেতুতে যে রেললাইন হচ্ছে৪০ হাজার কোটি টাকার খরচ হচ্ছে। ৪০ হাজার কোটি টাকা তো ঋণ নিয়ে করা হচ্ছে। এই ঋণ শোধ হবে কীভাবে? দক্ষিণবঙ্গের কোনো মানুষ তো রেলে চড়বে না। তারা তো লঞ্চে যাতায়াত করে। তারা রেলে চড়তে যাবে কেন? এই রেল ভায়াবল হবে না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেতুর কাজ হয়ে গেছে। এখন সেতু নিয়ে কথা বলতে পারছে না। এখন রেলের কাজ চলছে, এখন রেলের কাজ নিয়ে তারা প্রশ্ন তুলেছেন। আমার মনে হয়, আমাদের সবার উনাকে চিনে রাখা উচিত। রেলগাড়ি যখন চালু হবে, তখন উনাকে নিয়ে রেলে চড়ানো উচিত।’
‘নির্বাচন নিয়ে কথা বলার অধিকার নেই বিএনপির, জিয়া নির্বাচনকে কলুষিত করেছে’ : সরকারপ্রধান বলেন, বিএনপি নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলে, তাদের নির্বাচনের ইতিহাস এতটা কলুষিত যে, এ নিয়ে কথা বলার অধিকার তাদের নেই। তিনি বলেন, ‘ঢাকান্ড১ এ ফালু (মোসাদ্দেক আলী ফালু) ইলেকশন করেছিল। সেই ইলেকশনের চিত্র সবাই জানে। এ ছাড়া মাগুরা ইলেকশন নিয়েই আন্দোলন করে আমরা খালেদা জিয়াকে উৎখাত করেছি। মিরপুর ইলেকশনসহ প্রত্যেকটা ইলেকশনের চেহারা আমরা দেখেছি।’ জিয়াউর রহমানের সময়কালে নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘সেই নির্বাচনে ভোটের দরকার পড়েনি। নির্বাচন মানেই সিল মারা, বাক্স ভরা এবং রেজাল্ট ঘোষণা দেওয়া।’
জিয়াউর রহমানের আমলে যতটা নির্বাচন তার সবই এভাবে হয়েছিল। ১৯৮১ সালের প্রহসনের নির্বাচন দেখেছি। ১৯৭৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে কয়টা সিট দেবে, তা আগেই ঠিক করা ছিল। নির্বাচন নিয়ে খেলা, প্রহসন ও নির্বাচনকে কলুষিত করা জিয়াউর রহমানই শুরু করে। সেই সাতাত্তর, আটাত্তর, ঊনআশি সালে শুরু হয়। মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া, গণতন্ত্র কেড়ে নেওয়া, মার্শাল ল দিয়ে রাষ্ট্র চালানো। প্রতি রাতে কারফিউ। ’৭৫-এর পর যে কারফিউ দেওয়া শুরু হয়, সেটা ১৯৮৬ সালে এসে প্রত্যাহার হয়। এটাই ছিল বাংলাদেশের চিত্র। অনেকে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। কিন্তু ’৭৫-এর পর দেখেছি, ভোটের বাক্স ছিনতাই, বাক্স ভরা। প্রতিপক্ষকে আঘাত করা। খুব বেশি দূর যাওয়া লাগবে না, ২০০১ সালের নির্বাচনটি যদি দেখা যায়...। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রহসনের নির্বাচন।’
খালেদা জিয়াকে করুণা ভিক্ষা দিয়েছি : সরকারপ্রধান বলেন, ‘খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে কারাগার থেকে এখন বাসায় থাকার সুযোগ দিয়েছি। অসুস্থ সেজন্য। এটুকু মানবিকতা দেখিয়েছি। যে আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে, তাকেই আমি করুণা ভিক্ষা দিয়েছি, সে বাসায় থাকতে পারে। সাজাপ্রাপ্ত আসামি হলেও তাকে এটুকু সুযোগ দিয়েছি। এটা নির্বাহী আদেশে দেওয়া হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকের বাংলাদেশে আমরা ২০০৯-এর পরে যে সরকার গঠন করেছি, তারপরও আমাদের কম ঝামেলা পোহাতে হয়নি। অগ্নিসন্ত্রাস করে বিএনপি জীবন্ত মানুষগুলোকে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মারে। পেট্রল বোমা মারে। আমরা রাস্তাঘাট বানাই, তারা রাস্তাঘাট কাটে। আমরা বৃক্ষরোপণ করি, তারা গাছ কাটে। এভাবে দেশকে তারা বারবার ধ্বংসের দিকে নেওয়ার চেষ্টা করেছে। সরকার উৎখাত করার তারা উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত। তাদের ডাকে তো জনগণ সাড়া দেয়নি।’
বিএনপির সময়ের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছে। ওই ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় এবং একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি তারেক জিয়া। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে মুচলেকা দিয়েছিল জীবনে কোনো দিন রাজনীতি করবে না। এই মুচলেকা দিয়েই কিন্তু দেশ ছেড়ে চলে যায়। কিন্তু এই মামলায় বিচারের রায়ে সে সাজাপ্রাপ্ত। এতিমের অর্থ আত্মসাতের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া।’
১৯৭৫ সালের প্রেক্ষাপট নিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখলের পর সেনাপ্রধান, স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি, এরপর আবার রাষ্ট্রপতি প্রার্থী। এরপর দল গঠন শুরু। প্রথমে জাগো দল, তারপর ১৯ দফা বাস্তবায়ন কমিটি। তৃতীয় ধাপে এসে বিএনপি। সেখানে যত রকমের স্বাধীনতাবিরোধী ও খুনিরা যুক্ত হয়। আমাদের দলের কিছু বেইমানও যুক্ত হয়। খন্দকার মোশতাকও চেষ্টা করেছিল আওয়ামী লীগকে ভাঙতে, কিন্তু পারেনি। এরপর জিয়াও এই চেষ্টা করে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে নির্বাচনের যতটুকু উন্নতি আমরা করেছি, সেগুলো আমাদেরই সিদ্ধান্ত। আমাদেরই চিন্তা। ছবিসহ ভোটার তালিকা, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ইভিএমএকটা আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে, এর সবকিছু তো আমরা...। নির্বাচনে যাতে মানুষ ভোট দেবার অধিকার পায়, সে অধিকারটাই তো সব থেকে বড়। সেটাই আমরা করতে চেয়েছি। এটা নিয়ে তো তাদের প্রশ্ন তোলার কোনো অর্থই হয় না। কারণ, আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে নির্বাচিত। আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটের অধিকার জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছে। গণতান্ত্রিক অধিকার জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার আমলে, জিয়ার আমলে, এরশাদের আমলে তাদের কি কথা বলার কোনো সুযোগ ছিল? কতটুকু অধিকার ভোগ করত তারা? বেসরকারি টেলিভিশন এত দিয়ে দিয়েছি যে, সারা দিন-রাত টকশো করে। আমি মাঝে মাঝে বলি, এত টক টক কথা না বলে একটু মিষ্টি মিষ্টি কথা বলেন। কত আর টক টক কথা বলবেন। টকশো তারা করে যাচ্ছে। কেউ তো তাদের গলা চিপে ধরেনি। মুখ চেপেও ধরি না। কথা বলেই যাচ্ছে। তবে হ্যাঁ, সব কথা বলার শেষে বলে কথা বলতে দেওয়া হয় না।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপির এক নেতা তো সারা দিন মুখে মাইক লাগিয়েই আছে। সারাক্ষণ কথা বলেই যাচ্ছে। একবার কথা বলতে বলতে গলায় অসুখও হলো। যাক, চিকিৎসা করে এসে আবার কথা বলছে। তার কথা তো কেউ বন্ধ করছে না। তাদের আন্দোলনে যদি জনগণ সাড়া না দেয়, সে দোষটা কাদের? রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে যে অর্থনীতিবিদ সমালোচনা করেই যাচ্ছেনতাকে আমি বলব, তিনি কি এটা প্রকৃতপক্ষে জেনেই বলছেন, নাকি না-জেনে বলছেন? আমি তার জ্ঞান নিয়ে কোনো প্রশ্ন তুলব না, তারা অনেক ভালো লেখাপড়া জানেন। কিন্তু একটা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ পেয়ে মানুষের, একটা জাতির যে কতটুকু উন্নতি হতে পারে, সেটা আজকের বাংলাদেশ। বাংলাদেশের উন্নয়নটা বাইরের লোকও দেখে, কিন্তু তারা দেখে না।’
স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পরের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে আমাকে সভাপতি করা হয়। একজন রাজনৈতিক কর্মী ছিলাম। ছাত্রলীগের সদস্য ছিলাম। তবে প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে স্কুলজীবন থেকেই সক্রিয় ছিলাম। কিন্তু আওয়ামী লীগের মতো একটি সংগঠনে আসব কখনো ভাবিনি। আমি কখনো চিন্তা করিনি। যেদিন এই ঘোষণাটা আসে, রেহানা আমার কাছেই ছিল। আমরা সিদ্ধান্ত নিই, আমি দেশে আসব। যাহোক আমি ফিরে আসি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশে ফেরার পর আমার একটাই কাজ ছিল দলকে সুসংগঠিত করা। আওয়ামী লীগের নির্যাতিত নেতাকর্মী ও তাদের পরিবারের খবর নেওয়ার চেষ্টা করি।’ কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো ১৯৮২ সালে আমাদের পার্টিটা আবার ভাগ হয়ে গেল। যেটা খুবই অনাকাক্সিক্ষত ছিল। ভাগটি করল তারাই, যাদের ওপর বেশি ভরসা করেছিলাম এবং প্রবাসে থেকে যাদের সংগঠন গড়ে তুলতে সহযোগিতা করেছিলাম। যাদের বেশি সহযোগিতা করেছি, আমি আসার পর তারাই বেইমানি করে চলে গেল এবং তারা দলের একটি ভালো অংশই নিয়ে বেরিয়ে যেতে সক্ষম হয়।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৪১তম ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে নির্মমভাবে নিহত হন। এ সময় তার দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা প্রবাসে থাকায় ঘাতকদের হাত থেকে রেহাই পান। পরবর্তী সময়ে ১৯৮১ সালের ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। এরপরই ৬ বছর প্রবাসজীবন কাটাতে বাধ্য হওয়া শেখ হাসিনা সে সময়কার সামরিক জান্তার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে একরকম জোর করেই ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন।