উন্নয়ন না দেখলে চোখের ডাক্তারের কাছে যান: প্রধানমন্ত্রী
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৮ মার্চ,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ০৭:০১ এএম, ২৫ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
সরকারের উন্নয়ন যারা দেখে না তাদের চোখের চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, অনেকে আছে দেশে কোনও উন্নতি দেখে না। তাদের চোখে কোনও উন্নয়নই নাকি দেশে হয়নি। তাদের যদি চোখ খারাপ থাকে আমার কিছু বলার নেই। এখন বলতে হয়, আমরা তো একটি আই ইনস্টিটিউট করে দিয়েছি। যারা বক্তৃতা দেয় উন্নয়ন হয় না, চোখে দেখে না, আমার মনে হয় তাদের চোখ একটু পরীক্ষা করা দরকার। তাহলে হয়তো দেখতে পারে উন্নয়ন হয়েছে কিনা?
রবিবার (২৭ মার্চ) মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা জানি অনেকে আছে দেশে কোনও উন্নতি দেখে না। তাদের যদি চোখ খারাপ থাকে আমার কিছু বলার নেই। কেন দেখে না? সেটা হচ্ছে দেখার ইচ্ছে নেই তাই দেখে না। কিন্তু উন্নয়নের কর্মসূচি সুপরিকল্পিতভাবে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। ইশতেহারে যে ঘোষণা দিয়েছি তা একে একে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।
বিএনপিসহ যারা সরকারের উন্নয়ন চোখে দেখে না তাদের উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের চোখে পড়ে না যে শতভাগ বিদ্যুৎ। ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ তো বিদ্যুৎ ছাড়া চলতে পারে না। ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ তারাও নিচ্ছে। এটা উন্নতি নয়? আজকে পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র—এগুলো চোখে পড়ে না। এগুলো উন্নয়নের লক্ষণ নয়? দারিদ্র্য হার হ্রাস পেয়েছে সেটা তাদের চোখে পড়ে না। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা তাদের চোখে উন্নয়ন নয়।
বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র নাকি নেই। গণতন্ত্র নাকি ধ্বংস করে ফেলেছি। তাদের গণতন্ত্রের ডেফিনেশনটা কী? যাদের জন্ম জনগণের মধ্য থেকে হয়নি, জন্ম হয়েছে সেনা ছাউনিতে ক্ষমতা দখলকারী পকেট থেকে। তারা এখন আমাদের গণতন্ত্র শেখায়।
তিনি বলেন, কাদের মুখে গণতন্ত্রের ছবক শুনতে হয় সেটাই বড় কথা। যাদের জন্ম হয়েছে অগণতান্ত্রিকভাবে, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের মধ্য দিয়ে। সেই ধরনের ক্ষমতা দখলকারী অবৈধভাবে তাদের হাতে বিএনপির জন্ম। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান সেনাপ্রধান থেকে ক্ষমতা দখল করে রাষ্ট্রপতি হয়েছিল। ক্ষমতা নিষ্কণ্টক করার জন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সেনা সদস্যদের হত্যা করেছে। কত পরিবার তাদের আপনজনের লাশটিও পায়নি। হাজার হাজার সেনা সদস্যকে যারা হত্যা করেছে তাদের কাছ থেকে আজ আমাদের গণতন্ত্রের ছবক শিখতে হবে, এটাই জাতির দুর্ভাগ্য।
শেখ হাসিনা বলেন, উচ্চ আদালত থেকেই জিয়াউর রহমান ও এরশাদের ক্ষমতা দখলকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। কারণ, সংবিধান ও সামরিক আইন রুলস ভঙ্গ করে নিজেদের রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়ে ক্ষমতা দখল করেছিল তারা। তারপর হ্যাঁ-না ভোট, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, দল গঠন করে পুরো রাজনীতিতে অবতরণ। প্রথমে ক্ষমতার উত্তরণ তারপর রাজনীতিতে অবতরণ। তারা আসে রাজনীতিবিদদের গালি দিয়ে, পরে আবার নিজেরাই উর্দি খুলে রাজনীতিবিদ হয়ে যায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বিশ্বের কাছে এখন বাংলাদেশকে ভিক্ষা চেয়ে চলতে হয় না। বাঙালিদের মাথা নত করে চলতে হয় না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ মানুষকে ঘরবাড়ি করে দিয়ে পুনর্বাসন করেছি। এই কাজটি করতে গিয়ে আমরা মুজিববর্ষের কর্মসূচি কিছু কাটছাঁট করেছি। কেউ গৃহহীন, ভিটাহীন থাকবে না এটাই আমাদের লক্ষ্য। নদী ভাঙনপ্রবণ এলাকায়ও আমরা এমন ঘর করে দিচ্ছি যেটা ভাঙনের আশঙ্কা দেখা গেলে দ্রুত সরিয়ে নিতে পারে। আমাদের লক্ষ্য এই দেশে কোনও মানুষ গৃহহীন থাকবে না, ভূমিহীন থাকবে না, অন্ধকারে থাকবে না।
তিনি বলেন, আমরা প্রত্যেকের ঘর আলোকিত করার ঘোষণা দিয়েছিলাম। আমরা সেটা করতে সক্ষম হয়েছি। প্রত্যেকটি গ্রামে কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।
সরকার প্রধান বলেন, আমরা বিনা পয়সায় করোনার পরীক্ষা ও ভ্যাকসিন দিয়েছি। অনেক উন্নত দেশও এটা পারেনি। বাজেটে আলাদা করে হাজার হাজার কোটি টাকা রেখে দিয়েছি। আমাদের কথা যত টাকা লাগুক, যেখান থেকেই হোক ভ্যাকসিন আনবো। দেশের মানুষকে দেবো। আমরা সেটা দিতে সক্ষম হয়েছি। ৭৩ শতাংশ মানুষ ভ্যাকসিন পেয়ে গেছে। আগামীকাল থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত আবারও গণটিকা দিতে হবে। যারা দ্বিতীয় ডোজ নেয়নি সেটা আমরা দেবো। আমরা একদিনে এক কোটি ২৩ লাখ করোনার টিকা দিয়ে রেকর্ড করেছি। এবার কেউ যেন ভ্যাকসিন নিতে বাদ না থাকে সেটা দেখতে চাই। প্রথম ডোজ, দ্বিতীয় ডোজ, তৃতীয় ডোজ দেওয়া হবে।
খাদ্য ও জীবিকার চাহিদা সরকারের লক্ষ্য উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, করোনার ধাক্কা ও যুদ্ধাবস্থা সবকিছু মিলে খাদ্যভাবটা সারা বিশ্বে দেখা দিতে পারে। সেজন্য আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। এজন্য আমি আগেই বলেছি কোথাও যেন এক ইঞ্চি জমি অনাবাদি না থাকে। যার যেটুকু আছে সেটুকু করবে।