avertisements 2

চলতি মাসের শেষে ছড়িয়ে পড়তে পারে ওমিক্রন

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৭ জানুয়ারী,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ১১:৫৯ পিএম, ২৭ ফেব্রুয়ারী,মঙ্গলবার,২০২৪

Text

চলতি মাসের শেষে দেশে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তবে বর্তমানে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে কেউ আক্রান্ত হচ্ছেন না। তাই চিন্তিত না হয়ে সবাইকে সতর্ক হতে হবে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, 'পর্যটন স্পটগুলোতে লাখ লাখ মানুষের সমাগমে যা হওয়ার তা ইতোমধ্যে হয়ে গেছে। সরকারের উদাসীনতা ও সিদ্ধান্তহীনতার কারণে সংক্রমণ বাড়ছে, সামনে আরও বাড়বে।'

এদিকে ওমিক্রন ঠেকাতে আরও নতুন কিছু নির্দেশনা কয়েকদিনের মধ্যেই জারি করা হবে বলে জানা গেছে। চলতি মাসের ১ তারিখ থেকে ৫ তারিখ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩ হাজার ২৬৮ জন। ১ জানুয়ারি ৩৭০, ২ জানুয়ারি ৫৫৭, ৩ জানুয়ারি ৬৭৪, ৪ জানুয়ারি ৭৭৫ ও ৫ জানুয়ারি ৮৯২ জন আক্রান্ত হয়েছেন। গত বছরের শেষ পাঁচ দিনে মোট সংক্রমিত হয়েছিল ২ হাজার ২৮৬ জন। ২৭ ডিসেম্বর ৩৭৩, ২৮ ডিসেম্বর ৩৯৭, ২৯ ডিসেম্বর ৪৯৫, ৩০ ডিসেম্বর ৫০৯ ও ৩১ ডিসেম্বর ৫১২ জন সংক্রমিত হয়েছে।

সে হিসাবে শেষ ৩ দিনে সংক্রমণের সংখ্যা বাড়তে থাকে। এদিকে, প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছেই। এই অবস্থায় ১৫ দফা বিধিনিষেধ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এমনকি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আরও বেশ কিছু নতুন বিধিনিষেধ জারি হতে পারে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। ইতোমধ্যে বলা হয়েছে, রেস্টুরেন্টে খেতে হলে থাকতে হবে ডাবল ডোজ ভ্যাকসিনেশন সার্টিফিকেট। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সব কিছুই করা হচ্ছে সংক্রমণ ঠেকাতে। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এএসএম আলমগীর গণমাধ্যমকে বলেন, রাজধানীসহ দেশের ১১ এলাকা থেকে নমুনা সংগ্রহ করে জিনোম সিকোয়েন্স করা হচ্ছে। দেশে এখন পর্যন্ত ওমিক্রনের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়নি।

তবে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। এটি ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট বলেও জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, বিদেশ ফেরত কয়েকজনের নমুনা পরীক্ষায় ওমিক্রন ধরা পড়েছে। তারপর তাদের মাধ্যমে পরিবারের অন্য সদস্যদের ধরা পড়েছে। এটাকে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বলা যায় না। এই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আরও বলেন, সাউথ আফ্রিকা থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়েছে। আমাদের দেশে হয়তো এই মাসের শেষ দিকে অথবা আগামী মাসের শুরুর দিকে ওমিক্রনের সামাজিক ট্রান্সমিশন শুরু হতে পারে।

এখন পর্যন্ত দেশে ১০ জন ছাড়া ওমিক্রন আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়নি। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে বর্তমানে দেশে যে ভ্যারিয়েন্টটি আছে (ডেল্টা পস্নাস ও ডেল্টা) সেটি কিন্তু আরও মারাত্মক ভ্যারিয়েন্ট। তাই আমাদের সতর্ক হওয়া খুবই জরুরি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) ফরিদ মিয়া যায়যায়দিনকে বলেন, আমাদের হাসপাতালের সিট খালি পড়ে আছে। রোগী বাড়লে সেগুলোতে জায়গা দেওয়া যাবে। তারপর যদি অতিরিক্ত বাড়ে তবে আমরা যেসব হাসপাতালে নন-কোভিড রোগীদের ভর্তি করছিলাম সেটা বন্ধ করে দেব।

সে সিটগুলোকে কোভিড ডেডিকেটেড সিটে পরিণত করব। তিনি আরও বলেন, রাজধানীতে বর্তমানে সরকারি সিট আছে ৩ হাজার ১৪৫টি, যার মধ্যে খালি আছে ২৮৫৭টি। আর বেসরকারি সিট আছে ১ হাজার ৪৭১টি, যার মধ্যে খালি আছে ১ হাজার ৩৮১টি। ওমিক্রন নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা যায়যায়দিনকে বলেন, এখনো ওমিক্রন ছড়াতে শুরু করেনি। কারণ এটি খুব দ্রম্নত ছড়ায়। কিন্তু আমাদের এখানে আক্রান্তের সংখ্যা দেখে তা মনে হচ্ছে না। তারপরও আমাদের জিনোমসিকোয়েন্সিং চলছে।

এলাকাভিত্তিক সিকোয়েন্সিং চলছে। যাকে আমাদের সন্দেহ হচ্ছে তাদের স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আনা হচ্ছে। তিনি বলেন, ওমিক্রন যাতে ছড়াতে না পারে সেজন্য বেশ কিছু নতুন সিদ্ধান্ত কয়েকদিনের মধ্যেই জানানো হবে। আমরা ওমিক্রন ঠেকাতে কাজ করছি। বিদেশ থেকে যাতে ওমিক্রন নিয়ে কেউ দেশে ঢুকতে না পারে সেদিকেও লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। আপাতত আমরা বর্ডারগুলোতে স্ক্রিনিং বাড়িয়েছি। দেশবাসীকে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। ২৫০ শয্যার টিবি হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আয়শা আক্তার বলেন, এখনই ভয় পাওয়ার কিছু নেই।

আমরা সতর্ক হলে এই অবস্থা থেকেও উত্তরণ ঘটানো সম্ভব। সবাই যদি নিয়মিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাফেরা করে তাহলে ওমিক্রন কমিউনিটি ট্রান্সমিশন ঘটাতে পারবে না। সেজন্য আমাদের নিজেদেরই আগে সচেতন হতে হবে। তিনি বলেন, ওমিক্রন ইতোমধ্যে বিশ্বের প্রায় একশর বেশি দেশে ঢুকেছে। আমাদের দেশেও আসছে। এই ভ্যারিয়েন্টটি সংক্রমিত করতে পারে খুবই দ্রম্নত। তাই সবাইকে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। হাত বার বার সেনেটাইজ বা সাবান দিয়ে ধুতে হবে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, মানুষকে দুই ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নিজেদের ভুলের কারণে সবাইকে টিকার আওতায় আনতে পারেনি সরকার। যার কারণে অনেক মানুষ করোনা টিকাদান কার্যক্রমের আওতার বাইরে আছে। আর যারা টিকা নিয়েছেন তারা যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে।

এসব মিলিয়ে একটি হযবরল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, গত এক সপ্তাহে তো অনেক মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। এর কারণ ইচ্ছামতো মাস্ক ছাড়া ঘোরাফেরা করা এবং সব পর্যটন স্পট খুলে দেওয়া। যার উৎকৃষ্ট উদাহরণ কক্সবাজারে লাখ লাখ মানুষের সমাগম। এত মানুষের সমাগমে কি করোনা ছড়ায়নি। অবশ্যই ছড়িয়েছে। তারই ফল এখন দেখা যাচ্ছে। প্রসঙ্গত, ১১ ডিসেম্বর জিম্বাবুয়ে ফেরত দুই নারী ক্রিকেটারের ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট ধরা পড়ে। এরপর আরও আটজনের ধরা পড়ে একই ভ্যারিয়েন্ট। সব মিলিয়ে দেশে করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হয়েছেন ১০ জন।


 

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2