‘স্বপ্নেও ভাবিনি আমরা পাকা ঘরে বসবাস করব’
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৪ এপ্রিল,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ০৮:৫৩ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
‘স্বপ্নেও ভাবিনি আমরা পাকা ঘরে বসবাস করব। ইট, সিমেন্ট কিনে ঘর বানাব, এটা কল্পনাতেও ছিল না। ৪০ বছর ধরে স্বামীসহ তিন ছেলে নিয়ে খড়ের ঘরে থাকতাম। জায়গা-জমি নাই। বর্তমান সরকার জমি দিয়েছে। পাকা ঘর করে দিয়েছে। প্রতিটি ঘরে বিদ্যুতের লাইন দিয়েছে। আর কিছু চাই না।’ কথাগুলো বলছিলেন লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার কালীরহাট আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৪ নম্বর ঘরের বাসিন্দা দিনমজুর আবুল কাশেমের স্ত্রী আবিজান নেছা।
ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২৬ নম্বর ঘরের বাসিন্দা নুরুল হক বলেন, ‘ঝড়, বৃষ্টিতে অনেক রাত না ঘুমিয়ে কাটাতে হয়েছে। টাকার অভাবে নষ্ট টিন পরিবর্তন করতে না পারায় পুরো ঘরে বৃষ্টির পানি পড়ত। গা ভিজে যেত। অনেক দিন দুই মেয়েকে নিয়ে খুব কষ্ট করে থেকেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য দোয়া করি। আল্লাহ উনার ভালো করুন। উনি আমার মতো অনেক গরিব মানুষ যাদের ঘর করার সাধ্য নেই, তাঁদের পাকা ঘর করে দিয়েছেন। এখন দুমুঠো ডাল ভাত খেয়ে চিন্তা ছাড়াই ঘুমাতে পারি। অনেক শান্তিতে আছি।’
পাটগ্রাম উপজেলার সাত ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে ১২৩টি ঘর, দ্বিতীয় পর্যায়ে ৬৫টি ও তৃতীয় পর্যায়ে ২০২টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। এসব ঘর নির্মাণে সরকার অর্থ বরাদ্দ দেয় ৪ কোটি ২০ লাখ টাকা। ইতিমধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৮৮টি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর উপজেলার পাটগ্রাম ইউনিয়ন, বাউরা ইউনিয়ন, বুড়িমারী ইউনিয়ন, শ্রীরামপুর ইউনিয়ন, জগতবেড় ইউনিয়ন ও কুচলিবাড়ী ইউনিয়ন, জোংড়া ইউনিয়নে নির্মাণ করা হয়েছে। দহগ্রাম ও অন্যান্য ইউনিয়নে আবারও প্রয়োজনীয় ঘর নির্মাণ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৮৮টি গৃহহীন পরিবারকে ঘর হস্তান্তর করে পুনর্বাসন করা হয়।
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে গৃহহীনদের ঘর নির্মাণের জন্য তৃতীয় পর্যায়ে ২০২টি ঘর নির্মাণ বরাদ্দ পাওয়া যায়। ইতিমধ্যে পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুর রহমান পর্যায়ক্রমে খাসজমি উদ্ধার করে ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন।
জানা গেছে, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে বসবাসরত আটটি পরিবারকে বাঁশ, বেতের প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী করতে প্রতি পরিবারের প্রধানকে ১৮ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আগ্রহীদের স্বাবলম্বী করতে উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মাধ্যমে সেলাই প্রশিক্ষণ দিয়ে সেলাই মেশিন প্রদান ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে কৃষির ওপর প্রশিক্ষণ দিয়ে পুষ্টির চাহিদা পূরণে পারিবারিক পুষ্টি বাগান তৈরিতে বীজ, সার, কীটনাশক দেওয়া হয়। আশ্রয়ণ প্রকল্পের পরিবারের মাঝে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট, নলকূপ স্থাপন ও বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে।
পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুর রহমান বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণে খাসজমি উদ্ধার ও ভূমিহীন জরিপে বেশ সমস্যায় পড়তে হয়। খাসজমি সাধারণত সমাজের উচ্চবিত্তদের দখলে থাকে। এ সব খাসজমি পুনরুদ্ধার করে সমাজের নিম্ন আয়ের ছিন্নমূল, অসহায় মানুষের অনুকূলে বন্দোবস্ত দেওয়া হচ্ছে।