ফিলিং স্টেশন থেকে সিলিন্ডারে ভরে গ্যাস বিক্রি!
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২ সেপ্টেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ১২:৫১ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
কক্সবাজারের টেকনাফে নাফ পেট্রল সার্ভিস নামের একটি (এলপিজি) ফিলিং স্টেশনে ঝুঁকি নিয়ে সিলিন্ডারের বোতলে ভরে গ্যাস বিক্রি করা হচ্ছে। নিয়মনীতির কোনো তোয়াক্কা না করেই ঝুঁকিপূর্ণভাবে এসব বহনযোগ্য বোতলে ভর্তি করে এলপিজি গ্যাস বিক্রি করে যাচ্ছেন তারা।
এতে যে কোনো সময় ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা ঘটে প্রাণহানির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তার পরও দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনের নাকের ডগায় এ ঘটনা ঘটলেও রহস্যজনক কারণে তাদের কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।
অথচ বিস্ফোরক আইনে বলা আছে— 'স্বয়ংক্রিয় ইঞ্জিনে জ্বালানি সরবরাহ কাজে নিয়োজিত এলপিজি বিতরণ স্টেশন হতে মোটর যানে বা অন্য কোনো স্বয়ংক্রিয় ইঞ্জিনের সঙ্গে সংযুক্ত জ্বালানি ধারণ পাত্র ব্যতীত অন্য কোনো বহনযোগ্য পাত্রে এলপিজি ভর্তি করা যাবে না'। আর এ আইন ব্যাহত হলে ২-৫ বছরের কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে ছয় মাস কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টেকনাফ পৌর শহরের প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত নাফ পেট্রল সার্ভিস শুরু থেকে যানবাহনে ডিজেল ও পেট্রলজাতীয় জ্বালানি সরবরাহ করে আসছিল। পরে ২০১৮ সালের দিকে এলপিজি গ্যাস বিক্রির অনুমোদন পায় প্রতিষ্ঠানটি। অনুমোদন পাওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই তারা শুরু করে পাইকারি ও খুচরাভাবে বহনযোগ্য বোতলে এলপিজি ভর্তির অবৈধ কারবার।
প্রতিষ্ঠানটির একজন কর্মকর্তা স্বীকার করে জানান, প্রতিদিন যানবাহনে গ্যাস সরবরাহের পাশাপাশি অন্তত দেড়শ থেকে আড়াইশ পর্যন্ত সিলিন্ডারে গ্যাস ভর্তি করেন তারা।
সেখানে গ্যাস নিতে আসা ক্রেতাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বললে তারা জানান, গ্যাস বিক্রয় কেন্দ্রগুলো থেকে এক সিলিন্ডার গ্যাস নিতে গেলে এক হাজার ৫০ থেকে ১১শ টাকা লাগে। কিন্তু এখানে ৫০০ টাকা দিলেই ১০ লিটার গ্যাস পাওয়া যায়। তবে এভাবে গ্যাস নেওয়া অনিরাপদ ও অপরাধ সে বিষয়ে তারা অবগত নন বলেও জানান তারা।
অভিযোগ রয়েছে— বিভাগীয় কার্যালয়ের এক কর্মকর্তার সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের এক মালিকের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তার ক্ষমতার বলেই অবৈধভাবে বাজারদর থেকে একশ টাকা কম দামে বিক্রি করা হচ্ছে এসব গ্যাস। আর বিভিন্ন কোম্পানির বোতল সংগ্রহ করে নিজেদের রিজার্ভার থেকে গ্যাসভর্তি করছেন তারা। ফলে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগে গড়ে ওঠা স্থানীয় বিক্রয় কেন্দ্রগুলোতে প্রভাব পড়ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এভাবে সিলিন্ডারে গ্যাস ভর্তির প্রক্রিয়া মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। ভর্তিকালীন বিস্ফোরণ হয়ে শতভাগ মৃত্যুঝুঁকি রয়েছে। ঝুঁকি এড়াতে অনুমোদিত কোম্পানিগুলো স্বয়ংক্রিয় আধুনিক মেশিনের মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এলপি গ্যাস বাজারজাত করে। এসব স্টেশনের কারণে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব।
এই বিষয়ে জানতে নাফ পেট্রল সার্ভিসের পরিচালক ইকবাল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি তিন দিন পর্যন্ত দফায় দফায় ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান। পরে ফোন রিসিভ করাও বন্ধ করে দেন।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিস্ফোরক পরিদর্শক তোফাজ্জল হোসেন জানান, বিষয়টি তারা অবগত হয়েছেন এবং এই সংক্রান্ত কিছু ছবিও দেখেছেন। লোকবলের অভাবে পরিদর্শনে যেতে দেরি হচ্ছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হবে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও পারভেজ চৌধুরী জানান, নাফ পেট্রল সার্ভিসের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য এসিল্যান্ডকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।