কক্সবাজারে উত্তাল সাগরে প্রতিমা বিসর্জন
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৫ অক্টোবর,
বুধবার,২০২৩ | আপডেট: ০৯:০৪ পিএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’র প্রভাবে উত্তাল সাগরে প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে প্রতিমা বিসর্জন দিলেন পূজার্থীরা। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত চলে প্রতিমা বিসর্জন। তবে প্রতিবারের মতো এবার সৈকতে প্রতিমা বিসর্জন দেখতে পর্যটকদের তেমন একটা ভিড় ছিল না। বিসর্জন উৎসবেও লোকজনের উপস্থিতি ছিল কম।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বেন্টু দাশ বলেন, কক্সবাজার জেলায় এবার মোট ৩১৫টি পূজা ছিল। এরমধ্যে প্রতিমা পূজার সংখ্যা ১৫১টি ও ঘটপূজার সংখ্যা ছিল ১৬৪টি।
তিনি বলেন, অতীতের মতো এবারও বিসর্জন উৎসবে পাঁচ লাখ মানুষের সমাগম আশা করা হয়েছিল। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব এবং ভারী বৃষ্টির কারণে লোকসমাগম কমে গেছে। চকরিয়ার শতাধিক প্রতিমা সেখানকার মাতামুহুরী নদী, রামুর শতাধিক প্রতিমা বাঁকখালী নদী এবং কক্সবাজার পৌরসভাসহ অন্যান্য এলাকার তিন শতাধিক প্রতিমা সমুদ্রসৈকতের লাবনী পয়েন্টে বিসর্জন দেওয়া হয়েছে।
বিসর্জনের আগে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে বিকেল ৪টায় শুরু হয় প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠান। জেলা পূজা পরিষদের সভাপতি উজ্জ্বল কর এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, আশেক উল্লাহ রফিক, জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান, পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম প্রমুখ।
জেলা পূজা পরিষদের সভাপতি উজ্জ্বল কর জানান, এবার জেলায় নির্বিঘ্নে পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পূজার প্রতিটা দিন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে করতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশসহ সর্বস্তরের রাজনৈতিক নেতাদের সহযোগিতায় ভালভাবে সম্পন্ন হয়েছে। কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই পূজা অনুষ্ঠিত হওয়ায় আমরা সকলের কাছে কৃতজ্ঞ।
জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’র প্রভাবে ধীরে ধীরে উত্তাল হয়ে উঠছে বঙ্গোপসাগর। বেড়েছে জোয়ারের পানি। মঙ্গলবার ভোর থেকে কক্সবাজার শহরে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। সকালে কক্সবাজার উপকূলে ৬ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হলেও সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় তা ৭ হয়েছে। এমন বৈরী পরিবেশের মধ্যেই কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পর্যটকেরা ঝুঁকি নিয়ে উত্তাল সমুদ্রে গোসল করতে নামছেন। পাশাপাশি প্রতিমা বিসর্জন দিয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। ট্যুরিস্ট পুলিশ, লাইফগার্ড কর্মীরা নানাভাবে চেষ্টা করেও পর্যটকদের সমুদ্র থেকে তুলে আনতে পারেননি।
বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সৈকতের লাবণী পয়েন্ট ঘুরে দেখা যায়, উত্তাল সমুদ্রেই শতশত পর্যটক সাগরে গোসল করতে নেমেছেন। এ সময় বেসরকারি লাইফগার্ড প্রতিষ্ঠান সি সেফ লাইফগার্ডের ২০ জন কর্মীকে বালুচরে দাঁড়িয়ে বাঁশি বাজিয়ে পর্যটকদের উঠে আসার জন্য আহ্বান জানাতে দেখা গেছে। এ ছাড়া উত্তাল সাগরে নামতে নিষেধ করে সৈকতে একাধিক লাল নিশানা (পতাকা) ওড়ানো হলেও তা মানছেন না পর্যটকরা।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, দুর্যোগের মধ্যেও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’র প্রভাবে কক্সবাজার উপকূল উত্তাল হলেও ঝুঁকি কম। কারণ, ঘূর্ণিঝড় হামুন ভোলা উপকূলে আঘাত হানার সম্ভাবনা বেশি। তারপরও পূজার্থী এবং পর্যটকদের নিরাপত্তায় ডুবুরি প্রস্তুত রাখা ছিল।
কক্সবাজারে প্রস্তুত ৫৭৬ আশ্রয়কেন্দ্র-১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক
ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ মোকাবিলায় কক্সবাজারে ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র এবং ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার প্রস্তুতি সভা শেষে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’র সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় জেলার ৯ উপজেলায় ১৪ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ৫ লাখ ৫ হাজার ৯৯০ জনের ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন জেলার ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়াও ১১ লাখ ২৫ হাজার নগদ টাকা, ৬৪০ মেট্রিক টন চাল ও ৭০০ বান্ডিল ঢেউটিন মজুদ আছে বলে জানান তিনি। পাশাপাশি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে ৫ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবারের চাহিদা পাঠানো হয়েছে।