avertisements 2

বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, অষ্ট্রেলিয়ার উদ্যোগে জেল হত্যা দিবস পালন

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১১:২৩ পিএম, ১১ নভেম্বর, বুধবার,২০২০ | আপডেট: ০৯:৪৬ এএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪

Text

গত ৭ই নভেম্বর (২০২০) শনিবার বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, অষ্ট্রেলিয়া শাখার উদ্যোগে এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জেল হত্যা দিবস পালন করা হয়।  বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, অষ্ট্রেলিয়ার সভাপতি মোল্লা মোঃ রাশিদুল হকের সভাপতিত্বে এবং সাংগঠনিক সম্পাদক হাসিনা চৌধুরী মিতার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, অষ্ট্রেলিয়ার নতুন কমিটির সবাইকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। অতঃপর ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট এবং ৩রা নভেম্বরে শহীদ সকলের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর জেল হত্যা দিবসের প্রেক্ষাপট নিয়ে এক প্যানেল আলোচনার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহনকারী সবাই এই ব্যাপারে তাদের অভিমত ব্যক্ত করেন।
 
এরপর এক তথ্য ও গবেষণামূলক অনলাইন আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাংগঠনিক সম্পাদক হাসিনা চৌধুরী মিতা। তিনি বঙ্গবন্ধুর জীবনী নিয়ে আলোচনা করা ছাড়াও বঙ্গবন্ধু এবং জাতীয় চার নেতার হত্যাকারীদের বিচারের উপর আলোকপাত করেন। তিনি বলেন খুনী মুশতাক আহমেদ কখনোই বঙ্গবন্ধু বা বাংলাদেশের বিশ্বাস করতেন না এবং তার নির্দেশে জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়। ফাইন্ডেশনের সাধারন সম্পাদক ড. সানিয়াত ইসলাম তার বক্তব্য বঙ্গবন্ধুর তৈরী করা দ্বিতীয় কমান্ড লাইন জাতীয় চার নেতার মুক্তিযুদ্ধে অবদান নিয়ে ভবিষ্যতে কাজ করার অভিপ্রায় ব্যাক্ত করেন। তিনি ইংল্যান্ডে অবস্থানরত বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এবং জঙ্গি অর্থ যোগানদাতা, ১৯৭১ সালের আলবদরের প্রধান মইনুদ্দিন চৌধুরীকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের দাবী জানান। 
 
বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, অষ্ট্রেলিয়ার উপদেস্টা এবং মেলবোর্ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. মাহবুবুল আলম বাংলাদেশের জন্যে যারা জীবন দিয়েছেন তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে তার বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডসহ, বুদ্ধিজীবী এবং চার জাতীয় নেতার খুনীদের দেশের ফিরিয়ে নিতে যেতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের সাহায্য কামনা করেন।  বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, অষ্ট্রেলিয়ার উপদেস্টা, জ্বালানী বিশেষজ্ঞ, কনসালটেন্ট, ও বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার সালেক সুফী বলেন বঙ্গবন্ধু ২৫শে মার্চ রাতেই ঠিক করে দিয়ে গিয়েছিলেন কোথায় এবং কিভাবে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হবে এবং তার উপর ভিত্তি করেই স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার গঠিত হয়েছিল। খন্দকার মুশতাক গোপনে বাংলাদেশকে পাকিস্তানের ফেডারেশনে অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের শেষদিকে যেসব সেনাবাহিনীর সদস্যরা মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিল তারা সবাই আইএসআইয়ের পক্ষ থেকে যোগ দিয়েছিল। এই গ্রুপের লোকেরাই ১৫ই আগস্ট, ৩রা নভেম্বর, এবং ৭ই নভেম্বরের হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ছিল। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, অস্ট্রেলিয়ার সভাপতি এবং বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, অস্ট্রেলিয়ার প্রধান উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট সিরাজুল হক তার বক্তব্যে বলেন বাংলাদেশকে নেতৃত্ব শূন্য করে দেয়ার এবং বাংলাদেশকে স্বাধীনতা পূর্ববর্তী অবস্থানে ফিরিয়ে নিতে যেতেই ৩রা নভেম্বরের জেল হত্যা সংগঠিত করা হয়। বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, অস্ট্রেলিয়ার উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করে উনি উনার বক্তব্য শেষ করেন।   
 
বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার শাকিল খান তার বক্তব্যে বলেন বাংলাদেশকে পঙ্গু করে দেবার যে অপপ্রয়াস  ১৯৭১ সালে বুদ্ধিজীবী হত্যার মধ্যে দিয়ে শুরু হয় তারই ধারাবাহিকতা হচ্ছে ৩রা নভেম্বরের জাতীয় চার নেতার জেল হত্যা।  বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারন সম্পাদক রশীদা হক কনিকা তার বক্তব্যে ১৫ই আগস্ট সহ ৩রা নভেম্বরে শহীদ সকলের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বলেন পরবর্তী জেনারেশনের কাছে বঙ্গবন্ধু, স্বাধীনতা যুদ্ধ, ১৫ই আগস্ট, ৩রা নভেম্বরসহ সকল ঘটনার সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে।  সেই সঠিক ইতিহাস উদ্ঘাটন এবং প্রচারে বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যনির্বাহী সভাপতি এডভোকেট মশিউর মালেক তার বক্তব্যে ২০০২ সালে বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন গঠনের পিছনের পরিস্থিতি বর্ননা করে বলেন বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিকদের একত্রিত করে তাদের সাহায্য করা এবং বঙ্গবন্ধু, স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশ নিয়ে গবেষণা এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রতিষ্ঠা করার একটি প্রয়াস। ৭৫ পরবর্তী সময়ে ব্যাপক ইতিহাস বিকৃতি থেকে জাতিকে উদ্ধার করে পরবর্তী জেনারেশনের কাছে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরাই আমাদের উদ্দেশ্য। ৩রা নভেম্বর সম্পর্কে তিনি বলেন বঙ্গবন্ধু হত্যা, জাতীয় চার নেতা হত্যাসহ ৭ই নভেম্বরের হত্যা সব একই উদ্দেশ্যে করা হয়েছে আর তা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হত্যা করার চেস্টা। 
 
কীনোট স্পীকারের বক্তব্য বরেণ্য সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ এবং ২০১৮ সাল সাংবাদিকতায় একুশে পদক প্রাপ্ত রনেশ মৈত্র বলেন যে মুজিব ভাইয়ের সাথে আমার পরিচয় ১৯৫৩ সালে পাবনায় যখন আমি ছাত্র ইউনিয়নের জেলা সভাপতি ছিলাম। ১৯৫৪ সালে যুক্ত ফ্রন্টের অনুষ্ঠানে মাওলান ভাশানী এবং মুজিব ভাইকে সংবর্ধনা দেই। ১৯৫৫ সালে আমি আওয়ামী লীগের যোগদান করেন।  শহীদ সোরওয়ার্দীর সাথে দ্বিমত পোষণ করে ১৯৫৭ সালে ন্যাপ গঠিত হলে আমি ন্যাপে যোগদান করি। শহীদ সোরওয়ার্দীর সাথে ব্যাক্তিগত সম্পর্কের কারনে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগে থেকে যান। ১৯৬৩ সালে বৈরুতে শহীদ সোরওয়ার্দীর মৃত্যু হলে ১৯৬৪ সালে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল হলে অনেক কিছু পরিবর্তন হয় – তাজউদ্দিন আহমেদ আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক এবং বন্ধবন্ধু সভাপতি নির্বাচিত হন। তাজউদ্দিন আহমেদের কারনে আওয়ামী লীগ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সংশোধনী এনে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি গ্রহন করার নীতিমালা গ্রহন করে। বঙ্গবন্ধু যখন ১৯৬৬ সালে ৬ দফা ঘোষণা করেন এবং ছাত্রসমাজের ১১ দফা গ্রহন করেন তখন আওয়ামী লীগের সাথে ন্যাপের বিরোধ ঘুচে যায়। ১৯৬৬ সালে গ্রেফতার হয়ে জেলে গেলে আমার দেখা হয় মুজিব ভাইয়ের সাথে। এরপর থেকে উনার সাথে আমার পারস্পরিক সম্পর্কের শুরু হয়। তিনি আমাকে জেল থেকে বের করার জন্যে অনেক চেস্টা করেছেন। ৩রা নভেম্বরের ঘটনার স্মৃতিচারণে তিনি বলেন সেদিনই বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিরুদ্ধে কর্মসূচীর অনুষ্ঠান শেষে খবর পান যে জাতীয় চার নেতাকে খুন করা হয়েছে। উনি এবং উনার সাথীরা এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করেন। 
 
সভাপতির বক্তব্যে মোল্লা মোঃ রাশিদুল হক জেল হত্যা দিবসের জন্যে অনেকগুলো বিষয়কে দায়ী করেন। তিনি বলেন স্বাধীনতার পর থেকেই স্বাধীনতা বিরোধীদের চক্রান্ত শুরু হয়। জাসদ, পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টি, পূর্ববঙ্গের সাম্যবাদী দল, বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, ন্যাপের একটি অংশসহ অন্যান্য দলগুলি বঙ্গবন্ধুর বিরোধীতা করে। এছাড়া সিরাজ সিকদারের সর্বহারা পার্টিসহ পিকিংপন্থী দলগুলির চরম ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডে সদ্য স্বাধীন দেশী ভয়াভহ সমস্যার মুখোমুখি হয়। আওয়ামী লীগের ৩ জন এমপি খুন হন এবং সারাদেশে পাটের গুদামে আগুন দেয়া হয়। এছাড়া ১৯৭৪ এর কৃত্তিম দুর্ভিক্ষ, বঙ্গবন্ধু পরিবারের ব্যাপারে অমূলক গুজব, বাকশাল এবং রক্ষীবাহিনীর ব্যাপারে ভুল বোঝানো, অন্যান্য দেশের সরাসরি চক্রান্ত – ইত্যাদি সমস্ত কিছুই বঙ্গবন্ধু হত্যায় ভূমিকা রাখে। জাতীয় চার নেতা খন্দকার মুশতাক আহমেদের মন্ত্রীসভায় যোগদানে অস্বীকার করায় ২৩শে আগস্ট গ্রেফতার হন এবং ৩রা নভেম্বর মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফের করা ক্যু এর কারনে খুনী বাহিনী ভয় পেয়ে বঙ্গবন্ধুর পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় কমান্ড জাতীয় চার নেতা যেন আবারও দেশের হাল ধরতে না পারেন সেই লক্ষ্যে রাতের আধারে জেলখানায় গিয়ে তাদের গুলি করে এবং বেয়োনেট দিয়ে খুচিয়ে খুচিয়ে নির্মমভাবে খুন করে। ১৯৯৬ সালে শুরু হওয়া বিচারের ২০০৮ সালের হওয়া রায়ে জেল হত্যা মামলায় তিনজনের মৃত্যুদণ্ড ও ১২ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেন আদালত। এদের মধ্যে চারজনের ফাঁসি হয় বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায়। অবশিষ্ট মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত তিন ও যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রাপ্ত আট আসামি বর্তমানে বিদেশে পলাতক রয়েছেন। সেই খুনীদের অনেকেই এখনো বহাল তবিয়তে বিদেশে অবস্থান করছে – তাদের সবাইকেই দেশের ফিরিয়ে এনে বিচারের সন্মুখীন করানোর জন্যে তিনি বাংলাদেশ সরকারের কাছে আহবান জানান এবং বহির্বিশ্বে বসবাসরত সবাইকে খুনীদের সম্পর্কে তথ্য দিয়ে সরকারকে সহযোগিতা করতে আহবান জানান।  
 
এছাড়া আরও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সহ-সভাপতি ব্যারিস্টার নির্মাল্য তালুকদার, সহ-সভাপতি রাশিদুর রহমান তানভীর, বঙ্গবন্ধু ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ সেন্টার, ব্রাসেলস এর কো-অর্ডিনেটর জনাব বজলুর রশীদ বুলু, মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ ফেলো ড. সজল চৌধুরী, মোঃ রাশেদুজ্জামান, ফাহাদ চৌধুরী, ওয়াসিফ বিন আব্দুল আজিজ, জিনাতুর রেজা খান, ফ্রেন্ডস অফ বাংলাদেশ, রিয়াদ শাখার সভাপতি ড. রেজাউল।  সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি ইশরার উসমান, নিউ সাউথ ওয়েলস আওয়ামী লীগ নেতা হাসান ফারুক রবিন শিমুন, মাসুদুর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার মেহেদী হাসান, নুসরাতসহ আরও অনেকে। 
 
অনুষ্ঠানের শেষ অংশে বাংলাদেশের জন্যে শহীদ হওয়া সকলের জন্যে দোয়া পরিচালনা করেন কুয়েত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক দ্বীন ইসলাম মিন্টু। সবশেষে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করার জন্যে সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের ইতি টানেন সভাপতি মোল্লা মোঃ রাশিদুল হক। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
 
 

বিষয়: বঙ্গবন্ধু
avertisements 2