করোনা নয়, ‘মানুষখেকো পিশাচে’র ভয়ে যে গ্রামে চলছে লকডাউন
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২২ এপ্রিল,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:২৫ এএম, ২৫ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
কয়েক বছর আগেও যে-শব্দটা আমাদের দৈনন্দিন অভিধানে ছিল না, সেটাই এখন আমাদের কাছে খুব পরিচিত। লকডাউন। বছর দুয়েক থেকে এই লকডাউনের যন্ত্রণা ভোগ করেছে মানুষ। সামনে চতুর্থ ঢেউয়ের ইশারাও যেন দেখা যাচ্ছে। আবার যাতে লকডাউনের কোপে না পড়তে না হয়, তার জন্য সতর্কতা সর্বত্র। ঠিক এমন সময়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবেই অন্ধ্রপ্রদেশের এক গ্রামে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন গ্রামবাসীরা।
গ্রামে ঢোকার রাস্তায় লেখা আছে সতর্কবাণী। জানান দিচ্ছে– এ গ্রামে বাইরে থেকে আসা কারো প্রবেশ নিষিদ্ধ। আর গ্রামের বাসিন্দারা যেন বাইরে পা না রাখেন। দেখে যেন মনে হয়, প্রশাসন কড়া লকডাউন জারি করেছে। কিন্তু না, এ তো গ্রামের মানুষদেরই সিদ্ধান্ত। আর সে সিদ্ধান্তের কারণটা নাকি পিশাচ। অর্থাৎ গ্রামে পিশাচ ঘুরছে– এ ভয়েই এখানে চলছে লকডাউন।
ঘটনার সূত্রপাত অবশ্য রাতারাতি হয়নি। শ্রীকাকুলামের এই গ্রামটিতে বিগত কয়েকদিনে জনা চারেক মানুষের প্রাণ গিয়েছে। প্রথমে জ্বর, তারপর তা থেকেই মৃত্যু। প্রতিবেশীদের পরপর মৃত্যুর দরুন গ্রামের মানুষের বিশ্বাস, কোনো এক অশুভ আত্মা বা মাংসখেকো পিশাচ এই গ্রামে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সেই দুষ্ট আত্মাই মেরে ফেলছে একের পর এক মানুষকে। যারা ঘরের বাইরে বেরোচ্ছে, তাদের ওপরই কোপ পড়ছে বলে মানুষের বিশ্বাস।
অসুখের কারণে নয়, এই মৃত্যু তাদের কাছে রহস্যময়। আর তাই বাইরে বের হওয়া একেবারে বন্ধ করে দিয়েছেন তারা। মূলত, কোভিডের মতো আতঙ্কই তাদের টেনে এনেছে এমন ঘরবন্দি অবস্থায়।
তবে তাদের এহেন সিদ্ধান্ত গ্রহণের পিছনে আছে পুরোহিতদের পরামর্শও। গ্রামটি উড়িষ্যার সীমান্ত সংলগ্ন। উড়িষ্যা ও পাশের অন্যান্য গ্রামের পুরোহিতদের কাছে এই রহস্যজনক মৃত্যু থেকে বাঁচার উপায় জানতে চান প্রবীণ গ্রামবাসীরা। পুরোহিতরা নাকি জানান, অন্তত এক সপ্তাহের জন্য লকডাউন পালন করা জরুরি। আর গ্রামের চার কোনায় অশুভ আত্মা তাড়াতে রাখতে হবে লেবু। গ্রামবাসীরাও অক্ষরে অক্ষরে পালন করছেন সেই নির্দেশ।
গ্রামটির এই স্বতঃস্ফূর্ত লকডাউনের সিদ্ধান্ত তোলপাড় ফেলেছে গোটা তল্লাটে। কেউ কেউ বলছেন, এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও এরকম কুসংস্কারে যে কেউ বিশ্বাস করেন, তা ভাবা যায় না। অন্য অনেকে আবার গ্রামবাসীদের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন। যাতে মানুষ ভাল থাকে, তাতেই তাদের বিশ্বাস।
এদিকে প্রশাসন রয়েছে খানিকটা দোটানাতে। লকডাউনের জেরে স্বাভাবিক কাজকর্ম সব প্রায় বন্ধ। শেষমেশ পুলিশ গিয়ে গ্রামবাসীদের বোঝায়। অনেক আলোচনার পরই বাইরে থেকে আসা কর্মীদের গ্রামে প্রবেশের অনুমতি মিলেছে।
খানিকটা সচল হলেও গ্রামের মানুষ এখনও লকডাউনের নিয়মাবলিই মেনে চলছেন। খামোখা পিশাচের হাতে কে প্রাণ দেবে! অতএব গ্রামবাসীরা নিজেদের সিদ্ধান্তেই অটল। কোভিড নয়, পিশাচের আতঙ্কেই এখন গোটা গ্রাম জুড়ে চলছে কঠোর লকডাউন।