পুতিনই কি বিশ্বের গোপন শীর্ষ ধনী?
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৫ মার্চ,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ১২:৫৩ এএম, ২৫ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
পল ক্লেবনিকভ, ‘ফোর্বস’ রাশিয়ার সম্পাদক। ২০০৪ সালের ৯ জুলাই। ‘ফোর্বস’ কার্যালয় থেকে বেরিয়ে একটু সামনে এগিয়েছেন। সময়টা ছিল মধ্যরাত। একটি গাড়ি থেকে চারবার গুলি করা হলো পলকে। মস্কোর রাস্তায় লুটিয়ে পড়লেন। হাসপাতালে নিতেও দেরি হলো। যে অ্যাম্বুলেন্স এসেছিল, তাতে ছিল না অক্সিজেনের ব্যবস্থা, এমনকি হাসপাতালের লিফটও ছিল নষ্ট। ফলে অপারেশন টেবিলে পৌঁছাবার আগেই মারা গেলেন ওই অনুসন্ধানী সাংবাদিক।
পল ক্লেবনিকভ রাশিয়ার শীর্ষ ধনীদের নিয়ে কাজ করতেন। তাঁর অনুসন্ধানের লক্ষ্য ছিল, রাশিয়ার হঠাৎ ধনী হওয়া ব্যবসায়ীদের সম্পদের খোঁজ পাওয়া। ধারণা করা হয় পল ক্লেবনিকভের মৃত্যুর জন্য দায়ী রাশিয়ার ধনী ব্যবসায়ী বরিস বেরেজভস্কি। তিনিই তিন চেচেন ভাড়াটে খুনিকে নিয়োগ দিয়েছিলেন।এবার মিখায়েল খুদোরকভস্কির কথা বলা যেতে পারে। ‘ফোর্বস’-এ তখনকার ক্রেমলিন ঘনিষ্ঠ মিখায়েল খুদোরকভস্কির সম্পদ নিয়ে পল ক্লেবনিকভ প্রথম লেখাটি লিখেছিলেন ২০০২ সালে।
তখন তার কোম্পানি ‘ইওকস’ রাশিয়ার ১৭ শতাংশ তেল উৎপাদন করত। ৩৭০ কোটি ডলারের সম্পদ নিয়ে তিনিই ছিলেন রাশিয়ার শীর্ষ ধনী। তবে রাজনৈতিক দলগুলোকে তিনি তহবিল জোগাতেন। একসময় তাঁর কোম্পানিতে কাজ করতেন, এমন একজন ছিলেন পুতিনের জ্বালানিমন্ত্রী, আরেকজন ডেপুটি চিফ অব স্টাফ। ২০০৩ সালে কর ফাঁকির অভিযোগে তাঁকেই জেলে দেওয়া হয়।
এ ঘটনার কথা উল্লেখ করে ‘ফোর্বস’ লিখেছে, জেলে দেওয়ার পাশাপাশি মিখায়েল খুদোরকভস্কির সব সম্পদ জব্দ করা হয়, কোম্পানিকেও দেউলিয়া ঘোষণা দেওয়া হয়। সন্দেহ নেই তাকে আটকের পেছনের মানুষটি ছিলেন ভ্লাদিমির পুতিন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, পুতিন খুদোরকভস্কির সম্পদ দিয়ে কী করেছিলেন? বলা হয়, তা পুতিনের দখলেই চলে যায়। পুতিন যে তার সম্পদ গ্রাস করেছিলেন, এই তত্ত্বের দাবিদার হচ্ছে বিল ব্রাওডার। তিনি একসময় রাশিয়ায় সম্পদ ব্যবস্থাপনার কাজ করতেন, পরে পুতিনবিরোধী হন।
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরে বেসরকারীকরণ নীতি নেওয়া হলে রাশিয়ার একশ্রেণির মানুষ বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছিলেন। পুতিন সম্পদ দখলের জন্য তাঁদেরই বেছে নিয়েছিলেন। বিল ব্রাওডার বলেন, পুতিন এসব ব্যবসায়ীর সঙ্গে একটি ডিল বা চুক্তিতে এসেছিলেন। চুক্তিটি হলো—‘তুমি আমাকে তোমার সম্পদের ৫০ শতাংশ দিয়ে দাও, বাকি ৫০ শতাংশ রক্ষার দায়িত্ব আমার। আর যদি তা না করো, তবে ১০০ শতাংশই আমার আর তুমি থাকবে জেলে।’ বিল ব্রাওডার ২০১৭ সালে হিসাব করে মার্কিন সিনেটের এক শুনানিতে বলেছিলেন, ‘এ পথে পুতিনের অর্জিত সম্পদের পরিমাণ ২০০ বিলিয়ন ডলার।’
২০১৬ সালের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ নিয়ে করা তদন্তে এফবিআইয়ের সাবেক প্রধান রবার্ট মুয়েলার রাশিয়ার সবচেয়ে বড় বেসরকারি ব্যাংকের প্রধান পিওতর এভেনকে উদ্ধৃত করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘পিওতর এভেন হচ্ছেন, রাশিয়ার সেই ৫০ ব্যবসায়ীর একজন, যাঁরা নিয়মিতভাবে ক্রেমলিনে পুতিনের সঙ্গে মিলিত হতেন। সেই বৈঠকে পুতিনের প্রস্তাব বা সমালোচনাই ছিল আসলে একধরনের নির্দেশ। সে অনুযায়ী কাজ করতে হতো।’
পুতিনের এভাবে সম্পদ আহরণকে বলা হয়, ‘দ্য খুদোরকভস্কি মডেল’। তবে আরও দুটি মডেলের কথা প্রচলিত আছে। যেমন দ্য মাফিয়া মডেল ও দ্য ব্লাস্টার মডেল। সম্পদ আহরণের মাফিয়া মডেল হচ্ছে, ঘনিষ্ঠ বন্ধু বা সহযোগী ও পরিবারের সদস্যদের সরকারি কাজ দাও। এর বিনিময়ে একটি অংশ (শেয়ার বা নগদ অর্থ) পাবে দলের মাফিয়াপ্রধান। সুইডিশ অর্থনীতিবিদ আন্দ্রেস অসল্যান্ড ২০১৯ সালে লিখেছিলেন ‘রাশিয়াস ক্রনি ক্যাপিটালিজম’ নামে একটি বই। সেখানে বলা হয়েছে, পুতিন তাঁর বাল্যবন্ধু, পরিবারের সদস্য, দেহরক্ষী এবং অন্য ঘনিষ্ঠদের কাছে সম্পদ গচ্ছিত রাখেন। তাঁর হিসাবে, প্রত্যেকের কাছে ৫০ কোটি থেকে শুরু করে ২০০ কোটি ডলারের সম্পদ রাখা আছে। এই হিসাবে পুতিনের সম্পদ আছে ১৩০ বিলিয়ন ডলার।
আন্দ্রেস অসল্যান্ডের মন্তব্য হচ্ছে ‘রাশিয়ায় তুমি যত ধনী, তত বেশি নির্ভরশীল। এখানে সম্পদ তোমাকে অবশ্যই স্বাধীনতা দেয় না। যখন তোমার অনেক বেশি অর্থ, তখন তোমার জীবনে যেকোনো কিছু হয়ে যেতে পারে।’