এটি কি ভারতের ‘ফলস ফ্ল্যাগ’ নাটক?
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল,বৃহস্পতিবার,২০২৫ | আপডেট: ০৯:২৫ পিএম, ২৪ এপ্রিল,বৃহস্পতিবার,২০২৫

ভারতের কাশ্মীর অঞ্চলের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হয়েছেন এবং আরও ১৭ জন আহত হয়েছেন। এ হামলায় ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করেছে, তবে কোনো দৃশ্যমান প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি।
পহেলগাম হামলা নিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের ব্যাপক সন্দেহ তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা এ হামলাকে ভারতের ‘ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশন’ হিসেবে সন্দেহ করছেন। সাধারণত রাজনৈতিক লাভের উদ্দেশে কোনো দেশের সরকার বা গোষ্ঠী নিজেদের গোপনে অন্য কোনো দেশের বা গোষ্ঠীর নামে পরিকল্পিতভাবে এ অপারেশন চালায়।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আহমেদ সাঈদ মিনহাস বলেছেন, ভারতীয় গণমাধ্যম পাকিস্তানকে দোষারোপ করছে, অথচ হামলাটি ঘটেছে ভারতীয় অবৈধ দখলকৃত জম্মু-কাশ্মীরের ৪০০ কিলোমিটার ভেতরে। তিনি আরও বলেন, ২০১৯ সালে পাকিস্তান ভারতীয় পাইলট অভিনন্দনকে যথাযথভাবে ফিরিয়ে দিয়ে বড় ধরনের সহনশীলতা দেখিয়েছিল।
আরেক প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার (অব.) রশিদ ওয়ালি ভারতীয় মিডিয়ার উপর কড়া সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, হামলার পরপরই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘বেসামরিক ও অসত্য অভিযোগ’ ছড়ানো শুরু হয়েছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, ভারত যদি আবারও কোনো ভুল পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করে, তাহলে এর ফলাফল হতে পারে বিপর্যয়কর, যেমনটা হয়েছিল ‘বালাকোট হামলার’ পর।
ভারতের এই অভ্যাসের সমালোচনা করেছেন পাকিস্তানের সাবেক সংসদ সদস্য মুশাহিদ হুসেন সিদ্দিকি। তিনি বলেন, ভারতের সরকার সন্ত্রাসী হামলার পরপরই পাকিস্তানকে দোষারোপ করার একটি ‘অটোমেটেড প্রতিক্রিয়া’ তৈরি করেছে। তিনি ‘কাশ্মীর এক্সপ্রেস’ হামলা এবং বর্তমানে পহেলগাম হামলার উদাহরণ দিয়ে বলেন, ভারতের এই ধরনের মনোভাব কোনও না কোনও ঘটনা ঘটানোর পর পরই উঠে আসে, তদন্তের আগেই পাকিস্তানকে দায়ী করা হয়।
পাকিস্তান সরকারও এ হামলার ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছে এবং নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শফকত আলী খান বলেন, ‘পাকিস্তান পহেলগাম হামলায় নিহতদের পরিবারদের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করছে’ এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছে।
এই হামলার দায় স্বীকার করেছে ‘কাশ্মীর রেসিস্ট্যান্স’ নামে একটি গ্রুপ। গ্রুপটির দাবি, কাশ্মীরে ৮৫ হাজারেরও বেশি মানুষ বাইরে থেকে এসে বসতি গড়েছেন। এ কারণে স্থানীয় জনগণের ওপর ‘ডেমোগ্রাফিক পরিবর্তন’ ঘটানো হচ্ছে। এটি প্রতিরোধের জন্য তারা এ হামলা চালিয়েছে।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও এ হামলার ব্যাপারে নিন্দা করা হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, কাশ্মীরের এই হামলার মাধ্যমে ভারতের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের সংকল্প আরও শক্তিশালী হবে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মোদিকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে বলেছেন, ‘এই জঘন্য হামলার ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা ভারতের পাশে আছি।’ ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান উরসুলা ভন ডের লিয়েনও হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
এদিকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে মদদের অভিযোগ তুলে একের পর এক কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে ভারত।
ভারতের নেওয়া পাঁচটি বড় পদক্ষেপ হলো—
সিন্ধু পানিচুক্তি তাৎক্ষণিকভাবে স্থগিত
আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ
পাকিস্তানি নাগরিকদের ১ মে’র মধ্যে ভারতে থাকার অনুমতি বাতিল
দক্ষিণ এশিয়ার সার্ক ভিসা ছাড়ের আওতায় পাকিস্তানিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ
দিল্লিতে নিযুক্ত পাকিস্তানি সামরিক উপদেষ্টাদের বহিষ্কার এবং পাকিস্তানের কূটনৈতিক কর্মীদের সংখ্যা ৫৫ থেকে ৩০-এ নামিয়ে আনা। একইসঙ্গে ভারত নিজ দেশের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের ইসলামাবাদ থেকে প্রত্যাহার করেছে।
তথ্যসূত্র: জিও নিউজ, এক্সপ্রেস ট্রিবিউন
আরও পড়ুন
এই বিভাগের আরো খবর

বিবিসির প্রতিবেদনে এবার উঠে এলো আয়নাঘরের ভয়াবহ চিত্র

৩৬টি হামলায় শুধু নারী-শিশুদের হত্যা করেছে ইসরায়েল: জাতিসংঘ

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতিতে নাটকীয় পরিবর্তন: ট্রাম্পকে ধন্যবাদ প্রধান উপদেষ্টার

বাংলাদেশের মঙ্গল ভারতের চেয়ে বেশি অন্য কেউ কামনা করে না: জয়শঙ্কর
