গাজায় লাশের স্তূপ : মিলছে চিকিৎসাসেবা ও খাবার
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৯ অক্টোবর,বৃহস্পতিবার,২০২৩ | আপডেট: ০৪:২৩ এএম, ১৫ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
এক সময় সব ছিল। এখনো শুধুই হাহাকার। চারদিকে লাশের স্তূপ। আর আহত মানুষের চিৎকার। মিলছে চিকিৎসা। পাচ্ছে খাবার। সব থেকে অবরোধ করে রেখেছে দখলদার ইসরাইলী বাহিনী। আর তাকে সমর্থন যোগাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সর্বশেষ জাতিসংঘে গাজায় ত্রাণ পেরোনের ব্যাপারে ভেটো দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এখন গাজার মানুষ চিকিৎসার অভাবে প্রাণ হারাচ্ছেন। অন্যদিক পানি, বিদ্যুৎ ও খাবার সংকটে ভুগছে।
এদিকে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজা উপত্যকা নিয়ে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর পরিকল্পনাকে নাৎসিদের ইহুদি নিধনের সাথে তুলনা করে ইসরাইলের এক পার্লামেন্ট সদস্য শাস্তির মুখে পড়েছেন। দেশটির ইথিকস প্যানেল তাকে সাসপেন্ড করেছে।
এক সাক্ষাতকারে ইসরাইলি এমপি ওফার ক্যাসিফ অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার গাজা নিয়ে যে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছেন, তা ইউরোপে ইহুদিদের বিরুদ্ধে নাৎসিদের 'ফাইনাল সলিউশন'-এর সাথে তুলনীয়।
তিনি আরেকবার বিদেশী মিডিয়ায় হামাসের হামলায় ৭ অক্টোবরের ১৪ শ' লোকের নিহত হওয়া প্রসঙ্গে বলেন, 'ইসরাইল এই সহিংসতা চায়।' জেরুসালেম পোস্ট জানায়, ক্যাসিফকে ৪৫ দিনের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে। এর জবাবে এক্সে (সাবেক টুইটার) ক্যাসিফ ইসরাইলি পার্লামেন্ট নেসেটের সিদ্ধান্তকে 'রাজনৈতিক মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কফিনে আরেকটি পেরেক' হিসেবে অভিহিত করেন।
উল্লেখ্য, নেতানিয়াহু গাজা থেকে হামাসকে নিশ্চিহ্ন করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন। আর হিটলার ইউরোপ থেকে ইহুদিদের নিশ্চিহ্ন করার কথা ঘোষণা করেছিলেন।
ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩ হাজার ৪৮৮ জনে। এছাড়া ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৫ জনে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এসব তথ্য জানিয়েছে। এদিকে অবরুদ্ধ গাজায় খাবার পানিও শেষ হয়ে গেছে। সেখানে মানবিক সংকট চরমে পৌঁছেছে।
দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অবরুদ্ধ উপকূলীয় ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে আহত হয়েছে ১২ হাজারের বেশি মানুষ। পশ্চিম তীরে আহতের সংখ্যা ১৩০০ এর বেশি।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নিহদের মধ্যে দুই তৃতীয়াংশই শিশু। বাকিদের বেশিরভাগই নারী। আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, গাজায় নিহতদের মধ্যে এক হাজারের বেশি শিশু রয়েছে।
এপির খবরে বলা হয়েছে, আগে থেকেই আল শিফা হাসপাতাল রোগীতে পরিপূর্ণ রয়েছে। সেখানে সামান্য জায়গাও অবশিষ্ট নেই।
আল শিফা হাসপাতালের পরিচালক মোহাম্মদ আবু সেলমিয়া বলেন, আহতদের হাসপাতালের মেঝেতে রাখা হয়েছে। রক্তাক্ত মেঝেতে অবশ করা ছাড়াই রোগীদের অপারেশন করতে হচ্ছে। এটি হৃদয়বিদারক।
আবু সেলমিয়া বলেন, 'আমাদের যন্ত্রপাতি দরকার, ওষুধ দরকার, বিছানা দরকার, অ্যানেস্থেশিয়া দরকার, আমাদের সবকিছু দরকার। হাসপাতালের জেনারেটরের জ্বালানীও একেবারে শেষের দিকে।'
মঙ্গলবার গাজার কেন্দ্রে অবস্থিত আল আহলি হাসপাতালে ইসরায়েলের হামলায় ৫ শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তাদের বেশিরভাগই চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও হামলা থেকে বাঁচতে আশ্রয় নেয়া ব্যক্তি।
ইসরায়েল শুরু থেকেই সাধারণ মানুষের ওপর হামলা করছে। জাতিসংঘের স্কুল, হাসপাতাল, আশ্রয়কেন্দ্র এমনকি জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থার গুদামেও বোমা ফেলেছে ইসরায়েল। এসব তথ্য জানিয়েছে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা, রেডক্রসসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা।
এদিকে ইসরায়েল শুরুতে দাবি করেছিল যে, হামাস হামলা চালিয়ে ৪০ শিশুকে হত্যা করেছে। তবে এর পক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি তারা। এ বিষয়টি উল্লেখ করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও। তবে পরবর্তীতে হোয়াইট হাউস জানায় যে, এ বিষয়ে খুব বেশি তথ্য তাদের কাছে নেই। পরে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীও জানায় যে, ৪০ শিশু নিহতের কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই।
অপরদিকে ইসরায়েলে নিহত হয়েছেন ১৪,০২ জন। এছাড়া আহত হয়েছেন ৪,৪৭৫ জন।
গাজায় নেই খাবার পানিও এসোসিয়েট প্রেস বুধবার এক প্রতিবেদনে বলেছে, গাজা উপত্যকায় বিশুদ্ধ পানির অভাব স্বাস্থ্যের জন্য বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফিলিস্তিনিদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থার প্রধান ফিলিপ লাজারিনি বলেছেন, 'গাজার পানি ফুরিয়ে যাচ্ছে এবং গাজার জীবন ফুরিয়ে যাচ্ছে।'
গাজা সাধারণত ইসরায়েল থেকে পাইপলাইন, ভূমধ্য সাগরে ডিস্যালিনেশন প্ল্যান্ট এবং কূপসহ কয়েকটি উৎস থেকে খাবার ও ব্যবহারের পানি পায়। ৭ অক্টোবরে হামাসের হামলার পর ইসরায়েল বিদ্যুৎ, জ্বালানিসহ সর্বাত্মক অবরোধ আরোপ করেছে গাজায়। জ্বালানির অভাবে সেখানকার একমাত্র বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে পানির উৎসগুলো থেকে পানি সংগ্রহও হ্রাস পেয়েছে।
জাতিসংঘ বলছে, পানি সরবরাহ মানবাধিকারের অংশ এবং এটি মৌলিক চাহিদার একটি। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য পানির সরবরাহ প্রয়োজন।
ইউএস ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্স অ্যান্ড মেডিসিনের একটি রিপোর্ট বলছে যে, সুস্থ থাকতে দিনে পুরুষদের অন্তত ৩.৭ লিটার এবং নারীদের ২.৭ লিটার পানি পান করা প্রয়োজন। এই পরিমাণ পানির ২০ শতাংশ ফলসহ নিত্যদিনের খাবারের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। বাকিটুকু পানি পান করার মাধ্যমে পূরণ করতে হয়।
কিন্তু গাজার পরিস্থিতি এখন চরম সংকটে। সেখানকার মানুষ প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ খাবার পানিও পাচ্ছে না। এটি চলতে থাকলে খাবার ও পানির অভাবে অনেক মানুষের মৃত্যু হবে বলে মনে করছে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনে কাজ করা সংস্থা।