ইটালির লেকে ডুবে যাওয়া নৌকায় কেন একসাথে এত গুপ্তচর ছিল
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৪ জুন,রবিবার,২০২৩ | আপডেট: ০৯:২৭ পিএম, ১৭ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
আল্পস পর্বতের নীচে ছবির মত সুন্দর ম্যাগিওর হ্রদে হঠাৎ ঝড়ো বাতাসে মানুষ ভর্তি একটি নৌকা ডোবার ঘটনা নিয়ে বিস্তর চর্চা শুরু হয়েছে বিশেষ করে ইটালি ও ইসরায়েলে। বিশেষ করে পানিতে ডুবে নিহত চারজনের নাম-পরিচয় প্রকাশ এবং যাত্রীদের পেশাগত পরিচয় ফাঁস হয়ে যাওয়ার এই দুর্ঘটনা বিস্ময় এবং সন্দেহের উদ্রেক করেছে। নিহতদের দুজন ছিলেন ইটালির গোয়েন্দা কর্মকর্তা, একজন ছিলেন ইসরায়েলি গুপ্তচর সংস্থা মোসাদের সাবেক এজেন্ট, এবং অন্যজন এক রুশ নারী।
দুর্ঘটনার জায়গাটিও বিভিন্ন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছ। আল্পস পর্বতের নীচে এই হ্রদের একদিকে ইটালির লোমবার্ডি অঞ্চল, অন্য তীরে সুইজারল্যান্ডের টিচিনো। লোমবার্ডিতে বেশ কয়েকটি কোম্পানি রয়েছে যেখানে সামরিক প্রযুক্তি তৈরি হয়। তাছাড়া, এমনিতেই মনে করা হয় যে সুইজারল্যান্ড নানা দেশের গোয়েন্দা এবং গুপ্তচরদের যাতায়াতের একটি ট্রানজিট পয়েন্ট, এই দেশটি হয়েই বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দারা অন্যান্য দেশে যাতায়াত করে।
ছোটো আকারের এই প্রমোদ নৌকাটিতে মোট ২৩ জন ছিলেন। জানা গেছে তাদের অনেকেরই এই হ্রদের আশপাশে অ্যাপার্টমেন্ট বা বাড়ি রয়েছে। ইটালির দৈনিক ইল কোরিয়ের দেল্লা সেরায় খবর বেরিয়েছে এই এলাকায় ইটালি এবং ইসরায়েলি সরকারি লোকজনের নির্বিঘ্নে ঘোরাফেরার অধিকার রয়েছে।
লেকের ওপর গুপ্তচরদের গোপন বৈঠক?
ডুবে যাওয়া নৌকাটি উদ্ধারে কাজ করছে ইটালির পুলিশ ও দমকলবাহিনী কিছু কিছু রিপোর্টে বলা হচ্ছে নেহাত বিনোদনের জন্যই নৌকাটিতে করে বের হয়েছিলেন এর যাত্রীরা। তবে ইটালির কিছু সংবাদপত্র খবর দিয়েছে, ডোবার আগে নৌকাটিতে ইটালি এবং ইসরায়েলি গুপ্তচরদের মধ্যে একটি বৈঠক চলছিল।
নৌকাডুবির এই ঘটনা ইটালিতে এতটাই আলোচনার জন্ম দিয়েছে যে সরকার ২৮শে মে নৌকাটি কিভাবে ডুবেছিল তা তদন্তে কার্লোস নোসেরিনা নামে তাদের একজন প্রসিকিউটার বা কৌসুলিকে নিয়োগ করেছে।
তিনি জানিয়ে দিয়েছেন যে নৌকাটিতে ২১জন গুপ্তচর ছিলেন যাদের ১৩ জন ইটালির আর আটজন ইসরায়েলের। শুধু নৌকার চালক ক্লডিও কারমিনাটি এবং তার নিহত স্ত্রী – যিনি একজন রুশ নাগরিক- কোনো গোয়েন্দা সংস্থার সাথে যুক্ত নন।
কিছু রিপোর্ট বলছে ১৫ মিটার লম্বা এই প্রমোদ নৌকাটি ভাড়া করা হয়েছিল একজনের জন্মদিন পালনের উদ্দেশ্যে। কিন্তু নৌকাটি হঠাৎ প্রচণ্ড এক ঝড়ের মধ্যে পড়ে যায় এবং ঘণ্টায় ৭০ কিমি বেগের বাতাস সেটি সহ্য করতে পারেনি।
“৩০ সেকেন্ডের মধ্যে যেন এক অলৌকিক প্রলয় নেমে আসে আমাদের ওপর,” দুর্ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ইটালিয়ান দৈনিক ইল কোরিয়ের ডেলা সেরাকে বলেন ক্যাপ্টেন মি. কারমিনাটি। “নৌকাটি সাথে সাথে ডুবে যায়, এবং আমরা দেখলাম সবাই পানিতে।“
মি. কারমিনাটি তদন্তকারীদের বলেন এমন খারাপ আবহাওয়ার কোনে পূর্বাভাস ছিলনা। তবে ঘাটে ফিরে আসার নির্ধারিত সময়রে পরও নৌকাটি হ্রদের ভেতর ছিল। তার বিরুদ্ধে সম্ভাব্য ‘অনিচ্ছাকৃত হত্যাকাণ্ডের’ তদন্ত শুরু হয়েছে। তার কারণেই নৌকাটি ডুবেছে কিনা তাও তদন্ত করা হচ্ছে। ক্যাপ্টেন কারমিনাটির নিহত স্ত্রী ৫০ বছর বয়স্কা আনা কোজকোভা রুশ নাগরিক, তবে ইটালিতে তার বসবাসের অনুমতি ছিল।
নিহতদের অন্যরা ছিলেন: তিজিনা বারনবি, ৫৩, ক্লডিও আলোনজি, ৬২ – দুজনেই ইটালিয়ান গুপ্তচর সংস্থার এজেন্ট। ৫০ বছর বয়স্ক ইসরায়েলি সিমোনি এরেজও নৌকাডুবিতে মারা গেছেন। তিনি ইসরায়েলি গুপ্তচর সংস্থা মোসাদ থেকে অবসর নিয়েছিলেন। তার নাম ইটালির মিডিয়াতে প্রকাশ করা হলেও ইসরায়েলি মিডিয়া তার নাম করেনি।
অন্যদের অনেকে সাঁতরে তীরে উঠতে সমর্থ হয়। আশপাশের কিছু নৌকা গিয়ে বাকিদের টেনে তোলে। উদ্ধারকাজে অংশ নেয় ইটালির পুলিশ এবং দমকল বাহিনী। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে মৃত্যুগুলো হয়েছে নৌকা ডুবেই, এবং ইটালিয়ান মিডিয়া খবর দিয়েছে কোনো ময়না তদন্ত করা হয়নি।