avertisements 2

নেপালে যেভাবে বাড়ছে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির প্রভাব

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৭ মার্চ,শুক্রবার,২০২৩ | আপডেট: ১২:১৮ এএম, ২৪ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪

Text

নেপালের জনকপুরে যে বিখ্যাত জানকী মন্দির আছে, তার ঠিক পেছনেই রয়েছে একটা প্রাচীন মসজিদ। বলা হয়ে থাকে, জানকী দেবীর মন্দিরটা বানিয়েছিলেন মুসলমান কারিগররা। তাদের নামাজ পড়ার জন্যই ওই মসজিদ তৈরি হয়েছিল।

জনকপুরে এখন তিন থেকে চার ভাগ মুসলমান বসবাস করেন। হিন্দুদের পৌরাণিক আদর্শ পুরুষ, যাকে অনেক হিন্দু ভগবান হিসাবে পূজা করেন, সেই রামের স্ত্রী সীতার জন্ম ও বিবাহ এই জনকপুরেই হয়েছিল বলে বিশ্বাস করা হয় । জানকী মন্দিরটা শহরের ছয় নম্বর ওয়ার্ডে। ১৯৯০-এর দশকে ওই ওয়ার্ড থেকে সৈয়দ মোমিন সভাপতি নির্বাচিত হতেন। পরে ওয়ার্ড সভাপতি হয়েছিলেন মোহাম্মদ ইদ্রিস।

জানকী মন্দিরে যে ‘বিবাহ-পঞ্চমী’র অনুষ্ঠান হয়, ওই সময়ে সৈয়দ মোমিন আর পরে মুহম্মদ ইদ্রিস জানকী দেবী মন্দির আর রাম মন্দিরের মাঝামাঝি জায়গায় ওই পূজায় যে বরযাত্রীরা আসতেন অংশগ্রহণকারী হিসেবে, তাদের স্বাগত জানাতেন প্রতি বছর।

মন্দির আর মসজিদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে ওই অনুষ্ঠানের কথা স্পষ্টই মনে আছে, জনকপুরের সিনিয়র সাংবাদিক রোশন জনকপুরীর। তিনি ওই সময় একেবারেই শিশু ছিলেন। তিনি বলছিলেন, মুহররমের তাজিয়াও তৈরি করা হত জানকী মন্দিরের মাঠেই।

মুসলমানদের জন্য জানকী মন্দিরের দরজা কখনো বন্ধ হতো না। আর মুসলমানদেরও কখনো মনে হত না যে ওই মন্দিরটা অন্য কোনো ধর্মাবলম্বীদের। একটা সময়ে তো জানকী মন্দিরের রন্ধনশালাতে মুসলমানরা কাজও করতেন। আর রান্নার জন্য সবজি চাষও করতেন মুসলমানরাই। কিন্তু এখন মন্দির আর মসজিদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। মাঝামাঝি একটা দেয়াল তুলে দেয়া হয়েছে।

সৈয়দ মোমিন আর মুহম্মদ ইদ্রিসদের সময়টা শেষ হয়ে গেছে। ‘বিবাহ-পঞ্চমী’র পূজা এখনো হয়। কিন্তু সেই পুজোয় এখন ‘বরযাত্রী’ আসেন অযোধ্যা থেকে। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ২০১৮ সালে ‘বরযাত্রী’ নিয়ে জনকপুরে গিয়েছিলেন।

রোশন জনকপুরীর কথায়, ‘যোগী আসার পরে জানকী বিবাহে সৈয়দ মোমিন বা মুহম্মদ ইদ্রিসদের জন্য খুব একটা জায়গা আর নেই। নরেন্দ্র মোদি ২০১৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে নেপালে তার গভীর প্রভাব পড়েছিল। শুধু যদি জনকপুরের কথাই ধরি, তাহলে ২০১৮ সালে মোদির এই শহরে সফরে আসার আগে আর পরের সময়টার মধ্যে অনেক পার্থক্য হয়ে গেছে।’

শহর আর মনোভাব, বদলিয়েছে সবই
সকাল ১০টা বাজে। জানকী মন্দিরের ভেতর থেকে ‘হরে রাম’ আর ‘সীতা রাম’ ধ্বনি ভেসে আসছে। মন্দির চত্বরে হনুমানের মুখোশ লাগিয়ে এক ব্যক্তি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। শিশুরা ওই ‘হনুমানজি’র সাথে সেলফি তুলতে ব্যস্ত।

আমাদের ক্যামেরা দেখে এক মধ্যবয়সী এসে জানতে চাইলেন আমরা কোথা থেকে এসেছি। আমি জবাব দিলাম দিল্লি থেকে। উনি সাথে সাথেই বললেন, ’প্রধানমন্ত্রীও এসেছিলেন।’ আমি বললাম, ’কে? প্রাচান্ডা?’ উনি বললেন, ’আরে না, ভাই মোদি জী।’

’কিন্তু আপনাদের প্রধানমন্ত্রী তো প্রাচান্ডা?’ ওই ভদ্রলোক বললেন, ’হ্যাঁ, কিন্তু মোদিজীও।’ আমার সাথে নেপালের পাহাড়ি এলাকার এক সাংবাদিক ছিলেন। আর ছিলেন জনকপুরেরই এক মুসলমান সাংবাদিক।

ওই আলাপচারিতা শুনে দু’জনেই খুব হাসতে লাগলেন। একজন তো বলেই ফেললেন, ’তাহলেই বুঝুন মোদি আসার পরে তার কতটা প্রভাব পড়েছে নেপালের ওপরে।’

ওই স্থানীয় মুসলমান সাংবাদিকের কাছে জানতে চেয়েছিলাম মন্দিরের মহন্ত বা প্রধানের সাথে কথা বলা যাবে? তিনি বলেছিলেন ’মহন্ত তো অযোধ্যায় গেছেন, প্রধান পুরোহিত আছেন। তার সাথে দেখা করতে পারেন আপনি। তবে আপনি মন্দিরে ঢুকতে পারবেন তো?’

তিনি আরো বলছিলেন, ’স্যার এটা জনকপুর। মোদিজীর প্রভাব পড়েছে ঠিকই, কিন্তু নেপালের অনেক কিছুই এখনো ভাল আছে। চলুন, পুজারীর সাথে দেখা করে আসি।’

দরজার বাইরে তিনি জুতো খুলে প্রধান পুরোহিতের কাছে নিয়ে গেলেন আমাকে। জানকী দেবী মন্দিরের প্রধান পুরোহিত খুবই আন্তরিকভাবে ওই মুসলমান সাংবাদিকের কুশল জানতে চাইলেন। তারপর আমার সাথে কথা বলেন তিনি।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৮ সালে জনকপুরে এসেছিলেন। সেই সফরের আগে আর পরে শহরটাতে বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে।

জনকপুর শহর যখন গেরুয়া রঙে রাঙানো হয়
মোদির সফরের আগে জনকপুর পৌরসভার তৎকালীন মেয়র লালকিশোর শাহ শহরের বেশ কিছু প্রবেশ তোরণ গেরুয়া রঙ করিয়ে দেন। এমনকি পৌরসভার নামও বদল করে রাখা হয় ‘জনকপুর ধাম পৌরসভা’।

পৌরসভার কর্মীদের জন্য গেরুয়া পোশাক নিদিষ্ট করা হয়। সব কর্মচারীকে অফিসে পৌঁছার পরই ‘জয় জনকপুর ধাম’ নামের একটা প্রার্থনা সঙ্গীত গাইবার নির্দেশ জারি হয়েছিল। নাসিম আখতার নামের এক মুসলমান কর্মচারী ওই দু’টি সিদ্ধান্তই মানতে অস্বীকার করেন।

লালকিশোর শাহের কাছে আমি জানতে চেয়েছিলাম তার ওই সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার কারণ কী ছিল? তিনি বলেন, ’আমরা জনকপুরকে গেরুয়া শহর বানাতে চেয়েছিলাম। সেইজন্যই সরকারি অর্থে সাধারণ মানুষের বাড়িগুলোও গেরুয়া রঙ করে দিয়েছিলাম। সীতাজীরও গেরুয়া রঙ খুব পছন্দের ছিল।’

লালকিশোর শাহের ওই সিদ্ধান্তে নরেন্দ্র মোদি কি খুশি হয়েছিলেন? শাহ বললেন, ’বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে আমিই স্বাগত জানিয়েছিলাম। সেখান থেকে তাকে জানকী দেবী মন্দিরে নিয়ে এসেছিলাম। পরে রঙভূমি ময়দানে তাকে নাগরিক সম্বর্ধনা দেয়া হয়।

তিনি বলেন, ’মোদিকে যখন বিমানবন্দরে ফেরত নিয়ে গিয়েছিলাম, তখন উনি নিজে থেকেই আমাকে বলেন, মেয়র সাহেব আপনি তো পুরো শহরটাকে একটাই রঙে রাঙিয়ে দিয়েছেন। আমি বলেছিলাম, এটা আমার সিদ্ধান্ত ছিল। মোদির খুব পছন্দ হয়েছিল ব্যাপারটা।’

‘নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে নেপালে হিন্দুত্বের রাজনীতি শক্তিশালী হয়েছে’
ডেনমার্কে নেপালের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত ও কাঠমান্ডুর সেন্টার ফর সোশ্যাল ইনক্লুশান অ্যান্ড ফেডারেলিজম নামের একটি থিঙ্কট্যাঙ্কের প্রধান বিজয়কান্ত কর্ণ বলছিলেন, নরেন্দ্র মোদিকে দেখতে জনকপুরে অসংখ্য মানুষ জড়ো হয়েছিলেন।

কর্ণ বলেন, ’বিদেশে মি. মোদিকে দেখতে বা তার কথা শুনতে এত বেশী মানুষ আর কোথাও জড়ো হন নি। রঙভূমি ময়দান পুরো ভর্তি হয়ে গিয়েছিল। ওই ভিড় দেখে বোঝার উপায় ছিল না যে তিনি বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করছেন।’

তার কথায়, ’নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে নেপালে হিন্দুত্বের রাজনীতি শক্তিশালী হয়েছে। কিন্তু প্রশাসনে যদি ধর্ম ঢুকে পড়ে, তাহলে পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যাবে। নেপালের ১৮ লাখ মুসলমানের মধ্যে ৯৮ ভাগই মদেশি এলাকায় থাকেন। ওই অঞ্চলটাই ভারতের লাগোয়া। তাই এরকম শুরু হলে শুধু নেপালের নিরাপত্তা নয়, ভারতের নিরাপত্তার ওপরও বড়সড় প্রভাব পড়বে।’

তিনি বলেন, ’ভারত নিশ্চই এরকম নির্বোধের মতো কিছু করবে না, যাতে নেপাল সীমান্তটা কাশ্মীরের এলওসি (নিয়ন্ত্রণ-রেখা) বা বাংলাদেশ সীমান্তের মতো হয়ে যায়। ওই দুই সীমান্তের জন্য ভারতের কোটি কোটি টাকা ব্যয় হয়, কিন্তু নেপাল সীমান্তে তো তাদের সেটা করতে হয় না।’

নেপালে আরএসএস
রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ বা আরএসএস নেপালে হিন্দু স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ নাম নিয়ে কাজ করে। বীরগঞ্জের বাসিন্দা রঞ্জিত শাহ জনকপুর বিভাগে হিন্দু স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ বা এইচএসএসের প্রধান।

বীরগঞ্জ ভারত নেপাল সীমান্তের একটা শহর। সীমানার অন্যদিকেই বিহারের রক্সৌল জেলা।

বীরগঞ্জে গিয়েছিলাম রঞ্জিত শাহের সাথে দেখা করতে। দফতরে তিনি যেখানে বসেন, তার ঠিক পেছনেই আরএসএসের প্রতিষ্ঠাতা কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার আর সঙ্ঘের দ্বিতীয় ‘সরসঙ্ঘচালক’ এমএস গোলওয়ালকারের ছবি লাগানো ছিল।

সঙ্ঘের প্রধানদের ‘সরসঙ্ঘচালক’ বলা হয়। রঞ্জিত শাহের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, ’আপনি কি হেডগেওয়ার আর গোলওয়ালকারের থেকে অনুপ্রেরণা পান?’ তার জবাব ছিল, ’সঙ্ঘের স্বয়ংসেবক আমি, আর কার কাছ থেকে প্রেরণা পাব আমি?’ কথা বলতে বলতে শাহ নেপালের মদেশিয়া এবং পাহাড়িদের মধ্যে লড়াই, ভারত-নেপালের মধ্যে সীমানা বিবাদসহ সব সমস্যার মূলেই যে মুসলমানরাই, সেটা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন।

তার কথায়, ’নেপালের মদেশিয়া আন্দোলন তো মুসলমানদের ষড়যন্ত্র ছিল। পাহাড়ি আর মদেশিয়দের মধ্যে জেনেশুনেই লড়াই বাধানো হয়েছিল, যাতে লাভ হয়েছে মুসলমানদের।’ তিনি আরো বলছিলেন, ’নেপালের তরাই অঞ্চলে বিগত ১০ বছরে মুসলমানদের জনসংখ্যা ৪০০ ভাগ বেড়ে গেছে। সঙ্ঘ একটা অভ্যন্তরীণ সমীক্ষা চালিয়ে এই তথ্য পেয়েছে।’

সঙ্ঘ কী নেপালকে আবারো একটা হিন্দু রাষ্ট্র বানাতে চাইছে? এই প্রশ্নের জবাবেশাহ বলেন, ’প্রত্যেক হিন্দু এটাই চায়। তাদের মনে এই ইচ্ছাটা লুকিয়ে আছে। আর তাদের ওই ইচ্ছার পরিণামও দেখা যাচ্ছে। তবে কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, আমাদের সমাজেরই কিছু লোক এতে বাধা দিচ্ছেন।’

কিন্তু হিন্দু রাষ্ট্র হলে নেপালের কী লাভ, আমার এই প্রশ্নের উত্তরে শাহ পাল্টা প্রশ্ন করলেন, ’পাকিস্তান মুসলমান রাষ্ট্র হয়ে কী পেয়েছ?’ আমি যখন বললাম, ’আমার তো মনে হয় না ইসলামী দেশ হয়ে পাকিস্তানের খুব উন্নতি হয়েছে বা সেখানকার মুসলমানরা খুব ভাল আছেন।’

এই কথায় শাহ কিছুটা অস্বস্তিতে পড়লেন, বুঝলাম। তবে তিনি আবার বললেন, ’অস্ট্রেলিয়া তো খ্রিষ্টান দেশ, তারা কী লাভবান হয়েছে?’ সত্যটা হল অস্ট্রেলিয়া ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। রঞ্জিত শাহ আসলে কোনো সদুত্তর খুঁজে পাচ্ছিলেন না। কিন্তু তার চিন্তাভাবনাকে সত্য বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করেই যাচ্ছিলেন।

নেপালের রাজতন্ত্রের সাথে আরএসএসের পুরনো সম্পর্ক নেপালে আরএসএসের মোট ১২টি সংগঠন কাজ করে। তবে প্রায় ৬০ বছর আগে নেপালের রাজা মহেন্দ্রকে আরএসএস প্রধান দফতর নাগপুরে মকর সংক্রান্তির জমায়েতে আমন্ত্রণ করা হয়েছিল। ওই আমন্ত্রণ রাজা মহেন্দ্র স্বীকারও করেছিলেন। তবে রাজার নাগপুর যাওয়া নিয়ে ভারতের তৎকালীন কংগ্রেস সরকার অস্বস্তিতে পড়েছিল। ওই সময় আরএসএস প্রধান ছিলেন গোলওয়ালকর। তিনিই ঘোষণা করেছিলেন যে রাজা মহেন্দ্র মকর সংক্রান্তির জমায়েতে উপস্থিত হবেন।

এটা স্পষ্ট নয় যে রাজা মহেন্দ্র আরএসএসের আমন্ত্রণ গ্রহণ করার আগে তিনি দিল্লির সাথে যোগাযোগ করেছিলেন কিনা। ১৯৬০-এর দশকে নেপালে ভারতে রাষ্ট্রদূত হিসেবে কাজ করা শ্রীমন নারায়ণ ‘ইন্ডিয়া অ্যান্ড নেপাল : এন এক্সসারসাইজ ইন ওপেন ডেমোক্র্যাসি’ বইতে লিখেছেন, ’রাজা মহেন্দ্র যে সময় আরএসএসের আমন্ত্রণ স্বীকার করেছিলেন, তখন তার সাথে দিল্লির সম্পর্ক খুব ভাল ছিল না। অন্যদিকে নেপাল আর তার রাজাকে আরএসএস হিন্দু রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে দেখত। তারা নেপালকে রামরাজ্যের সাথে তুলনা করত যে দেশটি মুসলমান শাসকদের আক্রমণের ফলে ‘অশুদ্ধ’ হয়ে যায়নি। আরএসএসের স্বপ্নে তো নেপাল অখণ্ড ভারতের অংশ।’

প্রশান্ত ঝা নেপালের মূল বাসিন্দা। কিন্তু তিনি ভারতের ইংরেজি দৈনিক হিন্দুস্তান টাইমসের যুক্তরাষ্ট্র সংবাদদাতা। তার বই ‘ব্যাটলস অফ দা নিউ রিপাবলিক’-এ ঝা লিখেছেন, ’রাজা বীরেন্দ্র পঞ্চায়েতি ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিক্ষোভের মুখোমুখি হন। ওই সময়ে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ কাঠমান্ডুতে রাজা বীরেন্দ্রর সমর্থনে একটা জমায়েত করেছিল আর তাকে বিশ্ব হিন্দু সম্রাট উপাধি দিয়েছিল। রাজা সপরিবারে নিহত হওয়ার পরে রাজা জ্ঞানেন্দ্রকেও বিশ্ব হিন্দু পরিষদ একই উপাধি দেয়। নেপালের শাহ রাজবংশের সাথে উত্তরপ্রদেশের গোরখপুরের গোরখনাথ মঠের ঐতিহাসিক সম্পর্ক আছে। গোরখনাথ মঠের অনেক সম্পত্তি আছে নেপালেও, যার মধ্যে স্কুল আর হাসপাতালও আছে।’

যোগী আদিত্যনাথের সাথে নেপালের সম্পর্ক
গোরখনাথ মঠের প্রধান তথা উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ নেপালকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ঘোষণা করায় অখুশি ছিলেন। কেন্দ্রীয় সরকারের নেপাল নীতি নিয়ে প্রশান্ত ঝা ২০০৬ সালে যোগী আদিত্যনাথকে যখন প্রশ্ন করেছিলেন, তখন তিনি জবাব দিয়েছিলেন, ’একমাত্র নেহরুই ভারতকে বুঝতে পারতেন। তিনি জানতেন নেপালে রাজতন্ত্রই থাকা প্রয়োজন। সেজন্যই রাণাশাহীর পরে তিনি রাজাকে সিংহাসনে বসিয়েছিলেন। নেপালে যা হবে, আমরা তার দ্বারা প্রভাবিত হব।

তিনি বলেন, ’একমাত্র রাজতন্ত্রই নেপালে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারত। সেখানে মাওবাদী আর নকশালরা একসাথে কাজ করছে। নেপালে মাওবাদীরা ক্ষমতায় এলে ভারতে মাওবাদীদের শক্তি বাড়বে। যদি বিজেপি ক্ষমতায় থাকত, তাহলে নেপালে এটা হতোই না।’

বদলাচ্ছে হিন্দু-মুসলমান সম্পর্কও
বিশ্লেষকরা বলছেন, নেপালে একদিকে যখন হিন্দুত্ববাদীদের প্রভাব বাড়ছে, তখন মুসলমানরাও কট্টর হচ্ছেন ধীরে ধীরে।

সাংবাদিক চন্দ্রকিশোর ঝা বলছেন, ’হিন্দুদের মধ্যে যখন কট্টরপন্থী মনোভাব বাড়ছে, একইভাবে নেপালের মুসলমানদের মধ্যেও একই রি-অ্যাকশান দেখা যাচ্ছে। হিন্দুত্বের স্বপক্ষে ভারতে যে প্রচারযন্ত্র কাজ করছে, নেপালও তার বাইরে থাকছে না। যুবসমাজ একটু বেশিই জড়িয়ে পড়ছে এগুলোর মধ্যে। আরএসএস নেপালেও হিন্দু মুসলিম কার্ড খেলছে। তাই মুসলমানদের মধ্যেও একটা উদ্বেগ তৈরি হচ্ছে, তারাও সুরক্ষার অভাব বোধ করতে শুরু করেছে, তারাও নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে সচেতন হচ্ছে।’

তাই নেপালের মুসলমান যুব সমাজে আসাদুদ্দিন ওয়েইসি আর জাকির নায়েকের মতো ব্যক্তিরা খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন সাম্প্রতিক সময়ে।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2