প্রেম এসেছিল সরবে, মুশারফকে দু’দণ্ড শান্তি দিয়েছিলেন নাটোরের বনলতা সেন!
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৭ ফেব্রুয়ারী,মঙ্গলবার,২০২৩ | আপডেট: ০৩:০১ এএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
ঘটনাবহুল জীবন তাঁর। সেই বিতর্কিত এবং আলোচিত চরিত্র পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জেনারেল পারভেজ মুশারফের মৃত্যু হল ৭৯ বছরে। ব্যক্তিগত জীবনে কেমন ছিলেন পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এবং সেনাপ্রধান? কেমন ছিল তাঁর প্রেমজীবন? সে কথা নিজেই আত্মজীবনীমূলক বইতে লিখে গিয়েছেন মুশারফ। সেখানেই বলেছেন এক বাঙালি কন্যার সঙ্গে তাঁর প্রেমের কাহিনি। ভাষার বাধা ছিল, কিন্তু তা নাকি মনের বাধা হয়নি। কোথায় থাকেন তিনি? বাংলাদেশের নাটোরে নয় তো! নাম কি বনলতা সেন! কখনও জানাননি প্রেমিক মুশা।
২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত পাকিস্তানের শাসক ছিলেন মুশারফ। ২০০৬ সালে তাঁর আত্মজীবনীমূলক বই ‘ইন দ্য লাইন অব ফায়ার: আ মেমোয়ার’ প্রকাশিত হয়। সেখানে জীবনের নানা কথা তুলে ধরার সঙ্গে সঙ্গে নিজের প্রেমিক সত্তাও পাঠকদের সামনে তুলে ধরেন। মুশারফ জানান, তাঁর দ্বিতীয় প্রেমিকা ছিলেন এক বাঙালি মেয়ে। যদিও ব্যর্থ হয় সেই প্রেম। এবং সেই মহিলা এখন এক বাংলাদেশির ঘরনি। থাকেনও বাংলাদেশেই।
আত্মজীবনীতে মুশারফ লেখেন, ‘‘ও এখন সুখী দাম্পত্য কাটাচ্ছে। থাকে বাংলাদেশে।’’ কিন্তু ওই বাঙালি প্রেমিকার নাম কখনও জনসমক্ষে আনেননি কূটনীতিক মুশা। দ্বিতীয় প্রেমিকাকে নিয়ে আত্মজীবনীতে যে কয়েক লাইন লিখেছেন, সেখানে শুধু ‘বাঙালি’ শব্দের উল্লেখ রেখেছেন। আর জানিয়েছেন কী ভাবে এই প্রেম হয়েছিল।
প্রাক্তন পাক প্রেসিডেন্ট জানান, বাঙালি কন্যার সঙ্গে প্রেমের আগে অন্য একটি সম্পর্কে ছিলেন। কিন্তু সে নেহাতই কিশোর বয়সের ভাললাগা। ভালবাসা কি না বুঝতে না বুঝতেই ‘প্রথম প্রেমিকা’ মুশারফের জীবন থেকে হারিয়ে যান।
দ্বিতীয় প্রেম অর্থাৎ, বাঙালি তরুণীর সঙ্গে তাঁর প্রেমকে প্রথমের চেয়ে অনেক বেশি গভীর বলে উল্লেখ করেছেন মুশারফ। কিশোর প্রেমের আখ্যানে মুশারফ লিখেছেন, কী ভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেমিকাকে চিঠি পাঠাতেন। কী ভাবে তাঁর সঙ্গে দেখা করার জন্য অধীর আগ্রহে থাকতেন।
মুশারফ জানিয়েছেন, ওই বাঙালি প্রেমিকা তাঁর প্রতিবেশিনী ছিলেন। করাচির গার্ডেন রোডে ছিল তাঁদের পাশাপাশি বাড়ি। যাতায়াতের পথেই পরিচয় এবং মন দেওয়া-নেওয়া।
বয়সে ছোট ধাওয়ানের সঙ্গে দ্বিতীয় বিয়ে, বাঙালি কিকবক্সার আয়েশাকে শুনতে হয় কটূক্তিও
২৪ টি ছবিWho is Youtuber Tiba Al Ali? Whose Honour killing has created an outrage in Iraq and social media worldwide dgtl
‘লজ্জা ধুয়ে ফেললাম’! ইউটিউবার মেয়েকে খুন করে ঘোষণা বাবার, ক্ষোভে ফুঁসছেন ভক্তরা
২০ টি ছবিTwenty hours after major’s martyrdom in Jammu & Kashmir, daughter set to join army
জঙ্গিদের গুলিতে নিহত বাবার মতোই সেনায় যোগ দিতে চান মেয়ে, ফেরালেন ‘সুখের চাকরির’ প্রস্তাব
আত্মজীবনীতে মুশারফ জানান, গার্ডেন রোডের বাড়ি ছিল তাঁর কিশোর প্রেমের রাজধানী। প্রথম প্রেমিকার বাড়ি ছিল গার্ডেন রোডে। কিন্তু পরে তাঁর পরিবার অন্যত্র বাড়ি নিয়ে চলে যান। তার পর শুরু দ্বিতীয় প্রেম।
দ্বিতীয় প্রেমিকাকে নিয়ে মুশারফ লেখেন, ‘‘ও ছিল সুন্দরী এবং বাঙালি। পূর্ব পাকিস্তানে ওদের বাড়ি। আগের প্রেমের মতো এই প্রেম আমার কাছে অতটা তুচ্ছ ছিল না।’’ তিনি যে এই প্রেম নিয়ে ‘সিরিয়াস’ ছিলেন, তা পরোক্ষে বোঝাতে গিয়ে এই ‘অতটা তুচ্ছ’ শব্দ ব্যবহার করেছেন পাকিস্তানের প্রাক্তন পাক কূটনীতিক।
মুশারফ জানান, তাঁর দ্বিতীয় প্রেমের সম্পর্ক বেশ কয়েক বছর টিকেছিল। তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া ইস্তক নিয়মিত দেখাসাক্ষাৎ করতেন প্রেমিকার সঙ্গে। এমনকি পাক সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় লেফটেন্যান্ট হওয়া পর্যন্ত সম্পর্কে ছিলেন।
সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার পরও মুশারফের মন পড়ে থাকত পাড়ায়। আরও স্পষ্ট করে বললে বাঙালি প্রেমিকার জন্য। তিনি জানান, প্রথম ভাগে করাচিতে ৩৬তম ‘লাইট অ্যান্টি-এয়ারক্র্যাফ্ট রেজিমেন্ট’-এ প্রশিক্ষণ নিতে গিয়েছিলেন যাতে প্রেমিকার কাছ থেকে খুব দূরে কোথাও না যেতে হয়।
বইতে মুশারফ লেখেন, ‘‘কেন সেনা প্রশিক্ষণের জন্য করাচিকে বেছে নিয়েছিলাম আমি? না, তার কারণ আমার পরিবার নয়। এটা ছিল ওই বাঙালি কন্যার জন্য। ও ওখানে থাকত তাই...’’
কিন্তু ন্যূনতম অস্ত্র প্রশিক্ষণ ছাড়া তো সরাসরি ‘অ্যান্টি এয়ারক্র্যাফ্ট রেজিমেন্ট’-এ যাওয়া যায় না। তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও পরে অন্যত্র চলে যেতে হয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া মুশারফকে। প্রেমিকার জন্য মনকেমন করা অনুভূতি নিয়েই তাঁর কাছ থেকে দূরে সরে যান তিনি।
মুশারফ জানান, তাঁর এই দ্বিতীয় প্রেমের ‘সমাপ্তি’ ছিল ‘আকস্মিক’ এবং ‘অপ্রত্যাশিত’। মুশারফ লেখেন, ‘‘সবচেয়ে খারাপ ব্যাপার হল মেয়েটির পরিবার আচমকা পূর্ব পাকিস্তান চলে গেল। আর সেখানেই শেষ হল প্রেম।’’
বাঙালি কন্যার সঙ্গে প্রেম করতে গিয়ে ধরাও পড়েন প্রাক্তন পাক সেনাপ্রধান। সমস্যা হয় মেয়েটির। মুশারফ লেখেন, ‘‘ওর মা আমাদের সম্পর্ক নিয়ে সন্দেহ করেন। কারণ, ও (প্রেমিকা) পড়াশোনায় ক্রমশ অমনযোগী হয়ে পড়েছিল।’’
মুশারফ লেখেন, ‘‘আমি গড়পড়তা পড়ুয়ার চেয়ে ভাল পড়াশোনায় ছিলাম। মোটামুটি ক্লাসের প্রথম চার-পাঁচ জনের মধ্যে নাম থাকত। আমার যখন বয়স ১৫ বছর, আমার পরীক্ষার ফলও খারাপ হতে থাকে।’’
মুশারফ লিখেছেন তাঁর প্রথম প্রেম হয়তো ভাল লাগার চেয়ে বেশি কিছু ছিল না। তবে চিঠি দেওয়া-নেওয়া চলতই। নানি আম্মার অজান্তে তাঁকেই ‘প্রেমের ডাকপিয়ন’ করেছিলেন ছোট্ট মুশা। দাদিকে বলতেন, ‘‘যাও প্রতিবেশীর সঙ্গে দেখা করে এসো।’’ আর তাঁর অলক্ষ্যে বোরখার পকেটে ভরে দিতেন প্রেমপত্র।
প্রেমিকাকে আগেই বলা থাকত, কোথায় থাকবে প্রেমপত্র। এ ভাবেই বেশ কিছু দিন চলছিল সেই প্রেম। কিন্তু প্রথম প্রেমিকার পরিবার অন্যত্র বাড়ি নিয়ে চলে যাওয়ার পর মুশারফের জীবনে প্রবেশ দ্বিতীয় প্রেমের।
তবে দ্বিতীয় প্রেমটা জোরালোই ছিল। কিন্তু সেখানেও ব্যর্থ হন। এখন সেই প্রেমিকা এক বাঙালির ঘরনি। বাংলাদেশ কিংবা পশ্চিমবঙ্গে থাকেন বলে জানান মুশারফ।