avertisements 2

তেলের আগুন লেগেছে চালে

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৫ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০১:৫৫ এএম, ২৬ এপ্রিল,শুক্রবার,২০২৪

Text

জ্বালানি তেলের সঙ্গে পালস্না দিয়ে পণ্যবাহী ট্রাকের ভাড়া বেড়েছে। এর প্রভাবে অন্য পণ্যের সঙ্গে প্রায় সব ধরনের চালের দামও এখন ঊর্ধ্বমুখী। খোলা বাজারে চাল প্রতি কেজি দেড় থেকে দুই টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। অথচ গত কয়েক মাসে দেশে প্রচুর পরিমাণ চাল আমদানি হয়েছে। পাশাপাশি আমদানি শুল্কও কমানো হয়েছে।

আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য হ্রাসের পাশাপাশি সরকারি গুদামগুলোয় রেকর্ড পরিমাণ চাল মজুত রয়েছে। এ অবস্থায় শুধু ট্রাকভাড়া বাড়ায় চালের মূল্য বাড়ানো কতটা যুক্তিযুক্ত তা নিয়ে বাজার পর্যবেক্ষকরা প্রশ্ন তুলেছেন। তবে চাল ব্যবসায়ীদের দাবি, নিরূপায় হয়ে তারা চালের দাম বাড়িয়েছে। তারা জানান, দেশের চালের অন্যতম বড় মোকাম কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় ট্রাকের ভাড়া এর মধ্যেই অন্তত ৪-৫ হাজার টাকা বেড়েছে। ফলে মিনিকেট, নাজির এবং বিআর আটাশসহ সব ধরনের চালের দাম বস্তাপ্রতি ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ঢাকা রাইস এজেন্সির মালিক মোহাম্মদ সায়েম বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে চাল আনতে ট্রাকপ্রতি ভাড়া বেড়েছে গডে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। ডিজেলের দাম বাড়ানোর আগে ট্রাকভাড়া ছিল ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা। এখন গুনতে হচ্ছে ১৯ থেকে ২০ হাজার টাকা। এ হিসেবে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) দাম বেড়েছে ১০০ টাকা। আর কেজি প্রতি দাম বেড়েছে দুই টাকা। একই প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। বাবু বাজার চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. নিজাম উদ্দিন সরকার বলেন, ডিজেলের দাম বৃদ্ধির পরে কুষ্টিয়ার বড় মোকাম থেকে ঢাকায় ট্রাকের ভাড়া এরই মধ্যে কমপক্ষে তিন থেকে চার হাজার টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে চালের দামে। ঢাকার কারওয়ান বাজারে জনতা রাইস এজেন্সির মোহাম্মদ রাসেল বলেন, ট্রাক ভাড়া বেড়েছে।

প্রতি ট্রাকের ভাড়া ৪ হাজার টাকা বাড়িয়ে ১৯ হাজার টাকা করা হয়েছে। এতে প্রতি বস্তায় খরচ বেড়েছে। মিরপুর শাহ আলী মোকামের পাইকারি বিক্রেতা আবুদর রহিম বলেন, গতকাল এক ট্রাক চালের অর্ডার দিয়েছেন রসিদ মিনিকেটের কাছে। তারা ভাড়া বাবদ ট্রাকপ্রতি ৩ হাজার টাকা বেশি নির্ধারণ করেছে। এই টাকাটা চালের খুচরা বিক্রির ওপর প্রভাব ফেলছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, এখন খুচরা বাজারে যে দামে চাল বিক্রি হচ্ছে তা আগের বছরের তুলনায় ৭ শতাংশ পর্যন্ত বেশি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখনো বাজারে নতুন চাল আসেনি। এ ছাড়া ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় চালের সরবরাহ খরচ বেড়েছে। ফলে এই সময়টাতে দাম যতটুকু কমার কথা \হছিল ততটা কমছে না। রাজধানীর খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সাধারণ মানের মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৭ থেকে ৬০ টাকা কেজি।

বিক্রেতারা বলছেন, কয়েক সপ্তাহ আগে মিনিকেট চাল ৫৬ টাকায়ও পাওয়া যেত। বাজারে সাধারণ মানের নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি। এ ছাড়া আঠাশ ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, কাজল লতা ৫২ থেকে ৫৪ টাকা, পাইজাম ৫২ থেকে ৪৫ টাকা, গুটি স্বর্ণা ৪২ থেকে ৪৪ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। টিসিবির হিসাবে বর্তমানে মিনিকেট, নাজিরশাইলসহ সরু চালের দাম গত বছরের এই সময়ের তুলনায় ৬.৯০ শতাংশ বেশি রয়েছে। সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৬৮ টাকা কেজি। গত বছর এ সময় যা ৫৪ থেকে ৬২ টাকা ছিল। তবে মোটা চালের দাম গত বছরের এই সময়ের দামেই বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা কেজি।

যাত্রাবাড়ীর চালের আড়ত বিসমিলস্নাহ রাইস এজেন্সির মালিক মো. মাসুম বলেন, আগে তারা রাজশাহী, নওগাঁ, কুষ্টিয়া থেকে প্রতি ট্রাকে ১৫ টন করে চাল আনতেন ১৪ হাজার টাকা ভাড়ায়। এখন ১৮ হাজার টাকা লাগছে। সে হিসেবে মিল থেকে আনতে পরিবহণ খরচ বেড়েছে ২৮ শতাংশ। ডিজেলের দাম না বাড়লে আমন মৌসুমের এই সময়টাতে চালের দাম ২০-২৫ পয়সা করে কমত মিল পর্যায়ে। কিন্তু এবার তা হচ্ছে না।

কৃষি বিপণন বিভাগের তথ্য অনুসারে, গত ১১ নভেম্বর বাজারে প্রতি কেজি মোটা চালের খুচরা মূল্য ছিল ৪৪ টাকা থেকে ৪৮ টাকার মধ্যে। দেশের সিংহভাগ মানুষ এই চাল কেনেন। গত মে মাসে কেজি প্রতি মোটা চালের দাম ছিল ৪২ টাকা ৬৩ পয়সা। দেশের মানুষের কাছে প্রধান খাদ্য হিসেবে বিবেচিত চালের এই ঊর্ধ্বমুখী দরের ভেতরেই আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, গত জুলাই থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে ৭ লাখ ৭৩ হাজার টন চাল আমদানি হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময় চাল আমদানির পরিমাণ ছিল শূন্যের কোঠায়।

আমদানিকৃত চালের মধ্যে সরকার এনেছে ৪ লাখ ৯৪ হাজার টন। আর ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানি হয়েছে ২ লাখ ৭৯ হাজার টন। ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত কোনো চাল আমদানি না হলেও রাষ্ট্রীয় গুদামগুলোয় খাদ্যের মজুত কমে আসা ও দেশের বাজারে চালের উচ্চমূল্যের কারণে পরিস্থিতির বদল ঘটে। এমন পরিস্থিতিতে আমদানি বাড়াতে সরকার চালের আমদানি শুল্ক ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করে। ফলে গত অর্থবছরের শেষে চাল আমদানির পরিমাণ দাঁড়ায় ১৩ লাখ ৫৯ হাজার টন। সরকার এখন রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির ভিত্তিতে চাল আমদানির উদ্যোগ নেওয়া শুরু করেছে। এর অংশ হিসেবে সরকার ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট ১২ লাখ ৫০ হাজার টন চাল আমদানির জন্য সরবরাহকারী দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তি করেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সরকার চাল কিনেছে ১০ লাখ ৬৬ হাজার টন।

এ ছাড়া গত অর্থবছরের শেষের দিকে খাদ্য মন্ত্রণালয় ৩২০টি বেসরকারি কোম্পানিকে ১৫ লাখ ৬১ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি দেয়। খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরে আরও ৪১৫টি বেসরকারি সংস্থা ১৬ লাখ ৯৩ হাজার টন চাল কেনার সম্মতি পেয়েছে। ১০ নভেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানি হয়েছে ১০ লাখ ৬৫ হাজার টন। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, গত ১০ অক্টোবর রাষ্ট্রীয় গুদামগুলোয় চালের মজুত ছিল ১৩ লাখ ৭০ হাজার টন। গত বছরের একই দিনে এর পরিমাণ ছিল ৮ লাখ ২ হাজার টন।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2