‘আগে দুপুরে ভাত খাইতাম, এখন রুটি-কলায় পেট ভরাই’
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২ নভেম্বর,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০৬:১৫ এএম, ২৫ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
'চাকরির কারণে সারাদিন পথেই কাটাতে হয়। কিছুদিন আগেও ৪০ টাকা খরচ করলে দুপুরে ডিম কিংবা ভর্তা-ভাজি দিয়ে ভাত খাইতে পারতাম, কিন্তু এখন ৭০ টাকার নিচে হয় না। এমনিতেই সংসার চলছে না, দুপুরে খাওয়ার জন্য এত টাকা পাব কোথায়! তাই এখন ভাতের বদলে পাউরুটি-কলায় পেট ভরাই'। এভাবেই নিজের বর্তমান পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় প্রতিনিধি সাব্বির রহমান।
সোমবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের একটি চায়ের দোকানে কথা হয় সাব্বিরের সঙ্গে। তিনি জানান, মাত্র ১২ হাজার টাকা বেতন পান তিনি। এ ছাড়া বিক্রয় কমিশন ও যাতায়াতভাতা বাবদ আরো হাজার পাঁচেক টাকা আয় হয় তার। এই টাকাতেই ঢাকায় নিজের থাকা-খাওয়ার খরচ মেটানোর পর গ্রামে থাকা ৪ সদস্যের পরিবার চালাতে হয় তাকে। সাব্বির বলেন, এমনিতেই সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। আর এখন জিনিসপত্রের যে দাম, তাতে সংসার চলানো মুশকিল হয়ে গেছে। তাই যেভাবেই পারছি খরচ কমানোর চেষ্টা করছি। এজন্য খাওয়াও কমিয়ে দিয়েছি।
শুধু সাব্বির নয়, তার মতো আরো অনেকেই জীবনের ব্যয়ের খাতায় কাঁচি চালিয়েছেন বলে জানালেন চা-দোকানি ফারুক। তিনি জানান, 'আগে রুটি, কেক কিংবা কলার কাস্টমার ছিলেন সাধারণত নিম্নআয়ের শ্রমিক শ্রেণির মানুষেরা। কিন্তু এখন শিক্ষার্থী, এমনকি চাকরিজীবীরাও দুপুরে তার দোকানে দুপুরে বনরুটি কিনে খান। ফারুক বলেন, 'মানুষ কী করবে বলেন! সবার অবস্থাই তো খারাপ হয়ে গেছে। আমি নিজেই আগে যে টাকা কামাইতাম তার থেকে মাস শেষে ২-৪ হাজার টাকা জমাইতে পারতাম। এখনও সেই আগের মতোই কামাই করি, কিন্তু তারপরও মাস শেষে এখন ধার করতে হয়। '
চায়ের দোকানে বসে থাকা বেলাল হোসেন নামের এক প্রাইভেটকার চালক বলেন, সংসার চালাতে আমি নিজেও খাওয়া কমিয়ে দিয়েছি। এ ছাড়া তো আর উপায় নাই। এখন সকালে শুধু ডাল-পরোটা দিয়ে নাস্তা করলেও জায়গাভেদে ৪০-৫০ টাকা লাগে। আর দুপুরে বা রাতে ভাত খাইতে গেলে ১০০ টাকার নিচে হয় না। নিজের খাওয়ার জন্য এত টাকা খরচ করলে সংসার চালামু ক্যামনে!
এদিকে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) এক গবেষণা প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, সাধারণ মানুষের অনেকেই খাদ্য ব্যয় কমিয়ে আনতে খাবারের তালিকা থেকে বাদ দিচ্ছেন মাছ-মাংসসহ বিভিন্ন আমিষ। গত ২০ অক্টোবর ‘বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার আভাস ও বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ উত্তরণ কোন পথে?’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানায়, বর্তমানে রাজধানীতে বসবাসরত চার সদস্যের একটি পরিবারের মাসে খাদ্য ব্যয় ২২ হাজার ৪২১ টাকা। মাছ-মাংস বাদ দিলেও খাদ্যের পেছনে ব্যয় হবে ৯ হাজার ৫৯ টাকা। এটা ‘কম্প্রোমাইজড ডায়েট’ বা আপসের খাদ্য তালিকা।
শুধু বাংলাদেশ নয়, মূল্যস্ফীতির কারণে যুক্তরাজ্যের মতো উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতেও সাধারণ মানুষ জীবনযাপনের খরচে কাঁচি চালিয়েছে। ফ্রান্সের বহুজাতিক বাজার গবেষণা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইপসোসের এক সমীক্ষা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যে জীবনযাপনের খরচ অনেকটাই বেড়ে গেছে। এ কারণে গ্যাস–বিদ্যুতের বিল বাঁচাতে ঘর গরম রাখার হিটিং ব্যবস্থা বন্ধ রাখছেন প্রতি তিনজনের মধ্যে দু’জন মানুষ। গাড়ি চালানো কমিয়েছেন ৫০ শতাংশ মানুষ। আর ২৫ শতাংশ মানুষ কোনো কোনো বেলা না খেয়ে খরচ বাঁচানোর চেষ্টা করছেন।