avertisements 2

বিপজ্জনক হয়ে উঠছে ডেঙ্গু

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৯ অক্টোবর, বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:১৩ পিএম, ২৪ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪

Text

অসময়ে দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। গতকালও ৯শ’ ডেঙ্গু রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রাজধানী ঢাকায় এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। প্রতিদিন ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত শত শত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় স্থান সঙ্কুলান করা সম্ভব হচ্ছে না। করোনা ভাইরাস মহামারির পর নাজুক অর্থনৈতিক বাস্তবতায় ডেঙ্গুর এই বাড়-বাড়ন্ত নতুন করে শঙ্কায় ফেলছে। করোনা সংক্রমক রোগ হলেও ডেঙ্গু সংক্রমক রোগ নয়। এডিস মশাবাহিত এ রোগ কী কারণে হয় তা সবার জানা। এডিস মশা যে সব যায়গায় লার্ভা জন্ম দেয় সে সব এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করলেই এ রোগ থেকে পরিত্রাণ মেলে। রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশন মশা নিধনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থ। কিন্তু সিটি কর্পোরেশনকে ব্যর্থতার দায় দিয়ে নাগরিকরা কি এডিস মশার বংশ বিস্তার রোধে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছি? নাগরিকরা দায়িত্বশীল হয়ে নিজেদের বাসাবাড়ি এবং আশপাশের ডোবা, আবর্জনা পরিষ্কার করলেই এডিস মশা লার্ভা জন্ম দিতে পারবে না। এতে ডেঙ্গু রোগ নিয়ন্ত্রণ হবে।

কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, এডিস মশা প্রতিরোধে নাগরিকদের সচেতনতামূলক কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন, সারা দেশের প্রতিটি সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, জেলা-উপজেলাসহ স্থানীয় প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে পরিবেশগত নিরাপত্তা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর জোর দিতে হবে। একই সঙ্গে এডিস মশার বিস্তার রোধে স্কুল-কলেজ, মাদরাসাসহ সব সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনকেও স্থানীয় পর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালাতে হবে। ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে সুনাগরিক হওয়া অত্যাবশ্যক।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ শিশু স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর ডা. জাহাঙ্গীর আলম ইনকিলাবকে বলেন, প্রতিদিনই ভয়াবহ হচ্ছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি। বিশেষ করে শিশুরা বেশি আক্রান্ত হওয়ায় পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। গত এক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে বেড ফাঁকা নেই। একজন ভালো না হলে অন্যজনকে ভর্তি করা যাচ্ছে না। তবে যারা তাড়াতাড়ি আসেন, তাদের জটিলতা কম থাকে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ও কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অক্টোবরেও ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি ছিল। এমন পরিস্থিতি আরো ২ সপ্তাহ থাকতে পারে।

প্রতিবছরই একটি নির্দিষ্ট সময়ে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। তবে এ বছর সেই সময়ের পরেও দেশে বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে এডিস মশার প্রকোপ। ডেঙ্গুর প্রকোপ সাধারণত এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেখা যায়। তবে এবার অক্টোবরেও দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। এমনকি অন্য বছরের তুলনায় এবার ডেঙ্গু রোগীদের জটিলতা ও মৃত্যু বেড়ে গেছে। উপসর্গ দেখামাত্র হাসপাতালে ভর্তি হলেও ভর্তির দুই-তিন দিনের মধ্যেই রোগী দুর্বল হয়ে যাচ্ছে, বমি হচ্ছে এবং শেষ অবধি রোগীকে বাঁচাতে পারছেন না চিকিৎসকরা। এ বছর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবকে ‘বিপজ্জনক’ বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা এর জন্য দুটি কারণ চিহ্নিত করেছেন একটি হলো জলবায়ু পরিবর্তন, অন্যটি ডেঙ্গুর ধরন বদলে যাওয়া। এমন পরিস্থিতিতে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ডেঙ্গুর ‘হটস্পট’ ব্যবস্থাপনা এবং সময়মতো ডেঙ্গু চিকিৎসার ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে এ দুটোর কোনোটাই সঠিকভাবে হচ্ছে না বলেও মনে করেন তারা। সে কারণেই এবার ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়েছে এবং রোগীদের দুর্ভোগ বেশি হচ্ছে বলে মত দিয়েছেন তারা। ফলে সামনে কী পরিস্থিতি তৈরি হবে, তা রীতিমতো উদ্বেগে ফেলেছে সংশ্লিষ্টদের। এদিকে মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ার পর ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের অভিযান নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। মশক নিধনের দায়িত্বে থাকা করপোরেশনের অভিযানের রুটিনগুলো দেখলেও তেমন চিত্র মিলে। যখন এডিস মশার উৎপাত বেড়ে যায় তখনই নড়েচড়ে বসে সিটি কর্পোরেশন। ঢাকঢোল পিটিয়ে অভিযান চালানো হলেও এর সুফল আসে খুব কম। আবার এমন অনেক এলাকা আছে যেখানে মাসের পর মাস পার হলেও মশক নিধনকর্মীদের চোখে দেখেন না সংশ্লিষ্ট বাসিন্দারা। তবে সিটি কর্পোরেশন কর্মকর্তাদের দাবি, সাধারণ মানুষ সচেতন না হলে কোনোভাবে মশক নিধন সম্ভব না। কারণ এডিস মশা মানুষের বাড়ির ভেতরে জন্ম নেয়। আর সিটি করপোরেশন কারো বাড়ি পরিষ্কার করতে পারে না। তাই ব্যক্তি পর্যায়ে জনসচেতনতা খুব জরুরি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলতি মাসজুড়েই ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বড় আকারে থাকবে। তবে, নভেম্বরে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে আসবে। কারণ, তখন শীতের পাশাপাশি বৃষ্টিরও আশঙ্কা কম থাকে। একই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে চলতি মাসে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি। মূলত, এ বছর দেরিতে বর্ষা আসার পাশাপাশি থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় এডিস মশার প্রজনন অক্টোবরেও বেশি ছিল। ফলে দীর্ঘায়িত হয়েছে ডেঙ্গু মৌসুম। এদিকে চিকিৎসকরা বলছেন, সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। জ্বর হলে কোনোভাবেই অবহেলা করা যাবে না। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না নেওয়ায় ডেঙ্গু রোগীর শরীর হঠাৎ নিস্তেজ হয়ে যাওয়া, হেমোরেজিক ফিবার বা অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণে মৃত্যু বাড়ছে।

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও প্রখ্যত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ ইনকিলাবকে বলেন, অসময়ে ডেঙ্গু নিয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। যে কারো জ¦র হলে শুরু থেকেই যেন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নেয়, দেরি না করে। অনেকেই দেরি করে। ভাবে দেখি, ভাইরাস ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু পরে যখন রোগী সিরিয়াস হয়ে যায়, তখন চিকিৎসা দেরি হয়ে যায়। দেরি হয়ে গেলেই সমস্যা হয়। জ্বর হলেই যদি টেস্ট করে, ডায়াগনস্টিক যদি হয়ে যায়, সে অনুযায়ী চিকিৎসা চললে সহজ হয়। পরে যখন আসে, তখন রোগী জটিল হয়ে যায়। এ জন্য চিকিৎসার ব্যাপারে সবাই যেন সতর্ক থাকে সে পরামর্শ দেন তিনি।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। প্রায় সব জেলার হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চাপ বাড়ছে অনেক। এই সময়ে এত ডেঙ্গু রোগী অনাকাক্সিক্ষত। মশা নিধন না করা গেলে পরস্থিতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। তাই বাসাবাড়িতে মানুষকে সচেতন হতে হবে। আর মশা নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে ডেঙ্গু রোগী বাড়বেই। তিনি এডিস মশার লার্ভা নিধনে সিটি করপোরেশনকে আরো সক্রিয় হওয়ার কথা বলেছেন। জাহিদ মালেক বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সেবার কাজ করছে। আর সিটি কর্পোরেশনকে মশা নিধনে জোরালোভাবে কাজ করতে হবে।

সূত্র মতে, বাংলাদেশে ১২৩ প্রজাতির মশার রেকর্ড রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে ঢাকায় প্রায় ১৪ প্রজাতির মশা পাওয়া যায়। এগুলোর মধ্যে কিউলেক্স, এডিস, অ্যানোফিলিস, আর্মিজেরিস, ম্যানসোনিয় ও টস্কোরিনকাইটিস অন্যতম। মশার উৎপত্তিস্থল যথাযথভাবে ধ্বংস না করলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয় বলেও মতামত দেন সংশ্লিষ্টরা। এমন পরিস্থিতিতে গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে নতুন করে রেকর্ড ৯০০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি থাকা ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২২৭ জনে। এদিকে, একই সময়ে ডেঙ্গুতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ৯৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে নতুন ভর্তি হওয়াদের মধ্যে ৫২৮ জন ঢাকার বাসিন্দা। ঢাকার বাইরে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৭২ জন। বর্তমানে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ২ হাজার ১৪৮ জন। আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি আছেন ১ হাজার ৭৯ জন। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৬ হাজার ৯৩৮ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ২৩ হাজার ৬১২ জন। গত ১৩ অক্টোবর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আটজনের মৃত্যু হয়। এটি এ বছর এক দিনে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা।

অথচ গত ৯ বছরের ডেঙ্গু পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের সময় বদলে গেছে। এই ৯ বছরের মধ্যে ২০১৪ সালে জুলাই মাসে সে বছরের সর্বোচ্চ ৮২ রোগী ছিল। সেপ্টেম্বরে বছরের সর্বোচ্চ রোগী ছিল চার বছর ২০১৫ সালে ৯৬৫ জন, ২০১৬ সালে ১৫৪৪ জন, ২০১৮ সালে ৩০৮৭ জন ও ২০২১ সালে ৭৮৪১ জন। আগস্টে সর্বোচ্চ ৫২,৬৩৬ রোগী ছিল ২০১৯ সালে। নভেম্বরে সর্বোচ্চ ৫৪৬ রোগী ছিল ২০২০ সালে। কিন্তু আগের সব রেকর্ড ভেঙে এবার ডেঙ্গুর সর্বোচ্চ প্রাদুর্ভাব চলছে চলতি অক্টোবরে।

সূত্র মতে, বর্তমানে ডেঙ্গুর সবচেয়ে বড় হটস্পট ঢাকার মিরপুর। এ ছাড়া ক্রমান্বয়ে উত্তরা, মুগদা, যাত্রাবাড়ী ও ধানমন্ডিতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত বেশি। রাজধানীর বাইরে আরো অন্তত ৫০ জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়লেও মূলত পাঁচ বিভাগে বেশি রোগী মিলছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কক্সবাজার জেলায়।

অক্টোবরে ভয়াবহতার বিষয়ে প্রফেসর ড. কবিরুল বাসার বলেন, ২০০০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ এ বছরের মতো ছিল না। এ বছর অস্বাভাবিক একটি পরিস্থিতি দেখতে পাচ্ছি। এর একটি কারণ হলো জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের বৃষ্টিপাতের সময় পরিবর্তন হয়েছে। এখন অক্টোবরেও থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। যে কারণে এডিস মশার প্রজনন অক্টোবরেও যথেষ্ট পরিমাণে হচ্ছে। আরেকটি কারণ হচ্ছে, যখন ডেঙ্গুরোগী বাড়তে থাকে, তখন এডিস মশাও বাড়তে থাকে। একই সঙ্গে যদি দুটি জিনিস বাড়ে, সেটার যেকোনো একটাকে কমিয়ে দিতে হয়। কমিয়ে দিলেই সংক্রমণকে ধীরগতির করা যায়। আমরা কোনোটাই কমাতে পারছি না।

এবার ডেঙ্গুর ধরনের কারণেও সংক্রমণ বেশি হচ্ছে জানিয়ে এই কীটতত্ত্ববিদ বলেন, বাংলাদেশে সেরোটাইপ-১ ও ৩ দিয়ে মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। কোনো না কোনো বছর যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল। সেই মানুষটা যদি আবার কোনো একটি নতুন সেরোটাইপ দিয়ে আক্রান্ত হয়, তখন সেই মানুষের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এ বছর এটাই হয়েছে।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. খলিলুর রহমান বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ৪০ জন ভর্তি হয়েছে। এখন ১০০ জনের বেশি ভর্তি আছে। অক্টোবর থেকেই বেড়ে গেছে। তার আগে দৈনিক ৫-৭ জন করে আসত। শিশু রোগীর সংখ্যা ১০-২০ শতাংশের মতো। এখানে ডেঙ্গুতে এখনো কেউ মারা যাননি। কিন্তু রোগীদের অবস্থা অন্যান্য সময়ের তুলনায় কিছুটা জটিল। রোগীরা খুব তাড়াতাড়ি দুর্বল হয়ে যায়। কারো প্রেসার কমে যাচ্ছে। কেউ কেউ খেতে পারছে না। এ ধরনের রোগী বেশি।

জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) উপ-প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা লে. কর্নেল গোলাম মোস্তফা সারওয়ার বলেন, এবার মূলত বৃষ্টির কারণেই মশার উৎপাত বা মশাবাহিত রোগ বেড়েছে। গতকাল থেকে বড় আকারে অভিযান পরিচালনা শুরু হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। মাঠে মশক নিধনকর্মীদের কাজের বিষয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, আমাদের মাঠে আউটসোর্সিং ৫৪০ জন আর নতুন ৩৬ জন মিলে সর্বমোট কর্মী আছে ৯০০-এর মতো। তাদের দিয়ে ৫৪টি ওয়ার্ডে মশক নিধন করতে খুব একটা সমস্যা হচ্ছে না। তাই লোকবলের অভাব আছে সেটা আমরা বলতে পারছি না। অভিযান নিয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কোনো একটা সংস্থা এককভাবে কোনো দেশে পারবে না। কারণ এটা বাড়ির ভেতরে হয়। তাই মানুষের বাড়ির ভেতরে তো আমরা পরিষ্কার করতে পারব না। গত সপ্তাহেও দক্ষিণখানে গিয়ে যা অবস্থা দেখতে পেলাম তা স্থানীয় লোকজনকে দেখিয়েছি। ফলে নিজেরা সচেতন না হলে খুব কঠিন সব ঠিকঠাক করা। নির্মাণাধীন ভবনের বিষয়েও আমরা অংশীজনের সঙ্গে সভা করেছি। কিছু সুফল পেয়েছি। আর যারা এখনো এ বিষয়ে গাফিলতি করছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সূত্রে জানা যায়, চলতি সপ্তাহের রোববার শুরু হওয়া ৫টি ওয়াডের্র চিরুনি অভিযান ২০ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে। এডিস মশার প্রজননস্থল নির্মূল ও ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে এই চিরুনি অভিযান শুরু হয়েছে। এ অভিযানে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে সকালের লার্ভিসাইডিং কার্যক্রমে ১৩ জন ও বিকালের এডাল্টিসাইডিং কার্যক্রমে ১৩ জন মশক নিধনকর্মী অংশ নিয়েছেন। নিজ নিজ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এই কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. আহমেদুল কবির বলেন, হাসপাতালে আসা অধিকাংশ রোগী আগেও এক বা একাধিকবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ছিলেন। তাই এবারের লক্ষণগুলো প্রকট। অনেক রোগী জটিল পরিস্থিতি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। ফলে ভর্তির ৩ দিনের মধ্যে বেশি মারা যাচ্ছেন।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2