অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেনকে দেখাশোনা করতে এসে সম্পত্তি দখল!
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৬:১৪ পিএম, ২৫ অক্টোবর,রবিবার,২০২০ | আপডেট: ০৬:২৪ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
বিমানবাহিনীর এক অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেনকে দেখাশোনার নাম করে ছয় বছর আগে রাজধানীর গুলশানের একটি বাড়িতে ঢুকেন এক ভারতীয় নারী। ১০ অক্টোবর ওই কর্মকর্তা মারা যাওয়ার পর শতকোটি টাকার সম্পত্তি নিজের দখলে নিয়ে গেছেন অঞ্জু কাপুর নামে ওই নারী।
১০ কাঠা জামির ওপর নির্মিত তৃতীয় তিনতলা বাড়ির প্রকৃত মালিক বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত পাইলট মোস্তফা জগলুল ওয়াহিদ। ওয়াহিদের জীবদ্দশায় অঞ্জু কাপুর নিজেকে ওয়াহিদের স্ত্রী দাবি না করলেও এখন বলছেন, ওয়াহিদ তার স্বামী ছিলেন। তার স্বামী তাকে বাড়িটি লিখে দিয়ে গেছেন। যদিও তার বক্তব্যের সমর্থনে কাগজপত্র দেখাতে পারেননি অঞ্জু।
এদিকে ওয়াহিদের কোনো ছেলে নেই। তার দুই মেয়ে থাকলেও তাদের ওই বাড়িতে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। বাবার স্মৃতিবিজড়িত বাড়িতে দুই বোন- মোবাশশারা মোস্তফা এবং মুশফিকা মোস্তফা প্রতিদিনই বাড়ির গেটে গিয়ে বসে থাকেন। কিন্তু মেইন গেট ভেতর থেকে বন্ধ থাকায় তাদের এই ইচ্ছাটুকুও পূরণ হচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে পুলিশের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন মোবাশশারা-মুশফিকা।
পুলিশের সহযোগিতা কামনা করে শনিবার গুলশান থানার ওসির কাছে একটি চিঠি দিয়েছেন দুই বোন। এতে তারা উল্লেখ করেন, গুলশান-২ নম্বরের ৯৫ নম্বর রোডের ৪ নম্বর বাড়িটি আমাদের বাবার। ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে ১০ অক্টোবর বাবা রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে মারা যান। মোবাশশারা ওই সময় আমেরিকায় স্বামীর বাড়িতে ছিলেন। মুশফিকা গুলশানেই ছিলেন। বাবার লাশ দাফনের পর মুশফিকা ওই বাড়িতে প্রবেশ করতে গেলে অঞ্জু কাপুর নামের মহিলা তাকে বাধা দেয়। এ কারণে তিনি বাড়িতে ঢুকতে পারেননি। বাবার মৃত্যুর সংবাদ শুনে মোবাশশারা তার স্বামীকে নিয়ে ঢাকায় আসেন। কিন্তু তাদেরকেও বাড়িতে ঢুকতে দেয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে গুলশান থানায় ১২ এবং ১৪ অক্টোবর পৃথক দুটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। শনিবার দুই বোন ফের ওই বাড়িতে গেলে অঞ্জু কাপুর ভেতর থেকে মেইন গেট বন্ধ করে রাখেন। দিনভর বাড়ির গেটের সামনে অপেক্ষা করেও বাড়িতে প্রবেশ করতে পারেননি। মুশফিকা বলেন, এই বাড়িটি একটি মিনি জাদুঘর। এখানে অন্তত ৫০ কোটি টাকার দুর্লভ সামগ্রী রয়েছে। তার অভিযোগ, অনেক জিনিস সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
মোবাশশারা মোস্তফা যুগান্তরকে বলেন, ২০০৪ সালে বাড়িটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। ২০০৫ সালে মায়ের সঙ্গে আমার বাবার বিচ্ছেদ ঘটে। ২০১৪ সালে আমরা দুই বোন দেশের বাইরে ছিলাম। এ সময় আমার বাবা টায়ফয়েডে আক্রান্ত হন। তখন তাকে দেখাশোনার জন্য অঞ্জু কাপুর এ বাড়িতে আসেন। এরপর থেকে তিনি বাবাকে দেখাশোনার জন্য বাবার সঙ্গে এই বাড়িতেই থাকছিলেন। বাবা মারা যাওয়ার পর তিনি পুরো বাড়িটিতে একাই থাকছেন। তিনি বলেন, ২০১৫ সালে আমার বিয়ে হয়। এরপর থেকে আমি আমেরিকায় স্বামী ইভগেনী রহমানের বাড়িতে থাকি। দেশে এলে এ বাড়িতেই উঠতাম। আমার বোন মুশফিকা গুলশানে মায়ের সঙ্গেই থাকেন। তবে মাঝেমধ্যে এ বাড়িতে আসতেন। কিন্তু এখন বাবার স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটির ভেতরে প্রবেশের অধিকারও হারিয়ে ফেলেছি।
মোবাশশারার বোন মুশফিকা বলেন, অঞ্জু কাপুরের দাবি অনুযায়ী, আমার বাবা তাকে বিয়ে করেছেন। প্রকৃত অর্থে অঞ্জু কাপুরের সঙ্গে আমার বাবার বিয়ে হয়নি। কারণ এ সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র তিনি দেখাতে পারেননি।
এ বিষয়ে অঞ্জু কাপুরের বক্তব্য জানতে শনিবার বিকালে ওই বাড়িতে গেলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ঘণ্টাব্যাপী বাসার মেইন গেটে নক করা হলেও কেউ গেট খুলেননি। গেট ছিল ভেতর থেকে তালাবদ্ধ।
জানতে চাইলে গুলশান থানার ওসি আবুল হাসান যুগান্তরকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে পাল্টাপাল্টি জিডি হয়েছে। এ নিয়ে ফৌজদারি মামলা হলে বা এ সংক্রান্ত আদালতের কোনো নির্দেশ এলে নিশ্চয়ই আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব।